Advertisment

নারীকেন্দ্রিক সিনেমা হচ্ছে, তবে হিরোদের নিয়ে বেশি মাতামাতি করা হয়: মিমি

'মিনি' রিলিজের আগে নার্ভাস মিমি! কী বললেন অভিনেত্রী?

author-image
Sandipta Bhanja
New Update
Mimi Chakraborty, Mimi Chakraborty on Mini, মিমি চক্রবর্তী, মিনি, মিনি সিনেমা নিয়ে কথা বললেন মিমি চক্রবর্তী, মৈনাক ভৌমিক, মৈনাক ভৌমিকের নারীকেন্দ্রিক ছবি, নারীকেন্দ্রিক বাংলা সিনেমা, bengali news today

'মিনি' রিলিজের আগে মিমি চক্রবর্তী

৬ মে, শুক্রবার মুক্তি পাচ্ছে মৈনাক ভৌমিক পরিচালিত 'মিনি'। তার প্রাক্কালেই টলিউডে নারীকেন্দ্রিক সিনেমা থেকে বাংলা সিনেমার হল না পাওয়া নিয়ে মুখ খুললেন মিমি চক্রবর্তী। লিখছেন সন্দীপ্তা ভঞ্জ

Advertisment

কেমন আছেন?

এই তো সব ঠিকঠাক চলে যাচ্ছে।

'মিনি'র রিলিজ নিয়ে কতটা এক্সাইটেড?

এক্সাইটেড তো বটেই কিন্তু তার থেকেও বেশি নার্ভাস! নতুন প্রযোজনা সংস্থা। একটা গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেওয়া ছবি। দর্শক টানার ভার তো কাঁধে থাকেই।

এখনও এতটা নার্ভাস লাগে সিনেমা রিলিজের আগের দিন?

হ্যাঁ। আমি, মৈনাক, অয়ন্যা.. গোটা টিম মিলে পরিশ্রম করে একটা মিষ্টি ছবি বানিয়েছি। যে সিনেমার মধ্য দিয়ে একটা গুরুত্বপূর্ণ বার্তাও দেওয়া হয়েছে সমাজের উদ্দেশে। চাইব দর্শকরা প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে 'মিনি' দেখে আসুন। এমন একটা গল্প, যার সঙ্গে আট থেকে আশি সবাই রিলেট করতে পারবেন।

ট্রেলারের পয়লা ঝলকেই এক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ছুঁড়েছেন পরিচালক মৈনাক ভৌমিক- 'মাসি কি কখনও মা হতে পারে?' আপনার ব্যক্তিগতভাবে কী মনে হয়?

আসলে মা হোক কিংবা মাসি। একটা সংসার সামলানোর নেপথ্যে নারীদের রোজকার যে যুদ্ধ, সেটা আজও এই সময়ে দাঁড়িয়ে অনেকে অস্বীকার করেন। পুরুষতান্ত্রিক সমাজের ধ্যান-ধারণা অনুযায়ী, ঘর সামলানো কিংবা বাচ্চা মানুষ করা কেবল-ই মেয়েদের দায়িত্ব। মা-মাসিদের কিন্তু এরজন্য আলাদা করে কোনও কৃতিত্ব দেওয়া হয় না। কোনও কর্মরতা মহিলার ক্ষেত্রেও একথা প্রযোজ্য। অফিসের পাশাপাশি সংসার সামলানো, সন্তানকে বড় করে তোলা.. অনেক কাজই তো সামলাতে হয়। কিংবা সংসারে পুরুষরা হয়তো শুধু মাসখরচের টাকা হাতে তুলে দিয়েই দায়িত্ব সারেন। আমাদের ছবি 'মিনি'তেও নারীদের এই মনস্তত্ত্ব তুলে ধরেছে মৈনাক।

টলিউডে নারীকেন্দ্রিক সিনেমা কতটা গুরুত্ব পায়?

নারীকেন্দ্রিক সিনেমা হচ্ছে, তবে একটা কথা বলব, আমরা অনেক সময়েই দেখি, একটা সিনেমায় হয়তো হিরো-হিরোইন রয়েছে। সেখানে হিরোদের লুক আগে প্রকাশ করা হয় কিংবা হিরোদের নিয়েই একটা মাতামাতি থাকে। আর যখন-ই এটা করা হয়, তখন বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে যে, সিনেমার গল্পে নায়িকার চরিত্রের ততটা গুরুত্ব নেই। তো এই চিন্তাধারাগুলো থেকে বেরিয়ে আসতে পারলে ভাল হয়। এমনকী হলিউড, বলিউডের মতো এখানেও পেমেন্ট ইস্যু নিয়ে একটা ফারাক রয়েছে। প্রতিটা স্তরে নারীদের নিজেদের প্রমাণ করতে হয়। আমি লিঙ্গ-সমতা নিয়ে প্রতিনিয়তই কথা বলি। লড়ি। মৈনাক ভৌমিককে আমি ধন্যবাদ বলতে চাই 'মিনি'র মতো একটা নারীকেন্দ্রিক ছবি তৈরি করার জন্য। ও অবশ্য এর আগেও 'চিনি' কিংবা 'আমি আর আমার গার্লফ্রেন্ডজ'-দের মতো একাধিক women centric সিনেমা বানিয়েছে।

publive-image

'মিনি'র ট্রেলারে যেরকম দেখলাম, আপনার চরিত্র 'তিতলি' বেশ প্রাণবন্ত মেয়ে। রান্নাবান্না একেবারেই পারে না.. ব্যক্তিগতজীবনেও কি আপনি এরকম?

আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-পরিজন সবাই জানেন যে আমি কতটা প্রাণবন্ত। জীবনটাকে আসলে উপভোগ করতে ভালবাসি। সবসময়ে হেসে-খেলে মজা করে কাটাই। আর রান্নাটা কোনওদিনই আমাকে করতে হয়নি। বাড়িতেও না। আমি পারিও না রান্না করতে। তবে হ্যাঁ, বেক করতে খুব ভালবাসি। সময় পেলেই বেকিং করি। কেক বানাই।

মানে 'তিতলি'কে সিনেমায় যেভাবে বাড়ির দায়দায়িত্ব সামলাতে হচ্ছে, বাড়িতেও এরকম দায়িত্ব সামলাতে হয়?

আমি যেহেতু এখানে একাই থাকি, তাই বাড়ির দায়-দায়িত্ব তো আমাকে সামলাতেই হয়। কোনও অতিথি এলে কিংবা বাড়িতে পুজো হলে কী কী মেন্যু হবে- সেই তালিকা তৈরি করা, কীভাবে সব ম্যানেজ করতে হবে, এগুলোর সবই আমি দেখি। মানে সংসারে কী হচ্ছে না হচ্ছে, কাজের পাশাপাশি সবকিছুর ওপরই নজর থাকে আমার। আমার বাড়িতে দুই সন্তান (পোষ্য) রয়েছে। ওদের দেখভালও করি। আর হ্যাঁ, আমি একটু পরিষ্কার-বাতিকগ্রস্থ। অনেকেই হয়তো আমার বাড়িতে এলে দেখে থাকবেন যে, পারলে হাজার কাজের ফাঁকে আমি নিজেই ডাস্টিং করতে নেমে পড়েছি। মানে, ঘরদোর যেন একদম পরিষ্কার থাকে, সেদিকে আমার সবসময়ে খেয়াল থাকে।

'তিতলি'র চরিত্রের সঙ্গে নিজের কতটা মিল পেলেন?

না। আসলে মৈনাক এই চরিত্রটা আমাকে ভেবেই ডিজাইন করেছে। মানে, আমি বাড়িতে যেরকম পোশাক পরে থাকি। আমার কথা বলার স্টাইল। এই টুকরো-টুকরো বিষয়গুলো তিতলির চরিত্রের জন্য ও আমার কথা ভেবেই সাজিয়েছে। লকডাউনে সময় যখন আমাকে গল্পটা শোনালো, তখনই সেটা জানিয়েছিল। তাই আলাদা করে কোনও প্রস্তুতির প্রয়োজন পড়েনি।

publive-image

অয়ন্যা চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে শুটের অভিজ্ঞতা কেমন?

খুব ভাল। ওর বাবা-মা ওঁকে এত ভাল করে বড় করেছে, সেটা সত্যিই প্রশংসনীয়। চিত্রনাট্য লেখার সময়ে আমি আর মৈনাক খুব চিন্তায় ছিলাম। একটা বাচ্চাকে নিয়ে শুট করতে গেলে অনেক সময়েই সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। কিন্তু অয়ন্যার কোনও বায়নাক্কাই ছিল না। কী সুন্দর স্মার্টলি শট দেয়। কথাবার্তাও কী ভাল। খুব ট্যালেন্টেড মেয়ে। বাধ্য ছাত্রীর মতো সব কথা শুনত সেটে। আমি নিশ্চিত ও ভবিষ্যতে একদিন বড় স্টার হবে।

সেটে 'বন্ধু মৈনাক' কি খুব 'কড়া পরিচালক'?

একেবারেই না। মৈনাক মেয়েদের মন খুব ভাল বুঝতে পারে। আমি হয়তো ১২-১৩টা শট দেওয়ার পর ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। ও নিজে থেকেই বলত- আজ বাড়ি যা, কাল শুট হবে।

মিনির প্রোমোশন ভিডিওতে দেখা গেছে, বেশ কয়েকটা বাংলা ছবির টুকরো ভিডিও কোলাজ করা। নিজের সিনেমার সঙ্গে অন্য তারকাদের ছবির প্রোমোশনটা সাধারণত এভাবে কেউ করে না..

আমরা, মানে মিনির গোটা টিম চায় যে, দর্শকরা হলে গিয়ে বাংলা সিনেমা দেখুক। সেটা আমার সিনেমা হোক কিংবা দেব-জিতের।

বাংলা সিনেমার হল পায় না কিংবা সেরকম ব্যবসা করতে পারে না, সেই ভাবনা থেকেই এই ভিডিও?

একেবারেই তাই। বাংলা সিনেমা দেখুন, কিংবা বাংলা সিনেমার পাশে দাঁড়ান বলে অনেকেই হয়তো সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন। আমরা সেই জায়গায় প্রতিটা সিনেমার দৃশ্য কোলাজ করে বাংলা ইন্ডাস্ট্রিকে সমর্থন করার কথা বলেছি। দিনের শেষে, বাংলা সিনে-ইন্ডাস্ট্রির উন্নতিসাধন-ই তো আমাদের লক্ষ্য।

টলিউডে ১২ বছর হয়ে গেল। সুদীর্ঘ এই যাত্রাপথকে কীভাবে দেখেন?

সত্যি কথা বলতে কি, আমি গুনেই দেখিনি যে এতগুলো বছর পেরিয়ে গেল। শুরুটা করেছিলাম গানের ওপারে দিয়ে। তারপর সিনেমা। এতগুলো বছর মন দিয়ে শুধু কাজ করে গিয়েছি। দর্শকরাও ভালবাসা দিয়েছে। এটাই তো বড় পাওনা। আগামীতেও আরও ভাল কাজ উপহার দেওয়ার অঙ্গীকার রাখি।

publive-image

অনুরাগীরা বলছেন, অনেক দিন ধরে মিমি চক্রবর্তীর কোনও রিলিজ করে না..

আসলে বেশ কয়েকটা গান রেডি হয়ে আছে। কিন্তু সময়ের অভাবে মিউজিক ভিডিও শুট করা হয়ে উঠছে না। কথা দিচ্ছি, খুব শিগগিরিই একটা গান উপহার দেব।

এরমধ্যেই আবার প্রথম হিন্দি সিনেমা। পরেশ রাওয়ালের মতো অভিনেতার সঙ্গে স্ক্রিনস্পেশ শেয়ার করা। কতটা এক্সাইটেড বলিউড ব্রেকের জন্য?

পরেশ রাওয়াল দারুণ মানুষ। এই বয়সেও ওঁর ডেডিকেশন দেখে মুগ্ধ হতে হয়। ওঁর দৃশ্যের শুট না থাকলেও নিজে দাঁড়িয়ে থেকে কিউ দিতেন। ওঁর কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার রয়েছে। একেক দিন তো আমি ৩-৪টে দৃশ্যের শুটও একসঙ্গে করে ফেলেছি। তবে হ্যাঁ, বলিউড হোক কিংবা টলিউড আমার কাছে দুটোই সমান ইমপরট্যান্ট। এখানে কোনও নতুন সিনেমা শুটের আগে যেমন রাতে ঘুম হয় না, হিন্দি ছবির ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।

রাজনীতি নিয়ে আপনি এখন সেভাবে কথা বলেন না…

সরকার মানুষের পাশে আছে। আমার আর আলাদা করে তাই কথা বলার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে হয় না। তবে নিজস্ব সংসদীয় এলাকার মানুষের জন্য অতিমারী হোক বা যে কোনও সময়ে ছুটে গেছি। সেটা সবাই দেখেওছে। আসলে আমি কথা বলার থেকেও কাজে বিশ্বাসী।

সোশ্যাল মিডিয়ার সমালোচনা-কটাক্ষকে কীভাবে দেখেন?

কোনওদিনই পাত্তা দিইনি। আজকাল তো এটা একটা ট্রেন্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে। আসলে সোশ্যাল মিডিয়া দিয়ে তো মানুষের জীবনটাকে বিচার করা যায় না। সেটা লোক ভুলে যায়। হয়তো কেউ মনের দিক থেকে খুব কষ্টে রয়েছে, কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় হাসিমুখে কোনও ছবি দিল। অমনি অনেকে কটুক্তি করতে লেগে গেল। একেক সময়ে খারাপ যে লাগে না তা নয়, মানুষের মন-মানসিকতা ভেবেই খারাপ লাগে আসলে। তবে মের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে হলে এসবে কান দেওয়া একেবারেই উচিত না।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

tollywood Mainak Bhowmik Bengali Cinema Mimi Chakraborty
Advertisment