আরজি কর কাণ্ডের রায় ঘোষণা হয়ে গেল আজ। শনিবার শেষ শুনানি শেষে জানিয়ে দেওয়া হয়, সঞ্জয় রায় তিনিই একমাত্র দোষী। তারপর থেকেই একটাই রব শোনা গিয়েছে, যে তিনি একা নন, বরং আরও অনেক অপরাধী আছে। তাঁদের যেন শাস্তি হয়। আর আজ দুপুর গড়াতেই জানিয়ে দেওয়া হল সাজা।
জানানো হয়েছিল, সর্বোচ্চ সাজা হতে পারে ফাঁসি। আর সর্বনিম্ন যাবৎজীবন কারাদণ্ড। জনগণ চেয়েছিলেন রায় এবং বিচার। বহু তারকা পথে নেমেছিলেন। কেউ কেউ অবস্থান বিক্ষোভ থেকে অনশন মঞ্চ সর্বত্রই দেখা গিয়েছিল তাঁদের। তিলোত্তমার খুন কাণ্ডে তাঁরা আওয়াজ তুলেছিলেন। এই সমাজে মেয়েদের ন্যায় বিচার কি আদৌ হল?
আজ রায় ঘোষণা হতেই ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার তরফে যোগাযোগ করা হয়েছিল চৈতি ঘোষালের সঙ্গে। অভিনেত্রী, প্রথম থেকেই এই কাণ্ডে সরব হয়েছিলেন। অনশন মঞ্চ থেকে বিক্ষোভ অবস্থান, সর্বত্রই তিনি মুখ্য ভুমিকা নিয়েছিলেন এই আন্দোলনে। আজ এই রায় শুনে, তিনি আশাহত। তিনি যেন ভাষা হারিয়েছেন। আজকে, আর নিজেকে ধরে রাখতে পারছেন না অভিনেত্রী।
কথা বলতে বলতে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন তিনি। বলছেন, "এই যে সুন্দর রোদ ঝলমলে আকাশ, আমার বাগানে ফুল ফুটেছে, চারপাশ দেখতে পারছি। আমার আর কিছু বলার নেই। আমৃত্যু কারাদণ্ড মানে, দেখা যাক হায়ার কোর্টে হয়তো যাবে। কিন্তু, আমি আজ আশা হারিয়েছি। যার গেল, এবং যেভাবে গেল শুধু সে জানে। আজকে পশ্চিমবঙ্গের বুকে কতটা লজ্জার, যে কর্মরত একজন চিকিৎসক, যিনি মানুষের সেবা করছে, তাঁকে ধর্ষণ-খুন করা হল। এবং রোগা-প্যাংলা একটা লোক, যার চোখ-মুখ পুরো মানসিক রুগি, সে এই কাণ্ড ঘটাল, এবং সে নাকি একা করেছে? একটা ২৭/২৮ বছরের মেয়ে, তাঁর চোখে এত ঘুম? যে সে কিছু করতে পারল না? নিজেরাই বলছিল, বিরল থেকে বিরলতম। তাহলে শাস্তি!"
এত তাড়াতাড়ি কেন প্রমাণ লোপাট হয়েছিল সেই নিয়েও আওয়াজ তুললেন তিনি। অভিনেত্রীর কথায়, "কীসের এত তৎপরতা ছিল ভেঙে দেওয়ার, আবার রং করার? কেন প্রথমে বলা হল এটা আত্মহত্যা? কারা বলল? ওখানকার অধ্যক্ষরা বলল আত্মহত্যা? আমি নিশ্চই গিয়ে বলতে পারব না আত্মহত্যা? আমি নিজেকে আটকে রাখতে পারছি না আর আজ। এই যে একজন লোক নাকি এটা করেছে, বারবার এটা বলা হচ্ছে, আমার একটাই দাবি? তাহলে বাকি যে DNA গুলো পাওয়া গেল, সেগুলো কাদের?"
অনেক ক্ষতি হচ্ছে অভিনেত্রীর। কিন্তু, তাঁর কাছে এটা ক্ষতি নয়। বরং ন্যায়বিচার পাওয়ার অপেক্ষায় তিনি। চৈতি ঘোষাল আরও বললেন, "অনেকে বলছে আমার ক্ষতি হচ্ছে অনেক। কিন্তু আমি মনে করি, আমি যা করছি বা যা করার চেষ্টা করেছি তাতে করে, যদি ন্যায় বিচার আসে তাহলে জানব আমি অগ্নিশুদ্ধ হবে। হয়তো, আমার এক কোটি টাকার কাজ চলে যাবে। আর পশ্চিমবঙ্গের বুকে সেটা অনেক। কিন্তু, আমি এটুকু জানি, যে শিক্ষা আমি আমার ছেলেকে দেওয়ার চেষ্টা করছি, সেটা অনেক।"