"প্রত্যেকের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আমার আসতে একটু দেরিই হয়ে গেল। আপনাদের অপেক্ষা করতে হয়েছে," সোমবার কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে কথাটা বললেন বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত। এদিন বিকেল ৭টায় দেখানো হয় পরিচালকের ছবি 'উড়োজাহাজ'। ছবির স্ক্রিনিংয়ের পূর্বে সাংবাদিক সম্মেলনে হাজির হয়েছিলেন এই সিনেমা মায়েস্ত্রো।
"এত অল্প টাকায় কলকাতায় বসে আজকের দিনেও যে ছবি হতে পারে, সেটা ভাবতেও ভাল লাগে," নিজের ছবি সম্পর্কে বললেন পরিচালক। এর আগে মুম্বই ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, কেরালা ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল অফ মাদ্রিদ, নিউ ইর্য়ক ইন্ডিয়ান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে দেখানো হয়েছে ‘উড়োজাহাজ’। "রাষ্ট্র কীভাবে মানুষের গলা টিপে ধরে, এটাই দেখানো হয়েছে ছবিতে," বললেন বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত।
আরও পড়ুন: চলচ্চিত্র উৎসবেই ‘রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত’-র টিকিট বিক্রি করছেন প্রদীপ্ত
আরও পড়ুন: এনএসডি-কে ন্যাশানাল স্কুল অফ টেলিভিশন বলতে ইচ্ছে করে: রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত
জামশেদপুরের গ্রামে শুটিং হয়েছে এই ছবির। ফাইটার প্লেনও তৈরি করা হয়েছে সেটেই। অনেকদিন ধরে অসুস্থ পরিচালক। কিন্তু সিনেমার জন্য জীবনের সঙ্গে লড়াই করে চলেছেন তিনি, হাসপাতালে গিয়েছেন এবং ফিরে এসে শট নিয়েছেন। এভাবেই তৈরি হয়েছে 'উড়োজাহাজ'। প্রথম থেকেই যে মুখ্য চরিত্রের জন্য চন্দন রায় স্যানালের কথাই ভেবেছিলেন পরিচালক, জানালেন তিনি।
এই প্রজন্মকেও ছবি সম্পর্কে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন বর্ষীয়ান পরিচালক। তাঁর কথায়, "সবসময় প্রতিটা ছবি যে সুপারহিট হবে এমন কোনও কথা নেই। কিন্তু ছবি বানিয়ে যেতে হবে। আরও একটু ভাবনার জায়গায় যাওয়া উচিত, আর একটু মননের গভীরে যাওয়া উচিত।" কিন্তু সব ছবি তো সিনেমা হলে আসছে না। আপনার ছবিও তো সবসময় হলে দেখতে পাওয়া যায় না? উত্তরে পরিচালক বলেন, "আগের ছবি 'টোপ' রিলিজ করেছিল বারুইপুরের একটা ছোট্ট হলে, সেখানে দিনের পর দিন হাউসফুল হয়েছে। নন্দনে চলেছে ছয় সপ্তাহ। এখন দেখার দায়িত্ব তো আপনাদেরও, দর্শকের।"
আরও পড়ুন: ঋতুপর্ণ ঘোষের পর ভেবেছিলাম আর ছবি করব না, রাখী গুলজার উবাচ
"(চলচ্চিত্র উৎসবের ডিরেক্টর) রাজ চক্রবর্তী ভীষণ ভালো মানুষ। যেটুকু ওর সঙ্গে আলাপ হয়েছে তাতে ভালো লেগেছে," বললেন বুদ্ধদেব। পরের ছবির শুটিং শুরু করছেন জানুয়ারিতে। সেই ছবিতেও চন্দনকে নেওয়ার কথা ভাবছেন পরিচালক। নিজের মাতৃভাষায় ছবি বানানোর ক্ষেত্রে বর্তমান প্রজন্মের পরিচালকদের কী বলবেন? বুদ্ধদেব বললেন, "দেখুন, আমার ছবি সারা পৃথিবীতে দেখানো হয়, তবে বাংলা ভাষায় ছবি বানাতে আমি অনেক বেশি স্বচ্ছন্দ। 'উত্তরা' এমন একটা ছবি, যে ছবির জন্য জয়াকে উত্তরা নামে ডাকত সবাই। এই প্রজন্মের সমস্ত পরিচালকদের বলতে চাই, ভয় থেকে দূরে সরে যাওয়া প্রয়োজন।"
"দর্শক পরিচালককে অনেকখানি দেন, এই বিশ্বাসটাই সম্বল। ছবি করতে চাই, শরীর যদি আমাকে সঙ্গ দেয় তাহলে আগামীতেও ছবি করব," উড়োজাহাজ-এর স্ক্রিনিংয়ের আগে জানালেন বুদ্ধদেব।