/indian-express-bangla/media/media_files/2025/09/05/rafi-2025-09-05-10-26-10.jpg)
যে কারণে বিয়ে ভেঙ্গেছিল তাঁর?
১৯২৪ সালে অমৃতসরের কাছে এক ছোট গ্রামে জন্মেছিলেন মোহাম্মদ রফি। খুব ছোটবেলায়ই তিনি সংগীতের প্রতি আকৃষ্ট হন। গ্রামের পথে একজন ভ্রমণকারী ফকির গান গেয়ে বেড়াতেন- তাঁর কণ্ঠ রফিকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। ছোট্ট রফি নীরবে তাঁর পেছনে পেছনে হাঁটতেন, তাঁর গান মুখস্থ করতেন। একদিন ফকির তাঁকে গান গাইতে বললেন। রফির প্রতিভায় বিস্মিত হয়ে আশীর্বাদ দিলেন- "তুমি অনেক দূর যাবে।"
পরিবার ও প্রাথমিক সংগ্রাম
রফির পরিবার ছিল রক্ষণশীল। তাঁর বাবা বিশ্বাস করতেন, গান গাওয়া কোনো ভালো কাজ নয়। কিন্তু ঠাকুরদা সবসময় পাশে ছিলেন। পরে, একদিন পাঞ্জাবি ছবিতে রফির গান শুনে তাঁর বাবা নিজেই স্বীকার করেছিলেন- “শেষ পর্যন্ত সংগীতই জিতেছে।”
পরিবার পরে লাহোরে চলে যায়, যেখানে তাঁর বাবা নাপিতের দোকান খুলেছিলেন। রফি কিশোর বয়সে সেখানে কাজ করতেন, কিন্তু সংগীতের টান তাঁকে ভিন্ন পথে নিয়ে যায়। ১৯৪০-এর দশকে লাহোর রেডিও স্টেশনের মাধ্যমে তাঁর প্রতিভা নজরে আসে। এর পরই তিনি বোম্বে (বর্তমান মুম্বাই)-এ আসেন সংগীতজগতে ক্যারিয়ার গড়তে।
ব্যক্তিগত জীবন
দেশভাগের সময় রফির ব্যক্তিগত জীবনও বদলে যায়। তাঁর স্ত্রী বশিরা লাহোরে থেকে যেতে চেয়েছিলেন, আর রফি ভারতে ফিরে আসেন। এই কারণে তাঁদের সম্পর্ক ভেঙে যায়। তবে রফি তাঁর বড় ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে আসেন। পরবর্তীতে তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেন এবং বড় ছেলেকে নিজের সন্তানদের মতোই লালন-পালন করেন।
ক্যারিয়ারের শুরু
১৯৪৫ সালে হিন্দি ছবিতে প্রথম গান গাওয়ার সুযোগ পান রফি। শুরুতে একেকটি গানের জন্য তিনি মাত্র ৭৫ টাকা পেতেন। কিন্তু তাঁর কণ্ঠ, আবেগ ও বহুমুখী গায়কী তাঁকে ধীরে ধীরে সবার চোখে আলাদা করে তোলে। তাঁর প্রথম বড় সুযোগ আসে নাসির খান ও শ্যাম সুনদরের হাত ধরে। কিংবদন্তি গায়ক কেএল সায়গল নিজে এক কনসার্টে রফির গান শুনে তাঁকে আশীর্বাদ করেছিলেন। যা তাঁর আত্মবিশ্বাস আরও বাড়িয়ে দেয়।
গানের জাদু
‘পাওয়ারফুল কাওয়ালি’, ‘মধুর রোমান্টিক গান’, ‘আবেগঘন ভজন’- যে কোনও ধারার সংগীতে রফি ছিলেন অতুলনীয়। চলচ্চিত্র জগতের অগণিত গায়ক-সংগীত পরিচালক তাঁকে অনুপ্রেরণা হিসেবে দেখতেন।
শেষ দিনগুলো
১৯৮০ সালে, মাত্র ৫৫ বছর বয়সে তিনি পৃথিবী ছেড়ে চলে যান। মৃত্যুর কয়েক সপ্তাহ আগে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রফি স্মৃতিচারণ করে বলেছিলেন- “সেই সময় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে প্রবেশ করা সহজ ছিল না। কিন্তু সায়গল সাহেবের আশীর্বাদ আর মানুষের ভালোবাসা আমাকে এগিয়ে নিয়ে গেছে।”