বিতর্ক, বিতর্ক? আর বিতর্ক! বিতর্ক ছাড়া দুনিয়া চলা বড়ই মুশকিল। তার ওপরে যদি হয় বিনোদন দুনিয়া তবে, দিনে অন্তত কিছু বিতর্ক তো লেগেই রয়েছে। কখনও সেলেবদের মন্তব্য, আবার কখনও তাদের পোশাক কিংবা ফটোশুট নিয়ে চর্চা। ২০২২ জুড়ে ছিল নানান বিতর্ক! সেগুলো একবার ফিরে দেখা যাক। বয়কট বলিউড থেকে রাজনৈতিক বিতর্ক, কম হয়নি। কিছু কিছু মাত্রা ছাড়িয়েছে। তবে সামনেই বিরাট কিছু রিলিজ, তাঁর আগেই একবার চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক।
ভারত যখন বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য, তখন তাঁর মধ্যে বলি টলি মলিউড নিয়ে দ্বন্দ্ব এবং বিতর্কের শেষ নেই। বিশেষ করে এই বছর, দক্ষিণী সিনেমার সাফল্য বক্স অফিসে আলোড়ন তুলেছিল। এমনিতেও বলিউডের থেকে মানুষ এখন দক্ষিণী সিনেমা নিয়ে বেশি চিন্তিত। বিতর্কের ঝড় শুরু হয়েছিল এখান থেকেই।
অজয় দেবগন বনাম সুদীপ কিচ্চা :-
দক্ষিণী সিনেমার অসাধারণ সাফল্য এবং বক্স অফিসে এর বিরাট অঙ্কের ব্যবসা নাড়িয়ে দিয়েছে গোটা ইন্ডাস্ট্রিকে। অভিনেতা সেই রেশকে টেনে ধরেই বলেছিলেন হিন্দি আজ থেকে আমাদের জাতীয় ভাষা নয়। আর এই মন্তব্যের পরবর্তী পর্যায়ে আরেকটি ট্যুইট তাঁর দিকে ছুড়েছিলেন অজয় দেবগন। জানতে চেয়েছিলেন, যদি হিন্দি জাতীয় ভাষা না হয় তবে সমস্ত দক্ষিণের ছবি হিন্দিতে ডাব হয় কেন? হিন্দি আমাদের মাতৃভাষা এবং সারাজীবন থাকবে।
যদিও বা এই নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। ভারতের বিভিন্ন জায়গার মানুষ নানান ভাষায় কথা বলেন। হিন্দি সকলে বোঝার চেষ্টা করেন। এই নিয়ে বাদানুবাদ চলে দীর্ঘ অনেকদিন। কেউ কেউ জানিয়েছিলেন, ভারতে অফিসিয়াল ল্যাঙ্গুয়েজ রয়েছে, ন্যাশনাল নয়। তবে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানিয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে ভাষায় ভারত সরকার সমস্ত কাজ করছে সেটাই জাতীয় ভাষা। এতে হিন্দির গুরুত্ব আরও বাড়বে।
অক্ষয় কুমার এর পান মশলা বিজ্ঞাপন :-
সারাজীবন সমাজের মঙ্গল হয় এমন ছবিতেই কাজ করেছেন অক্ষয় কুমার। যে মানুষ কিনা কোনোদিন অ্যালকোহলের বিজ্ঞাপন করেন নি, তাঁকে দেখা যায় বিমল এলাইচির বিজ্ঞাপনে। যা চোখে পড়তেই রীতিমতো রেগে আগুন হয়ে যান দর্শকরা। ফলস্বরূপ ক্ষমা চেয়ে নেন অক্ষয়। যদিও বা, এই বিজ্ঞাপন আজও চলছে। কিন্তু অভিনেতা জানিয়েছিলেন, তিনি এই টাকা ভাল কোনও কাজে ব্যবহার করবেন।
কালী পোস্টার বিতর্ক :-
হাতে সিগারেট এবং প্রাইড ফ্ল্যাগ, মা কালীর এহেন পোস্টার দেখে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠেছিলেন অনেকেই। এক দেবীমূর্তির এহেন প্রদর্শন! দায়ের করা হয়েছিল FIR। দাবি করা হয়েছিল, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়েছেন পরিচালক। লীনা লিখেছিলেন, সবচেয়ে বড় গণতন্ত্র এখন বড় ঘৃণার যন্ত্রে পরিণত হয়েছে। ভারতের হাই কমিশনের নির্দেশে এই সংক্রান্ত সমস্ত উপস্থাপনা টরন্টো থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
বয়কট বলিউড :-
'লাল সিং চাড্ডা' থেকে 'ব্রহ্মাস্ত্র', বয়কট বলিউড ট্রেন্ড ছিল তুঙ্গে। আমিরের ছবি এই ট্রেন্ডে বলি হলেও রণবীর কাপুরের ছবি বেশ কিছু প্রশংসা কুড়িয়েছিল। যদিও বা রণবীরকে নিয়ে বিরাট শোরগোল হয়। অভিনেতা তাঁর এক পুরনো সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন তিনি বিফের ফ্যান! সেই সাপেক্ষেই তাঁকে নিয়ে নানান ঝামেলার সূত্রপাত। বয়কট বলিউড এক বিরাট ধাক্কা দিয়েছে বক্স অফিসে। কোনও তারকা এমনও জানিয়েছিলেন যে এই হ্যাশট্যাগ দেশের কোষাগারের ক্ষতি করছে আর কিছুই না।
রণবীর সিং এর নিউড ফটোশুট :-
বছরের মাঝামাঝি সময় থেকেই এই বিতর্ক তুঙ্গে। নিজের উলঙ্গ ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করতেই একের পর এক অভিযোগ দায়ের অভিনেতার বিরুদ্ধে। পুলিশি হাজিরা দিতে হয়েছে তাঁকে। যদিও বা এই প্রসঙ্গে বেশিরভাগ সঙ্গ দিয়েছিলেন অভিনেতাকে। তিনিও জানিয়েছিলেন, ফ্লোরে ছবি তোলার সময় পোশাক পড়েছিলেন তিনি। বাকিরা এডিট করা হয়েছে। কিন্তু তারপরেও বিতর্ক পিছু ছাড়েনি।
বিগ বসে সাজিদ খান :-
এবারের 'বিগ বস' নিয়ে শোরগোল কম হয়নি। প্রতিযোগী সাজিদ খানকে নিয়ে একের পর এক মামলা দায়ের করেছিলেন মডেল অভিনেত্রীরা।।শার্লিন চোপড়া নিজেও রয়েছেন সেই দলে। সাজিদ ফেঁসে রয়েছে #METOO কেসে। তারপরও তিনি কিভাবে পেলেন সুযোগ? একজন পরিচালক হয়েও মেয়েদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করেছেন তিনি। আওয়াজ তুলেছেন দেশের মেয়েরা, সঙ্গে তারকারাও।
The Kashmir Files - বিতর্ক :-
গোয়া আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের মঞ্চে,' দ্যা কাশ্মীর ফাইলস'কে প্রোপাগান্ডা এবং ভালগার ছবি হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন নাদাভ লাপিদ। তাঁকে সঙ্গ দিয়েছিলেন অনেকেই। ভারতের কেউ কেউও তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। এরপরেই ছবির পরিচালক বিবেক অগ্নিহত্রী জানিয়েছিলেন, আবার আরেকটি ছবি বানাবেন এই নিয়ে। যা মানুষকে আরও নাড়িয়ে দেবে।
পাঠান - বেশরম রং বিতর্ক :-
দীপিকা-শাহরুখের গান নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে। বিশেষ করে গেরুয়া রঙের খোলামেলা পোশাকে তাঁকে দেখেই যেন চক্ষু চড়কগাছ বেশিরভাগের। যদিও বা কেউ কেউ সম্পূর্ন ঘটনাকে তুচ্ছ হিসেবেই গণ্য করছেন। তবে হিন্দু সংগঠনের পাশাপাশি বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এবং দেশের নানান নেতা মন্ত্রীদের তরফে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। আপত্তিকর দৃশ্য বাদ না দিলে সিনেমা হল জ্বালিয়ে দেওয়া হবে এমন হুমকিও দেওয়া হয়েছে।