অপরাধ কী ছিল তার? কি এমন করত বৎসর ১৩-১৪ ছেলেটা? খুব বড় অন্যায় করে ফেলেছিল? নিজের দেশকে বাঁচাতেই ভরাট গলায় কেবল গান গাইত সে। দিকে দিকে ভাইরাল হয়েছিল তার গান। সেই ছোট্ট প্রাণটাই অকালে চলে গেল। যে ছেলেটা গান গেয়ে গাজার হাজারো হাজারো মানুষকে অনুপ্রেরণা দিয়েছিল। সে দেশের ভয়ংকর পরিস্থিতির কথা গান এবং সুরের মাধ্যমে গোটা বিশ্বের কাছে তুলে ধরেছিল, সেই ছেলেটাই আজ আর নেই। গাজার শহীদ এবং মৃত ব্যক্তিদের হয়ে গান গাইতে গাইতে, আজ সেও না ফেরার দেশে।
প্যালেস্টাইনের শিশুটির নাম হাসান আয়াদ। যে গলায় সে গান গাইতো, তাতে ছিল বেদনা এবং দুঃখ। তাতে ছিল দীর্ঘদিন ধরে হয়ে আসা গাজার প্রতি অন্যায় এবং অবিচারের নানা শব্দ। তাতে ছিল মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার মত ক্ষমতা। দিনের পর দিন গাজাকে যেভাবে শেষ করে দেওয়া হচ্ছে সেখান থেকেই সকলকে ভয় কাটিয়ে বেরিয়ে আসতে অনুপ্রেরণা দিয়েছিল সেই ছেলেটি। শিশু শিল্পী হিসেবে সেদেশে দারুণ জনপ্রিয় সে। সঙ্গে থাকত তার বাবা। তার দরাজ গলা শুনলে দাঁড়িয়ে যেত বহু মানুষ। বছর ১৩-১৪ ছেলেটা ও আজ শেষ। সেখানকার সংবাদ মাধ্যম সূত্রে খবর..
তার গলার আওয়াজ চিরকালের মত স্তব্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সেই বাচ্চাটি যে, মৃত্যুর গান গাইত, নিজেই আজ সেই দলে যোগ দিয়েছে। সেই বাচ্চাটির বাবা আলা আয়াদ আবু হাসান, সব সময় ছেলেকে সাপোর্ট করে গেছেন। তাকে নিয়ে গর্ববোধ করতেন তিনি। এবং এও বলতেন, তিনি তার যোগ্য উত্তরসূরী। তার বাবা এও বলতেন, এই বাচ্চাটির মধ্যে প্রতিভা আছে। তার মধ্যে ছোট থেকেই ভাল কিছু করার ইচ্ছে আছে। এদিকে সন্তানের মৃত্যুর খবর পেয়ে, মাথায় বাজ ভেঙে পড়ে তার বাবার। সন্তানের মৃত্যু যে কানে শুনতে হবে এ কথা কল্পনাও করতে পারেননি তিনি। সে দৃশ্য চোখে দেখা যায় না। নুসাইরাতে বিমান হামলায় নিহত হয়েছে এই শিশুটি।
শোকাহত তার বাবা। যেন পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবিলা করার কোন ক্ষমতাই নেই। কপাল চাপরে চাপরে শুধু কেঁদে চলেছেন তিনি। তার সন্তান যে কিনা, সমস্ত অনাথ শিশুদের মুখে হাসি ফোটাত, রিফিউজি ক্যাম্পে গান গেয়ে তাদের মনে আনন্দ দিত, এয়ার স্ট্রাইকে যে তিনি চলে যাবেন কল্পনাও করতে পারেনি কেউ।
ফিলিস্তিনি চলচ্চিত্র পরিচালক রশিদ মাশারাওয়ি বলেন, "হাসান আইয়াদ, যে শিশুটি আমাকে গাজা থেকে একটি গান উৎসর্গ করেছিল, সে আজ শহীদ হয়েছে। তিনি তার মিষ্টি, হৃদয়বিদারক শিশুসুলভ কণ্ঠে জিরো ডিসটেন্স চলচ্চিত্রের জন্য গান গেয়েছিলেন।"