২০১২ সালে দিল্লি গণধর্ষণের ঘটনার পর থেকেই সারা দেশের বেশিরভাগ মানুষই চেয়েছিলেন অবিলম্বে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হোক দোষীদের। কিন্তু বিচারব্যবস্থা তার নিজের নিয়মেই চলবে। জনমত মৃত্যুদণ্ডের পক্ষে হলেও অভিযুক্তদেরও তাদের বক্তব্য পেশ করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বিগত এক বছর ধরে সাধারণ মানুষ একটু অসহিষ্ণু হয়ে উঠেছিলেন বার বার অভিযুক্তদের প্রাণভিক্ষা ও ফাঁসির তারিখ পিছিয়ে যাওয়ার ঘটনায়। শেষ পর্যন্ত ২০ মার্চ ভোরে চার অভিযুক্তের ফাঁসির দণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।
যেহেতু এর আগে বহুবার ফাঁসির তারিখ নির্দিষ্ট হওয়ার পরেও তা পিছিয়ে গিয়েছে তাই অনেকেই অপেক্ষা করেছিলেন ২০ মার্চ ভোরে কী হয় তার জন্য। বাংলা বিনোদন জগতের অনেকেই অভিযুক্তদের মৃত্যুদণ্ডে স্বস্তি পেয়েছেন। অনেকেই সোশাল মিডিয়ায় তাঁদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। বাংলা ছবি ও বাংলা টেলিভিশনের জনপ্রিয় অভিনেতা জিতু কমল ও টেলি-নায়িকা সঞ্চারী দাস এই প্রসঙ্গে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে জানালেন বেশ কিছু কথা।
আরও পড়ুন: নির্ভয়ার চার ধর্ষকের ফাঁসি কার্যকর
''৭ বছর তিন মাস, সবথেকে বেশি যিনি জ্বলেছেন তিনি হলেন আশা দেবী। একজন মা প্রমাণ দিলেন সহনশীলতার। সাথে সাথে ২০১২-তেই অভিযুক্তদের সাজা হলে নারী নির্যাতন আরও কমত। তবে আজ আবারও প্রমাণ হল, দেশের আইন জীবিত। একজন ভারতীয় হিসেবে আমি চাইব, ৭ বছর নয় ৭ দিনে শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক এই ধরনের জঘন্য কাজের'', বলেন জিতু কমল।
ধর্ষকদের ফাঁসির জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় ছিলেন বাংলা বিনোদন জগতের অনেকেই। ১৯ মার্চ রাত থেকেই সোশাল মিডিয়ায় তাঁদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। 'কর্কট রোগ' ও 'শব্দজব্দ' ওয়েবসিরিজের চিত্রনাট্যকার দীপাঞ্জন সুরঞ্জনা চন্দের ফেসবুক পোস্ট--
অভিনেত্রী সঞ্চারী দাস যিনি এই মুহূর্তে সর্বমঙ্গলা ধারাবাহিকের নায়িকার চরিত্রে অভিনয় করছেন, তাঁর বক্তব্যে উঠে এল নারী স্বাধীনতার প্রসঙ্গও। দেশে নারীদের প্রতি ঘটে চলা অপরাধ কীভাবে এদেশের মেয়েদের অগ্রগতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে তা জানালেন তিনি।
''মৌলিক অধিকারে বলা আছে নারী এবং পুরুষের অধিকার সমান কিন্তু আমাদের দেশে প্রতি মুহূর্তে এগিয়ে যাওয়ার পথে নারীরা পুরুষের জন্য বাধার সম্মুখীন হয়। এগোব কী করে, সুরক্ষাই তো নেই। অপরাধী শাস্তি পাচ্ছে না দেখে অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে। আজ এই দিল্লি গণধর্ষণ কাণ্ডের অপরাধীদের শাস্তি হল, এতে একটা দৃষ্টান্ত তৈরি হল। অপরাধ করে মুক্তি পাওয়া যাবে না এবং ভবিষ্যতে অপরাধপ্রবণ মানুষের অপরাধ করতে যাওয়ার আগে তাদের মাথায় আসবে যে অপরাধের জন্য নয়, তার বিনিময়ে পাওয়া শাস্তিটাই মানুষ মনে রাখবে'', বলেন সঞ্চারী।
তবে পাশাপাশি আরও একটি বিষয়ে আলোকপাত করেছেন অভিনেত্রী। ঠিক যে প্রসঙ্গে জিতু কমলও বলেছেন যে ৭ বছর নয়, ৭ দিনে শাস্তি হওয়া কাম্য। ''আমাদের দেশে আইনে আছে যে অপরাধী শাস্তি পাক কিন্তু কোনও নিরপরাধী যেন শাস্তি না পায়। এর জন্য প্রমাণ হতে দেরি হচ্ছে, শাস্তি পেতে দেরি হচ্ছে'', অভিনেত্রী বলেন, ''অপরাধ লঘু হয়ে যাচ্ছে, মানুষের মন থেকে মুছে যাচ্ছে। এই ব্যাপারে সরকার আরও স্ট্রিক্ট ও অ্যাক্টিভ হলে ভালো হয়।''