সারদা মা, ভগিনী নিবেদিতা এবং মাদার টেরিজার পর বাংলার একমাত্র উদ্ধারকারী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিযোগ, এমন উক্তি করেই শুরু হয়েছিল 'মা'। বুধবার ২৪তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের 'শর্ট ফিল্ম' বিভাগে প্রদর্শিত 'মা' নামের স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবিটি আদ্যন্ত 'মমতা ভজনা' এবং 'তৃণমূলের প্রচারমুলক' বলে অভিযোগ ছবি দেখতে যাওয়া ক্ষুব্ধ দর্শকদের একাংশের। এই ঘটনার ঠিক একদিন আগে চলচ্চিত্র উৎসব চত্বর (নন্দন এলাকা) কেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর ছবিতে ছয়লাপ সে নিয়ে মন্তব্য করে রাজনৈতিক বিতর্কে জড়িয়েছিলেন 'ভুতের ভবিষ্যৎ'-এর পরিচালক অনীক দত্ত। এর পর 'মা'-র প্রদর্শন ফের প্রশ্ন তুলে দিল কলকাতার গর্বের আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের রাজনীতিকরণ নিয়ে।
জানা যাচ্ছে, বুধবার সন্ধ্যায় নন্দনে মোট পাঁচটি শর্ট ফিল্ম দেখানোর কথা ছিল। প্রতি বছরই বেশ কিছু ভাল ছবি দেখানো হয় এই বিভাগে। ফলে সিনেপ্রেমীরা রীতিমতো প্রত্যাশা নিয়ে হলে গিয়েছিলেন এবং হলও ছিল আক্ষরিক অর্থে 'হাউজ ফুল'। আর এরপরই প্রথম ছবি হিসাবে 'মা'-র প্রদর্শন শুরু হয়। কিন্তু অভিযোগ, শুরু থেকেই এই ছবিতে নানাভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্তুতি এবং তাঁর সরকারের সাফল্যের কাহিনী দেখানো হয়। আর এতেই চুড়ান্ত চটে যান দর্শকদের একটা অংশ। এরপর রীতিমতো বিক্ষোভ দেখাতে দেখাতে প্রেক্ষাগৃহ থেকে বেরিয়ে আসেন দর্শকরা।
ক্ষুব্ধ দর্শকরা বলছেন, কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের মতো একটা সম্মানীয় মঞ্চে ছবি দেখাতে গিয়ে অনেক কাঠখর পোড়াতে হয় যোগ্য পরিচালকদের। ছবি দেখানোর জন্য পরিচালক ও তাঁর সিনেমাকে রীতিমতো মেধার নিরিখে উত্তীর্ণ হতে হয়। তাহলে, সেখানে কী করে এমন 'রাজনৈতিক প্রচারমুলক' ছবি জায়গা পায়? জানা যাচ্ছে, 'মা'-এর পরিচালক মল্লিকা রায় বর্তমানে হাওড়া পুরসভার ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর।
'মা'-কে ঘিরে দর্শক বিক্ষোভের বিষয়ে কথা বলতে পরিচালক অনীক দত্তের সঙ্গে যোগাযোগ করে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা। ঘটনাটি তিনি জানেন বলে দাবি করলেও, এ বিষয়ে সরাসরি কোনও মন্তব্য করেননি। তবে, নন্দন চত্বরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি নিয়ে তাঁর মন্তব্যে যে এমন প্রতিক্রিয়া হবে তা তিনি ভাবতেই পারেননি বলে জানিয়েছেন অনীক দত্ত। তাঁর দাবি, "ছোটবেলা থেকে ফিল্ম ফেস্টিভালে যাচ্ছি, কখনও এমন (মুখ্যমন্ত্রীর একাধিক কার্টআউট) দেখিনি। সে জন্যই বলেছিলাম"। তবে তিনি এমন মন্তব্য করায় বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বাহবা দেওয়ায় কিঞ্চিত অবাক অনীক। তিনি বলেছেন, "এই সামান্য কথা বলার জন্য যদি বীরত্ব দরকার হয়, তাহলে তো বোঝাই যাচ্ছে..."।