/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2019/11/lead-6.jpg)
ঐন্দ্রিলা শর্মা। ছবি: অভিনেত্রীর ফেসবুক পেজ থেকে
মাত্র দুবছরেই বাংলা টেলিজগতে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন ঐন্দ্রিলা শর্মা। শুধু অভিনেত্রী হিসেবে নন, তাঁর অসম্ভব মনের জোর ও মারণ রোগের বিরুদ্ধে তাঁর লড়াকু মনোভাবের জন্যেও তিনি অনুপ্রেরণা বহু মানুষের কাছে। মুর্শিদাবাদের ছোট শহর থেকে কলকাতায় এসেছিলেন পড়াশোনা করতে। তার পরে কীভাবে হয়ে উঠলেন অভিনেত্রী, সেই গল্প উঠে এল ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-র সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায়।
অভিনেত্রী হওয়ার ইচ্ছেটা হল কবে?
ছোটবেলা থেকেই ছিল। কেন এসেছে ইচ্ছেটা সেটা আমি ঠিক জানি না। আমি প্রচুর সিনেমা দেখতাম ছোটবেলা থেকে-- ডাবিং করা তেলুগু, তামিল ছবি থেকে শুরু করে বাংলা ছবি, হলিউড, সব ধরনের ছবিই দেখতাম। বিশেষ করে অ্যাকশন মুভিগুলো দেখতে খুব ভালোবাসতাম। ওই সব দেখতে দেখতেই মনে হল যে হিরোইন হব আর হিরোইন হতে গেলে তো নাচ করতে হবে, সেটা মাথায় ঢুকে গিয়েছিল। আমি কথক শিখেছি সেভেন্থ ইয়ার পর্যন্ত আর ওয়েস্টার্ন ডান্স শিখেছি। আমার বাবা-মা যেহেতু খুব সাপোর্টিভ, তাই কোনও অসুবিধা হয়নি।
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2019/11/inside1-1.jpg)
আরও পড়ুন: নতুন ‘ভূতের’ ধারাবাহিকে আসছেন পায়েল দে
তার পরে এখানকার টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রিতে যোগাযোগ হল কীভাবে?
আমি পড়াশোনা করার জন্য কলকাতাতে আসি। যেহেতু অ্যাক্টিং করার ইচ্ছে, আর মোটামুটি ইন্ডাস্ট্রির বাইরের সব লোক টেকনিশিয়ানস স্টুডিওটা চেনে, তো একদিন আমার একজন বান্ধবীর সঙ্গে এই টেকনিশিয়ান্স স্টুডিওতে আসি। তখন একজন বলেন যে এখানে একটা অডিশন হচ্ছে, তুমি কি অ্যাক্টিংয়ে ইন্টারেস্টেড। আমি তো সঙ্গে সঙ্গে বললাম হ্যাঁ। তার পরে অডিশনটা হয়, কোনও প্রিপারেশন ছিল না কিন্তু সিলেক্ট হয়ে যাই। 'ঝুমুর' আমার প্রথম সিরিয়াল, তার পরে 'জীবনজ্যোতি' আর তার পর এই 'জিয়নকাঠি'।
এখনও পর্যন্ত যা যা চরিত্র করেছ, তার মধ্যে সবচেয়ে প্রিয় কোন চরিত্রটি?
'জিয়নকাঠি'-র জাহ্নবীই আমার সবচেয়ে প্রিয় এখন। বাকি চরিত্রগুলি এতটা প্রতিবাদী ছিল না। কিন্তু এই মেয়েটি কাউকে ছেড়ে কথা বলে না। কেউ খারাপ কথা বলছে বা ইনসাল্ট করছে দেখলে সে মুখের ওপর বলে দেয়।
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2019/11/7.jpg)
নিজের সঙ্গে বেশি রিলেট করতে পারো। তুমি কি খুব প্রতিবাদী?
হ্যাঁ, আমি প্রতিবাদী প্লাস মারকুটে ছিলাম ছোটবেলায়, এখন সেটা নই। ওইজন্য রিলেট করতে সুবিধা হয়েছে। আমাকে হায়ার করা হতো, ঐন্দ্রিলা আমাকে ও মারছে, ডিস্টার্ব করছে, একে চল মারব। আমি বলতাম, হ্যাঁ চল মারব, বলে দশজনকে নিয়ে মারতে চলে যেতাম... একবার একজন ক্লাসমেটকে মারার পর গার্জেন কল করা হয়েছে। মা এসেছে, মা বকতে যাবে, তার সঙ্গে সঙ্গে বাবাও ঢুকেছে। বাবা ঢুকেই বলতে শুরু করল, আমার মেয়ে কোনওদিন কিছু করতে পারে না। ওর নিশ্চয়ই কিছু দোষ ছিল। আমার বাবা হচ্ছে আমার অন্ধ সাপোর্টার। মা একটুও যদি কিছু দোষ দেখতে পায়, বাবা কোনও দোষ দেখতে পায় না।
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2019/11/WhatsApp-Image-2019-11-01-at-09.47.20.jpeg)
তোমার এই লড়াকু মনোভাবই তোমাকে অন্য আর একটা লড়াই লড়তে সাহায্য করেছে হয়তো। তোমার সেই ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের স্মৃতিটা খুবই কষ্টের আমরা জানি। সেই প্রসঙ্গে যদি কিছু বলো...
অনেকে এই কথাগুলো বলতে পছন্দ করে না। বা বলতে চায় না হয়তো, পুরনো মেমরিগুলো চলে আসে বলে। কিন্তু আমার মনে হয় যদি আমার কথা শুনে, এখন যাঁরা সাফার করছেন, তাঁদের ফ্যামিলি বা তাঁরা, একটু হলেও সাহস পান, তবে সেটা আমার কাছে একটা বড় একটা অ্যাচিভমেন্ট। আমার ২০১৫ সালে ক্যানসার ধরা পড়ে। ক্যানসারের ট্রিটমেন্টটা অসম্ভব পেনফুল। সেটা মুখে বলাটা সম্ভব নয়। তার পরে বোন ম্যারো টেস্ট, বায়োপসি টেস্ট-- এই টেস্টগুলোও এত পেনফুল।
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2019/11/1-3.jpg)
আর কেমোর যন্ত্রণা তো অন্য-- যারা ফিল করেছে বা সামনে থেকে দেখেছে তারা ছাড়া বোঝা সম্ভব নয়। কিন্তু একটা জিনিস, খুব হেল্প করেছে-- ফ্যামিলি সাপোর্ট তো সব সময়েই পেয়েছি। আর ছিল মনের জোর। আমি কোনও সময়েই ভাবিনি যে, আমার জীবন এখন শেষ। যেটা হয় সাধারণত, ক্যানসার নামটা শুনলেই তো মনে হয় এখানেই যেন জীবনটা ফুলস্টপ হয়ে যাবে। কিন্তু এই ভাবনাগুলো কিন্তু শারীরিক অবস্থাকে আরও খারাপ করিয়ে দেয়। মনের জোরটা রাখাটা খুব ইম্পর্ট্যান্ট।
দুবছরে অনেকখানি অ্যাচিভ করেছ। তোমার কি মনে হয় তুমি অনেকটা বেশি পেয়েছ নাকি তোমার এর থেকে বেশি কিছু পাওয়ার ছিল?
আমি এরকম ভাবে আসলে ভাবিনি। দুবছরে আমি অনেক রকম কাজ করেছি। ছবির কাজও করেছি। জি অরিজিনালস করেছি। কাজ করতে ভালো লাগে, কাজ করতে করতে দুবছর কেটে গিয়েছে... এখন বললে তাই আমার মনে পড়ল যে সত্যি দুবছর হয়ে গেছে।
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2019/11/inside2-1.jpg)
আরও পড়ুন: মানুষের কাছে টিভিটা অনেক আপন: প্রতীক
যখন প্রথম এসেছিলে তখন তো পর্দার সামনে অভিনয়, টেকনিক ইত্যাদি জানা ছিল না। তখন কি খুব প্রবলেম হতো?
আমার প্রথম চ্যানেল থেকে প্রোমো শুট হয়েছিল। তখন তো কিছুই জানি না। লাইট কী করে নিতে হয়, ক্যামেরার অ্যাঙ্গল কিছুই বুঝতাম না। সেদিন ছোট ছোট শট ছিল কিছু মনে হয়নি। প্রথম দিন শুটিং করতে গিয়ে আমি একটু অবাক হয়েছিলাম-- সবাই এক কথা এত বার করে বলছে? এ কী রে বাবা, এটা কী হচ্ছে? একবার মাস্টার হচ্ছে, একবার ক্লোজ, একবার সাজেশন-- একই ডায়লগই বার বার বলছি। তার পরে যেদিন প্রথম টেলিকাস্ট দেখলাম, আমার কী খারাপ লেগেছিল নিজের অভিনয় দেখে। এর আগে ভাবতাম, অ্যাক্টিং আর কী, গিয়ে করে দেব। কাঁদার সিন হলে কেঁদে দেব। মানুষ বাইরে থেকে বুঝতে পারে না যে অভিনয়টা একটা কঠিন জিনিস, সবার দ্বারা হয় না। তার পরে আস্তে আস্তে অ্যাঙ্গলগুলো বোঝা হয়ে গেল। ফার্স্ট প্রজেক্টটাতে প্রথম কয়েকদিন একটু শিখতে হয়েছিল। তার পরে আস্তে আস্তে অভ্যেস হয়ে গেছে।