/indian-express-bangla/media/media_files/2025/09/05/featured-image-copy-1-2025-09-05-14-19-11.jpg)
যা যা বললেন চৈতি...
Teachers' Day-Chaiti Ghoshal: কথায় বলে, গুরু যদি ভাল হন, তবে শিষ্য অনেক কিছুই শিখতে পারেন। একজন ভাল গুরু পারেন, সৎ পথের দিশা দেখাতে। জীবনের মার্গ পাল্টে দিতে পারেন। অভিনেতা অভিনেত্রীদের কাছে ইন্ডাস্ট্রির তরফে এমন গুরু পাওয়া বর্তমানে কঠিন বিষয় হলেও, একসময় একজন মানুষ ছিলেন। যিনি ফ্লোরে থাকলেই লাইটস-ক্যামেরা অ্যাকশান অন্য মাত্রা পেত। আজ শিক্ষক দিবস। আর চৈতি ঘোষাল আজ সেই মানুষটাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করলেন, যার দৌলতেই জীবন দেখতে শিখলেন তিনি।
ভাল শিক্ষক সেই হন, যিনি একজন ছাত্রকে জীবনদর্শন শেখাতে পারেন। বছর ২০ পরেও সেই একটা সিরিয়াল নিয়ে এখনও নানা আলোচনা। যার নেপথ্যে ছিলেন রবি ওঝা। তিনি যেন এক আকাশের নীচের ক্যাপ্টেন অফ দ্যা শিপ ছিলেন। তিনি নিজেই এতবড় একটি প্রতিষ্ঠান, যে সবসময় কিছু না কিছু তাঁর থেকে শেখার ছিল। আজ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার তরফে তাঁর কাছে ফোন যেতেই তিনি বললেন...
"রবিকে পরবর্তীতে অনেকেই স্যার বলে ডাকত, কিন্তু আমাদের সকলের কাছে বয়সের বিস্তর ফারাক হওয়ার সত্বেও, ও শুধু রবি ছিল। আমরা ওকে ভালবেসে এবং সম্মান করে রবি বলেই ডাকতাম। রবি ওঝা আমার কাছে কোন জায়গায় ছিলেন, শুধু আমি জানি। কারণ, আমার হ্যাঁ চরিত্রটা ছিল এক আকাশের নিচে ধারাবাহিকে, সেটা খুব সুন্দর করে তৈরি করেছিল রবি। এরকম স্ট্রং ক্যারেকটার এখনকার দিনে বানানো খুব দরকার। তবে, আজকে রবিকে নিয়ে কথা বলতে খুব ভাল লাগছে। কারণ, আমি পরিচালক হিসেবে ঋতুপর্ণার সঙ্গে প্রথম ছবি রিলিজ করতে প্রস্তুত। আমি যদি সত্যি কথা বলি, আমার সিনেমার বাড়ি। বাবার থেকে অনেক কিছু শিখেছি। তৃপ্তি মিত্রর থেকে অনেককিছু শিখেছি। কিন্তু, আমার যদি সত্যি বলতে কাউকে ট্রিবিউট দিতে হয়, তাহলে সেটি মনে হয় রবি ওঝা। আমি ওর কাছে কৃতজ্ঞ। উনি যে কতকিছু শিখিয়েছেন। আমার জীবনে উনার যে কত ভূমিকা। শুধু টেকনিক্যালি না। বিয়ন্ড টেকনিক যে শট তৈরি করা, ম্যাজিক্যালি একটা মোমেন্ট বানানো, সেটা রবি শিখিয়েছিলেন। "
শুটিং ফ্লোরের মায়েস্ট্রো রবি ওঝা..
চৈতি বললেন, একটা সিন তৈরি করার জন্য কী করে মোটিভেট করতে হয়, এমনকি যারা প্রোডাকশনে চা জল দিত, তাঁরা পর্যন্ত দাঁড়িয়ে শুনত। যতক্ষণ না শট নিয়ে আলোচনা শেষ হত ততক্ষন ওরা দাঁড়িয়ে থাকত। আমি দেখেছি, এমন একটি ফ্লোর, যেখানে রবি ওঝা আছেন, জল দেওয়া থেকে এমনকি ফ্লোরের সবথেকে সিনিয়র আর্টিস্ট পর্যন্ত চার্জ আপ থাকতেন। সকলের একটা ভাল করার খিদে থাকত। উনি এভাবে মোটিভেট করতেন যে রোজগার তো পরে করবে, কিন্তু একটা ইন্ডাস্ট্রিকে বেঁধে রাখা, ভাল কিছু দেওয়া, ভাল করে কাজ করার। শুধু ডিসিপ্লিন না, উনার ম্যাজিক ছিল এটাই সকলে যেন ভাল কিছু করে। এবং, ডাউন দ্যা লাইন সকলে যেন কাজের সময় সবকিছু ভুলে যেত। মানুষ, আজও কিন্তু ধারাবাহিক মনে রেখেছে।
রবি ওঝা টেলিভিশনের ইনস্টিটিউশন
রবি ওঝা সারারাত কাজ করতেন। চৈতির কথায়, "উনি সারারাত কাজ করতেন। আর উনি যেভাবে গল্প বলতেন, সেটা ছিল সিনেমার গল্প বলার ধরণ। এবং, ইনস্টিটিউশন ছিলেন তিনি। উনি টেলিভিশনকে যেই জায়গায় নিয়ে গিয়েছেন, তাঁর চলে যাওয়ার পর টিভি অনেকটাই নেমে গিয়েছে। আমি উনার থেকে অনেককিছু শিখেছি। আমি তখন টেলিভিশনে যত ভাল চরিত্র ছিল, তাঁর দৌলতে অনেক কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। টিভির যে একটা বিরাট ফ্যান ফলোয়িং থাকে, সেটা উনি শিখিয়েছিলেন। পোশাক আশাক থেকে নানা কিছু, নিজে হাতে গড়া ওর। কত ক্যামেরা পার্সনদের সুযোগ দিয়েছে ও। আমরা সবাই বন্ধু ছিলাম। রবি, সবাইকে একযোগে বোঝাতে পেরেছিল। যে এটা মজা করার জায়গা না। ইন্ডাস্ট্রির বুকে টিভি সরিয়ে দিলে, সেটা মুখ থুবড়ে পড়বে। এক্ষেত্রে তো রবি ওঝা আছেনই। রবি আমায় চিনিয়েছে, যে কোনটা ভাল। কী করে সাহস রাখতে হয়। নিজের সবটা নিয়ে, কী করে এগিয়ে যেতে হয়, এই মন্ত্র ও আমায় শিখিয়েছে।