বাংলার মসনদ দখলের পাশাপাশি গেরুয়া শিবিরের নজর এখন গ্ল্যামার ইন্ডাস্ট্রিতেও। সিনে ইন্ডাস্ট্রি এখন ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শে দ্বি-বিভক্ত। একদিকে সবুজ, বিরোধীপক্ষ গেরুয়া শিবির। টলিউডকে আয়ত্ত আনা মানেই ‘পাখির চোখ’ টালিগঞ্জ কেন্দ্র। তৃণমূলের ‘তুরুপের তাস’ যেখানে অরূপ বিশ্বাস (Arup Biswas), সেখানে ‘বিজেপির বাজি’ বাবুল সুপ্রিয় (Babul Supriyo)। ফেডারেশন অব সিনে টেকনিশিয়ানস অ্যান্ড ওয়ার্কার্স অব ইস্টার্ন ইন্ডিয়ার (Federation of Cine Technicians and Workers of Eastern India) পক্ষ থেকে সোমবার রাতে তাদের ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট করা হয়। যা নিয়ে তুমুল উত্তেজনার সূত্রপাত। তাতে লেখা, "কতিপয় কুৎসাকারী ফেসবুকে হঠাৎ ফিল্ম তথা টেলিভিশন জগতের কলাকুশলীদের অতি আপনজন সাজার চেষ্টা করে মিথ্যে ভালোমানুষি দেখাতে আরম্ভ করেছেন।" আর ঠিক এই ভাষারই বিরোধিতা করেছেন টালিগঞ্জের গেরুয়া শিবির-পন্থীরা। তাঁদের অভিযোগ, রবিবার স্বরূপ বিশ্বাসের নেতৃত্বে আয়োজিত মিছিলে যাঁরা যোগ দেননি, তাঁদের উদ্দেশে হুমকি ছোঁড়া হয়েছে।
আসলে পদ্ম শিবিরে যোগ দিয়েই রুদ্রনীল ঘোষ টলিউডে মাফিয়ারাজ চলার বিস্ফোরক মন্তব্য় করে বসেছিলেন। তার প্রতিবাদেই রবিবার মৌন-মিছিলের আয়োজন করা হয়েছিল ফেডারেশনের পক্ষ থেকে। তবে তা খুব একটা ফলপ্রসূ হয়নি! কারণ, অনেকেই এদিন শুটিং থাকার জন্য সেই মিছিলে যোগ দিতে পারেননি। এরপরই ফেডারেশনের পক্ষ থেকে একটি হোয়াটসঅ্যাপ বিবৃতি জারি করা হয়। তাতে লেখা, "চড়া রোদ মাথায় করে মিছিলে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সামিল হন টালিগঞ্জের বেশির ভাগ কলাকুশলী। তাঁদের প্রত্যেককে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা এবং ধন্যবাদ জানিয়েছে ফেডারেশন। তবে, অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি, যে সমস্ত স্বনামধন্য কলাকুশলীরা যেমন পরিচালক, চিত্রশিল্পী, ক্যামেরা পার্সন, রূপটান শিল্পী প্রমুখেরা আজকের এই ঐতিহাসিক মিছিলে যোগদান করলেন না, ফেডারেশনের অপমানের বিরোধিতা করলেন না, আগামী দিনে ফেডারেশন তাদের নিয়ে গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করবে।" আর এই 'গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করার' বিষয়টিতেই হুঁশিয়ারির গন্ধ পেয়েছেন টালিগঞ্জ কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয়। অতঃপর পাল্টা দিতেও ছাড়েননি প্রতিদ্বন্দী অরূপ বিশ্বাস এবং তাঁর ভাই স্বরীপ বিশ্বাসকে।
বাবুল এইপ্রসঙ্গে স্পষ্ট জানিয়েছেন,"অরূপ বিশ্বাসের 'সুযোগ্য' ভাই স্বরূপ বিশ্বাসের 'চরম নৈরাজ্যের ক্যাপ্টিনশিপ-এ' চলা (আসলে চলতে বাধ্য করা) 'ফেডারেশন অফ সিনে টেকনিশিয়ানস্ অ্যান্ড ওয়ার্কার্স্ অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়া' তরফে জারি করা হয়েছে একটি হোয়াটসঅ্য়াপ বিবৃতি। শেষের চারটি লাইন পড়ুন কি ভাবে স্পষ্ট ভাষায় 'ধমকি' দেওয়া হয়েছে। গতকালের মিছিলে যাঁরা এসেছিলেন, তাঁরাও এই দুই 'ভাই'এর অত্যাচারে তিতিবিরক্ত ও চূড়ান্ত অসন্তুষ্ট - এঁরাই এই দুই ভাইকে শুধু টালিগঞ্জ পাড়া ছাড়া করবেন তাই নয়, বিধানসভার নির্বাচনেও 'চুপ চাপ পদ্মে ছাপ' দিয়ে তৃণমূলকে বিপুল ভোটে পরাস্ত করবেন।"
ফেডারেশনের ওই বিবৃতির বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছেন রুদ্রনীল ঘোষ (Rudranil Ghosh), রূপাঞ্জনা মিত্র (Rupanjana Mitra), কৌশিক রায়ের মতো টলিউডের গেরুয়া শিবির সদস্যরাও। তাঁদের কথায়, "স্রেফ ভয় পেয়েই ওই মিছিলে অংশগ্রহণ করতে বাধ্য় হয়েছেন অনেকে। নবপ্রজন্ম এমন আচরণ কিছুতেই মেনে নেবে না!"
অন্যদিকে ‘ভয় দেখিয়ে মিছিল করানো’র অভিযোগ নস্য়াৎ করে দিয়েছেন ফেডারেশনের সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস (Swarup Biswas)। তাঁর দাবি, ‘‘সকলেই প্রশংসা করেছেন। কেউ কোনও বিরোধিতা করেননি। তার পরেও যদি কেউ কিছু বলে থাকেন, তা হলে বলব, এক দল ঘাম ঝরিয়ে মিছিলে হাঁটবেন আর এক দল বাড়িতে বসে আরাম করে বিরোধিতা করবেন— এই মানসিকতা ঠিক নয়। মনে রাখতে হবে, এই লড়াইটা কিন্তু সকলের।’’