বর্ণবৈষম্যমূলক মন্তব্য করে নেটদুনিয়ার রোষানলে যশ দাশগুপ্ত। 'হু ইজ দিস ব্ল্যাক গাই?' পরিচালকের কাছে প্রশ্ন ছুঁড়েছিলেন অভিনেতা। আর একুশ শতকে দাঁড়িয়ে সিনেমার দৃশ্যে কৃষ্ণবর্ণের ব্যক্তিকে ব্যবহার করা নিয়ে একজন অভিনেতার এমন মন্তব্যে উত্তপ্ত বাংলা বিনোদনমহল। প্রসঙ্গ 'চিনেবাদাম'। আর রিলিজের আগেই প্রযোজনা সংস্থার সঙ্গে চুক্তি ছেড়ে যশ দাশগুপ্তর বেরনোর কারণও কি এই 'কালো ছেলে' ইস্যুই? উত্তর খুঁজতে পরিচালক শিলাদিত্য মৌলিকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল 'ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা'।
সিনেমা রিলিজের দিন ছয়েক আগেই অভিনেতা প্রযোজনা সংস্থা ও পরিচালকের সঙ্গে মনোমালিন্যের জেরে বেরিয়ে এসেছেন চুক্তি থেকে। হঠাৎ কেন এমন সিদ্ধান্ত নিলেন যশ? সেই প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারেননি পরিচালক শিলাদিত্য মৌলিক ও প্রযোজক-অভিনেত্রী এনা সাহাও। তবে পরিচালক নিজেই জানিয়েছিলেন, সিনেমার চতুর্থ গান নিয়ে আপত্তি ছিল যশের। শুধু তাই নয়, কথাচ্ছলেই এক নেপথ্য ডান্সারকে উদ্দেশ্য করে যশ বলেছিলেন, "হু ইজ দিস ব্ল্যাক গাই (এই কালো ছেলেটি কে)?" যে খবর প্রকাশ্যে আসার পরই তোলপাড় নেটপাড়া। বর্ণবৈষম্য নিয়ে প্রশ্ন তোলা টলি-নায়ককে নেটদুনিয়ার নীতিপুলিশেরা একেবারে ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছেন।
বাচিকশিল্পী অভিনেতা সুজয় প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, "রূপঙ্করের মতো যশকেও উচিত শিক্ষা দিক নেটিজেনরা।" যা নিয়ে আরেকপ্রস্থ বিতর্ক। এবার সেই প্রসঙ্গেই 'ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা'র কাছে মুখ খুললেন 'চিনেবাদাম' পরিচালক শিলাদিত্য মৌলিক।
"সিনেমার টাইটেল ট্র্যাক নিয়ে আপত্তি ছিল যশের। তবে হঠাৎ করে ক্রিয়েটিভ ডিফারেন্সের কথা উল্লেখ করায় আমি আকাশ থেকে পড়েছি। কারণ এর আগে তো ওঁর সঙ্গে ২টো সিনেমা করেছি, তখন কোনও ক্রিয়েটিভ ডিফারেন্স হয়নি! সিনেমা করার সময়ে অনেক বিষয়েই মতানৈক্য হয়েছে। সেটা হয়েই থাকে। কোনওটা হয়তো মেনে নিয়েছি। কোনওটা নিতে পারেনি। সেসবই ও জানে। বরং এসব বিষয় নিয়ে আমরা খুব ঠাট্টাও করেছি। কিন্তু এই ক্রিয়েটিভ ডিফারেন্সের কথাটা কেন বলল? জানি না। শেষ যখন কথা হয়েছিল, যশ চার নম্বর গানটা নিয়ে আপত্তি তুলে বলেছিল- এই গানটার কী দরকার ছিল?", বললেন শিলাদিত্য।
এপ্রসঙ্গে পরিচালকের মন্তব্য, "চার নম্বর গানটা যেহেতু 'চিনেবাদাম'-এর টাইটেল ট্র্যাক, তাই ওটা তো সিনেমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। গানটা রেকর্ড আগেই করা ছিল। তবে যথাযথ ফুটেজ না থাকায় পরে শুট করেছি। সেই গানের শুটের সময়ই যশ আপত্তি তুলে জিজ্ঞেস করেছিল- ব্যাকগ্রাউন্ডে কে এই কালো ছেলেটা নাচ করছে? তবে ওটাও ওর বেরিয়ে যাওয়ার কারণ নয় বলেই মনে করি।"
<আরও পড়ুন: KK বিতর্কের পর ঔদ্ধত্য গায়েব! মঞ্চে ‘নরম’ রূপঙ্কর গাইলেন ‘তোর মতন কেউ নেই’>
একজন অভিনেতা হয়ে বর্ণবৈষম্যমূলক মন্তব্য কীভাবে করতে পারেন? পাল্টা শিলাদিত্যকে প্রশ্ন করতেই তাঁর উত্তর, "কথাটা আমারও কানে লেগেছিল। পরিচালক হিসেবে আমি সবসময়ে মানুষের উত্তরণের গল্প বলি। তাই এমন কথা শোনার পর আমার যা বলার আমি যশকে বলেছি। এরকম মন্তব্য করা একেবারেই উচিত হয়নি। তবে পাশাপাশি এও বলব যে, ওই নেপথ্য ডান্সারকে নিয়ে আপত্তির জন্যই যশ বেরিয়ে গেল কিনা, সেটা আমার জানা নেই।"
যে গান নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত-
প্রসঙ্গত, রবিবার যশ দাশগুপ্তর টুইটের পর একাধিকবার তাঁকে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছেন প্রযোজক তথা 'চিনেবাদাম' অভিনেত্রী এনা সাহা। বুধবার সাংবাদিক বৈঠকে প্রকাশ্যে কেঁদেও ফেলেন তিনি। পরিচালক শিলাদিত্যও যশের সঙ্গে যোগাযোগ করে সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করেছেন, কিন্তু তা অধরাই থেকে গিয়েছে।
তবে শিলাদিত্যর সাফ কথা, "এহেন নেতিবাচক মন্তব্যের জেরে আমি আমার সিনেমা 'চিনেবাদাম'-এর প্রচার চাই না। একটা ভিন্ন স্বাদের ছবি বানানোর চেষ্টা করেছি। সেটা দর্শকরা হলে গিয়ে দেখুন। এটুকুই অনুরোধ করব।"
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন