'পাত্র চাই, পাত্রী চাই'… পত্র-পত্রিকা খুললেই ছেয়ে যাওয়া বিজ্ঞাপনের ভীড়। কাঙ্ক্ষিত সঙ্গী সন্ধানের জন্য অনলাইন অ্যাপেরও কমতি নেই। তবে বিয়ে দেওয়ার জন্য মরিয়া সমাজের সমকাম সঙ্গী খোঁজার কথা শুনলেই ভ্রু আন্দোলিত হয়। সেই প্রসঙ্গের ভিত্তিতেই 'গে ইন্ডিয়া ম্যাট্রিমনি' নামে এক তথ্যচিত্র তৈরি করেন বঙ্গকন্যা দেবলীনা মজুমদার। উপস্থাপনা গুরুগম্ভীর না হলেও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলেছেন সাদামাটা, কৌতূকরসের চিত্রনাট্যের বশেই। বছর খানেক ধরে যত্ন করে সেই ডকুমেন্টারি তৈরি করেছেন দেবলীনা। একাধিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে দেখানোও হয়েছে। তবে কোপ পড়ল গিয়ে ওড়িশার ব়্যাভেনশ বিশ্ববিদ্যালয়ের চলচ্চিত্র উৎসবে।
কারণ, সমকাম প্রেম-সম্পর্ক দেখানোয় আপত্তি সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের একাংশের। যাঁদের সিংহভাগই চরম দক্ষিণপন্থী। যে সংগঠনের নাম 'হরি ওম'। তাঁরা A সার্টিফিকেট প্রাপ্ত 'গে ইন্ডিয়া ম্যাট্রিমনি'র বিরুদ্ধে বিয়ে নামক প্রতিষ্ঠানের অপমানের অভিযোগ তোলে। শুধু তাই নয়, সংগঠনের তরফে এমন দাবিও তোলা হয়েছিল যে, এই ছবি দেখানো হলে ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল বন্ধ করে দেওয়া হবে। ছবি প্রদর্শনের যথা তারিখে পরিচালক দেবলীনা মজুমদারকে চলচ্চিত্র উৎসবে যেতে অবধি বাঁধা দেওয়া হয়। তাঁকে বলা হয়েছিল যে, 'গে ইন্ডিয়া ম্যাট্রিমনি'র পরিচালক সেখানে হাজির হলে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে। দেবলীনা নিজেই জানালেন সেকথা।
<আরও পড়ুন: ‘নাটু নাটু-র অস্কার জেতা নিয়ে এত্ত আদিখ্যেতা? রাগ হয়..’, বিস্ফোরক অনন্যা চট্টোপাধ্যায়>
প্রসঙ্গত, এই ব়্যাভেনশ বিশ্ববিদ্যালয়ের চলচ্চিত্র উৎসবেই সত্যজিৎ রায়ের 'পথের পাঁচালি' সিনেমা নিয়ে আপত্তি তোলা হয়। ছবির ইংরেজি নামের বানান (Pather Panchali) দেখে বলা হয় যে, এখানে 'পাঞ্চালি' অর্থাৎ দৌপদীকে অপমান করা হয়েছে। এমনকী, 'চারুলতা' সম্পর্কে 'হরি ওম' সংগঠনের মতামত, "পরিবারের মধ্যে অবাধ যৌন সম্পর্কের সুড়সুড়ি দেওয়া ছবি।" এমন সব যুক্তি-তক্কো শুনে হতবাক দেবলীনা মজুমদার। পরিচালক বললেন, "এহেন সংগঠনের থেকে এমন কথা খুব একটা আশাতীত নয়।"
'গে ইন্ডিয়া ম্যাট্রিমনি'র প্রযোজনা যেখানে খোদ ফিল্মস ডিভিশনের তরফে করা হয়েছে, সেই ছবিকেই কিনা গেরুয়া রোষানলে পড়তে হল ওড়িশার ব়্যাভেনশ ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে! দেবলীনা পরিচালিত ছবির পাশাপাশি 'হাদ আনহাদ' নামে আরেকটি সিনেমা নিয়েও আপত্তি ওঠে। এই তথ্যচিত্রের বিষয়বস্তু রামকে নিয়ে কবীরের ভাবনা। যা হজম করতে পারেনি 'হরি ওম' সংগঠন। অতঃপর 'গে ইন্ডিয়া ম্যাট্রিমনি' ও 'হাদ আনহাদ' এই দুই তথ্যচিত্রকে বাদ দিয়েই শুরু হয় চলচ্চিত্র উৎসব। যেখানে সত্যজিতের মতো কিংবদন্তীকেও কিনা কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়, সেই প্রেক্ষিতে সিনেপ্রেমীদের একাংশের তরফে ধিক্কারও জানানো হয় এমন কাণ্ডে।