Advertisment
Presenting Partner
Desktop GIF

রেমো সেদিন সুযোগ না দিলে কী হতো জানি না: অরূপ-সুরজিৎ

Arup Surajit Choreographer: কলকাতা থেকে নামমাত্র টাকা হাতে মুম্বই গিয়েছিলেন অরূপ-সুরজিৎ। বাংলা সিনেমার নতুন কোরিওগ্রাফার জুটি জানালেন ইন্ডাস্ট্রিতে রেমোই তাঁদের শিক্ষাগুরু।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Choreographer Arup and Surajit speaking about their guru Remo D'Souza

শিক্ষক ও মেন্টর রেমো ডিসুজার সঙ্গে অরূপ-সুরজিৎ। ছবি সৌজন্য: অরূপ

Teachers' Day tribute to Remo by Arup-Surajit:  ২০০৮ সালের এক সন্ধ্যারাতে রেমো ডিসুজার মুম্বইয়ের বাড়িতে এসে পৌঁছেছিলেন অরূপ সেনগুপ্ত ও সুরজিৎ হেলা। বিদেশের শোয়ের জন্য নতুন টিম সাজাচ্ছেন রেমো, এতটুকু খবর পেয়েছিলেন কলকাতার এই দুই তরুণ ডান্সার। আজকের কোরিওগ্রাফার জুটি হয়ে ওঠার শুরুটা হয়েছিল সেই রাতে, রেমো-র হাত দিয়েই। শিক্ষক দিবসে বাংলা ছবির নতুন কোরিওগ্রাফার জুটি অরূপ-সুরজিৎ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানালেন তাঁদের গুরু এবং বলিউডে তাঁদের দশ বছরেরও বেশি জার্নির কথা।

Advertisment

''আমরা দুজনেই প্রথমে আলাদা আলাদা ভাবে ডান্স শো করতে শুরু করেছিলাম মোটামুটি ২০০০ সাল থেকে। শো করতে করতেই আমাদের আলাপ ও বন্ধুত্ব। বাংলায় তখন অনেক স্টেজ শো করেছি আমরা। একদিন খবর পেলাম যে রেমো স্যার নতুন ডান্সার খুঁজছেন। কিন্তু রেমো স্যারের ফোন নম্বর ইত্যাদি কিছুই পাইনি। শুধু বাড়ির ঠিকানাটা পেয়েছিলাম। আমরা মন ঠিক করে নিলাম যে মুম্বই যেতে হবে, রেমো স্যারের কাছে গিয়ে অডিশন দিতেই হবে'', বলেন অরূপ ও সুরজিৎ।

আরও পড়ুন: পকেট ক্যামেরায় পেশাদার সিনেমা! নতুন নজির পরিচালক রিংগো বন্দ্যোপাধ্যায়ের

দুজনের সম্বল বলতে মাত্র ৫ হাজার টাকা। ওইটুকু পুঁজি নিয়েই মুম্বই পাড়ি দেন দুজনে। খুঁজে খুঁজে রেমো ডিসুজার বাড়িতেও পৌঁছন। কিন্তু গিয়ে জানতে পারেন যে অডিশন শেষ এবং তাঁর নতুন টিম ইতিমধ্যেই সাজিয়ে ফেলেছেন রেমো। অনেকে হয়তো এই কথা শুনে ফিরে আসতেন। কিন্তু অরূপ ও সুরজিৎ চেয়েছিলেন অন্তত একবার রেমোর সামনে পারফর্ম করতে।

Arup with Irrfan Khan and Surojit with Jackky Bhagnani বাঁদিকে ইরফান খানের সঙ্গে অরূপ ও ডানদিকে জ্যাকি ভাগনানির সঙ্গে সুরজিৎ। ছবি সৌজন্য: অরূপ

''আমরা এত রিকোয়েস্ট করেছিলাম ওঁকে। উনি এমনিতে খুব ভালো মানুষ। আমাদের সব কথা শুনে বলেছিলেন ঠিক আছে। তখনই আমরা পারফর্ম করি। আমাদের কাজ ওঁর ভালো লাগে। দুটো ছেলে কলকাতা থেকে এতদূর এসেছে, এত প্যাশন নিয়ে, সেটা দেখেই হয়তো ওঁর ভালো লেগেছিল'', বলেন অরূপ, ''উনি আমাদের জন্য টিমকে আবার রিস্ট্রাকচার করেন। আগে সিলেক্ট হওয়া দুজনকে বাদ দিয়ে আমাদের সুযোগ দেন। ওই মুহূর্তটা কোনওদিন ভুলব না, সেদিন রাতে আমাদের কোথাও থাকার জায়গা ছিল না, টাকা তো প্রায় ছিলই না। সেই রাতে ওঁর বাড়িতেই থেকেছিলাম আমরা।''

রেমো-র সঙ্গে অরূপ ও সুরজিতের পেশাগত সম্পর্কের সেই শুরু। এখনও রেমো-র সব ছবিতে, তাঁর নিজস্ব টিমে পারফর্ম করেন অরূপ ও সুরজিৎ। পাশাপাশি কোরিওগ্রাফার জুটি হিসেবেও কাজ করতে শুরু করেছেন তাঁরা। তখাগত মুখোপাধ্যায়ের 'ভটভটি' ছবির কোরিওগ্রাফির দায়িত্বে রয়েছে এই জুটি। বহু মিউজিক ভিডিও কোরিওগ্রাফি করেছেন তাঁরা। বেশ কিছু টেলিভিশন শোয়ের প্রোমো পরিচালনাও করেছেন। আসলে রেমো তো শুধু অসামান্য ডান্সার নন, বলিউডের সবচেয়ে সফল এবং প্রতিভাবান কোরিওগ্রাফারদের একজন। তাই মুম্বইতে কাজ শুরু করার চার-পাঁচ বছর পরে গুরু রেমোর মতোই কোরিওগ্রাফার হিসেবেও কাজ করার কথা ভাবেন অরূপ-সুরজিৎ।

Arup Sengupta Choregrapher শ্যুটিংয়ের সময় অরূপ।

আরও পড়ুন: Uttam Kumar Birthday: ‘আমরা সবাই খুব মিস করি! আজ দাদু থাকলে মর্নিং সেলফি হতো নিশ্চয়ই’

''আমরা একটা সময়ে পরে ভাবলাম আমাদের কনটেম্পোরারি অনেকেই তো করছে কোরিওগ্রাফি, আমরাও কেন পারব না কিন্তু কোরিওগ্রাফি করতে গেলে শুধু নাচ জানলে হয় না। স্টেজের কোরিওগ্রাফি এক রকম। সিনেমার কোরিওগ্রাফি কিন্তু অনেক বড় ব্যাপার, শুধুই ডান্স স্টেপ দেখিয়ে দেওয়া নয়'', জানালেন সুরজিৎ।

অরূপ ও সুরজিৎ এর পর মারাঠি সিনেমার চিত্রগ্রাহক আয়ুব আলি খানের কাছে ক্যামেরার কাজ শেখেন। একজন ভালো কোরিওগ্রাফারকে ফিল্মমেকিংয়ের সম্পূর্ণ টেকনিক জানতে হয়। আবার টেকনিকের পাশাপাশি থাকতে হয় নান্দনিক বোধ। একজন কোরিওগ্রাফার শুধুই অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নাচ শেখান না। যে কোনও বড় বলিউড প্রজেক্টে গানের দৃশ্যের পুরো পরিচালনাটাই তাঁদের হাতে থাকে। ঠিক সেই কারণেই ফারা খান, রেমো ডিসুজারা একটা সময় পরে পরিচালকের ভূমিকায় এসেছেন, বাংলায় যেমন এসেছেন বাবা যাদব।

Surajit Hela choreographer ক্যামেরায় চোখ সুরজিতের। ছবি সৌজন্য: অরূপ

''আমাদের এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয় মানুষকে বোঝানো যে আমরা শুধুই নাচ শেখাই না। একটা গানের দৃশ্যের পোশাক, প্রপস থেকে ফ্রেম, সবটাই ডিজাইন করেন একজন কোরিওগ্রাফার। অন্তত সেটাই হওয়া উচিত। কিন্তু সাধারণ দর্শকের কথা বাদ দিলাম, ইন্ডাস্ট্রির অনেকেই এই ব্যাপারটা ঠিক এখনও বোঝেন না'', বলেন অরূপ-সুরজিৎ।

কিন্তু এই তরুণ কোরিওগ্রাফার জুটি যে সম্ভাবনাময় সেকথা বলেন তাঁদের গুরু, রেমো ডিসুজা নিজেই। ৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবসে রেমোর সেই ভিডিও বার্তা সোশাল মিডিয়ায় প্রকাশ করেছেন অরূপ ও সুরজিৎ। দেখে নিতে পারেন সেই বার্তা নীচের লিঙ্কে ক্লিক করে--

অরূপ ও সুরজিৎ এখন মুম্বইতেই থাকেন, কাজের সূত্রে কলকাতায় আসা-যাওয়া করেন। যেমন সম্প্রতি এসেছিলেন 'ভটভটি'-র একটি সং সিকোয়েন্স শ্যুট করতে। কোরিওগ্রাফির পাশাপাশি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির অভিজ্ঞ ডান্সার হিসেবে প্রায় ১১ বছর কাজ করছেন দুজনে। ২০০৮ সালে রেমো ডিসুজার সেই বিদেশে শোয়ের জন্য দেওয়া অ্যাডভান্সের টাকা থেকেই হয়েছিল মুম্বইতে প্রাথমিক আস্তানা। আবার ওই শোয়ের টাকা জমিয়েই দুজনে দেড় লক্ষ টাকা করে জমা দিয়ে বলিউডের ডান্সার্স গিল্ডের কার্ড করিয়েছিলেন। এভাবেই কলকাতা থেকে আসা দুই অচেনা মানুষকে নিঃস্বার্থভাবে সাহায্য করেছিলেন রেমো ডিসুজা। তাই শিক্ষক দিবসে অরূপ-সুরজিৎ এই মানুষটিকে নিয়ে আবেগপ্রবণ হবেন সেটাই স্বাভাবিক।

''রেমো স্যার মানুষ হিসেবে এত ভালো, কারও মধ্যে কাজ করার ইচ্ছে থাকলে, তাকে নিঃস্বার্থ ভাবে সাহায্য করেন। আর গুরু হিসেবে আমরা ওঁর থেকে শিখেছি কীভাবে কাজের জায়গায় সব সময় মাথা ঠান্ডা রাখতে হয়। ১১ বছরে ওঁকে কখনও মাথা গরম করতে দেখেনি, গালাগাল করতে দেখিনি। অ্যাসিস্টান্ট হোক বা অ্যাক্টররা হোক, কেউ ভুল করলে বার বার করে দেখিয়ে দেন, এটা খুব বিরল। আমাদের কাছে শুধু শিক্ষক বা মেন্টর হিসেবে নন, মানুষ হিসেবেও উনি আদর্শ'', বলেন অরূপ-সুরজিৎ।

bengali films
Advertisment