Advertisment
Presenting Partner
Desktop GIF

'ব্যক্তিগত ক্ষতি'! 'সব সময় মোটিভেট করত সুশান্ত', স্মৃতিচারণায় 'ব্যোমকেশ'-অভিনেতারা

এই ব্যোমকেশ বাংলার দর্শকের কাছে বহিরঙ্গে হয়তো কিছুটা অচেনা কিন্তু ব্যোমকেশের অন্তর্নিহিত দুঃসাহসী সত্তা যেন ঠিকরে পড়ে সুশান্তের অভিনয়ে ও দিবাকর বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিচালনায়।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Detective Byomkesh Bakshi Bengali co-actors remembering Sushant Singh Rajput

ছবি: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস আর্কাইভ

দিবাকর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি 'ডিটেকটিভ ব্যোমকেশ বক্সী'-তে সুশান্ত সিং রাজপুত পেয়েছিলেন তাঁর জীবনের সেরা চরিত্রগুলির একটি। তারুণ্যে ভরপুর, প্রত্যুৎপন্নমতিত্বসম্পন্ন এই ব্যোমকেশ বাংলার দর্শকের কাছে বহিরঙ্গে হয়তো কিছুটা অচেনা ছিল কিন্তু ব্যোমকেশের অন্তর্নিহিত দুঃসাহসী সত্তা যেন ঠিকরে বেরিয়েছিল সুশান্তের অভিনয়ে ও দিবাকর বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিচালনায়। ওই ছবিতে অভিনয় করেন কলকাতার বহু অভিনেতা-অভিনেত্রী।

Advertisment

সুশান্তের এই আকস্মিক মৃত্যুতে পুরোপুরি ভেঙে পড়েছেন তাঁরা। তাঁদের প্রত্যেকের কাছেই এই মৃত্যু অপ্রত্যাশিত এতটাই যে অনেকেই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার মতো মানসিক অবস্থায় নেই। ওই ছবিতে ব্যোমকেশ বক্সীর প্রেমিকার চরিত্রে অভিনয় করেন মৌমিতা চক্রবর্তী। ছবির শুরুতেই প্রেসিডেন্সি কলেজে যে প্রেমিকা এসে জানায় যে তার বিয়ে ঠিক হয়েছে অন্যত্র। চরিত্রটি শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচনায় নেই। ছবির চিত্রনাট্যে সংযোজন করা হয়েছিল।

আরও পড়ুন: প্রয়াত সুশান্ত সিং রাজপুত, স্তম্ভিত বলিউড

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-র পক্ষ থেকে মৌমিতার সঙ্গে যখন যোগাযোগ করা হয়, তখনও তিনি দুঃসংবাদটি জানতেন না। খবরটি শুনে অত্যন্ত ভেঙে পড়েছেন অভিনেত্রী। প্রাথমিকভাবে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলতে পারেননি। সুশান্ত শুধুমাত্র সহ-অভিনেতা ছিলেন না, বন্ধুও ছিলেন মৌমিতার। অভিনেত্রী মুম্বইয়ে থাকাকালীন নিয়মিত তাঁর খোঁজ নিতেন সুশান্ত, জানালেন মৌমিতা।

Detective Byomkesh Bakshi Bengali co-actors remembering Sushant Singh Rajput ছবির একটি দৃশ্যে সুশান্ত সিং রাজপুতের সঙ্গে মৌমিতা চক্রবর্তী।

''আমার সঙ্গে সুশান্তের প্রথম আলাপ হয় ব্যোমকেশের ওয়ার্কশপের দিন। একদন নর্মালি কথাবার্তা হয়েছিল। সেলিব্রিটি বলে আলাদা করে কিছু মনেই হয়নি। যেদিন শুটে গেলাম, তখন কস্টিউম পরে মেকআপ করে যেন আলাদা মানুষ। আমাদের অনেকগুলো সিন শুট করা হয়েছিল কিন্তু ছবিতে দুটো রাখা হয়-- একটা প্রেসিডেন্সি কলেজে আর একটা হসপিটালের সিন ছিল। প্রথমদিকে আমি খুব ভয় পেয়ে যাচ্ছিলাম। নার্ভাস হয়ে পড়েছিলাম। তখনই সুশান্ত খুবই রিনাউনড। ওর সঙ্গে সিন করতে হবে ভেবে একটু ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। সুশান্ত আমাকে জল-টল খাইয়ে, মাথায় হাত-টাত বুলিয়ে অনেকটা সাহস দিয়েছিল'', বলেন মৌমিতা, ''সিনেমায় দেখানো হয়েছিল যে ওই সিনে লীলা ভেঙে পড়ছে। সিনটা করতে গিয়ে আমার সত্যিই ব্রেকডাউন হয়ে গিয়েছিল। গায়ে জ্বরও ছিল। নিজে থেকেই প্রোডাকশনের লোকজনকে ডেকে ওষুধ নিয়ে আসা, হেল্প করা, সবটাই করেছিল সুশান্ত।''

ওই ছবির শুটিংয়ের পরে বেশ কিছুটা সময় মুম্বইতে ছিলেন মৌমিতা। সুশান্তের সঙ্গে নিয়মিত কথা হতো সেই সময়ে। অভিনেতা নিজে থেকেই খোঁজ নিতেন। যখন মুম্বই থেকে কলকাতা চলে আসার সিদ্ধান্ত নেন মৌমিতা, তখন তাঁকে এমন সিদ্ধান্ত নিতে বারণ করেছিলেন সুশান্ত-- ''ও খোঁজ নিত কোথায় কী কাজ করছি, কবে কী অডিশন। যখন চলে আসি, আমাকে বলেছিল তুমি কেন চলে যাচ্ছ। বম্বে কাউকে ফেরায় না। কিন্তু তখন আমার বাবা খুব অসুস্থ, তাই কলকাতা ফিরে আসতে হয়। তার পরেও নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। গত বছর দশেরা-র সময় শেষ কথা হয়েছে। আমি নিতে পারছি না খবরটা। সব সময় মোটিভেট করত সুশান্ত...''

Detective Byomkesh Bakshi Bengali co-actors remembering Sushant Singh Rajput প্রিয় অভিনেতা, প্রিয় বন্ধুর স্মৃতিচারণায় কার্তিকেয় ত্রিপাঠী, মৌমিতা চক্রবর্তী।

সত্যান্বেষী ব্যোমকেশকে শরদিন্দু সাহিত্যে যেভাবে পেয়েছেন পাঠক, তার থেকে অনেকটাই আলাদা ছিল দিবাকর বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্মাণ। ব্যোমকেশ সাহিত্য আসলে যে কতটা নির্মম, কতটা অন্ধকারময় ব্যোমকেশের সময়, সিনেম্যাটিক নান্দনিকতায় তা একমাত্র দিবাকর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবিতেই সবচেয়ে যথাযথভাবে ধরা পড়েছে। ব্যোমকেশ মানে ড্রয়িংরুম-শোভিত বাঙালি গোয়েন্দা নয়। ধুতিপঞ্জাবি পরিহিত এক তরুণ যে দাপিয়ে বেড়ায় সারা কলকাতায়, মানসিকভাবে বিকৃত খুনীর চোখে চোখ রেখে কথা বলে-- এমন একটা চরিত্রে সুশান্ত সিং রাজপুতকে কাস্টিং করার কথা একমাত্র দিবাকর বন্দ্যোপাধ্যায়ই ভাবতে পারেন। 'কাই পো চে' অথবা 'পিকে'-তে দর্শক সুশান্তকে যেভাবে পেয়েছিলেন, সেই ইমেজকে ভেঙেচুরে দেয় দামাল ব্যোমকেশ।

আরও পড়ুন: শাহরুখের সঙ্গে একটা ছবি না করে কোথাও যাচ্ছি না: অনুরাগ

বলিউডে কেরিয়ারের শুরুতেই এমন একটি চরিত্র পাওয়া সৌভাগ্যের। সুশান্ত নিজেকে উজাড় করে দিয়েছিলেন। প্রাণবন্ত সুশান্ত খুব সহজেই মিশে যেতেন সহ-অভিনেতাদের সঙ্গে। এই ছবিতে একটি ছোট্ট চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন কার্তিকেয় ত্রিপাঠী। এটাই ছিল বলিউডে তাঁর প্রথম কাজ। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে জানালেন, ''আমার কাছে এটা একটা পার্সোনাল লস। আমার হাত পা কাঁপছে, কী বলব বুঝতে পারছি না। খুব শকিং... প্রথমদিন যখন সিনে এন্ট্রি নিল, আমি সেই প্রথমবার দেখলাম সুশান্তকে। অভিনেতা হিসেবে খুবই কমিটেড একজন মানুষ। পাটনার মতো একটা স্মল টাউন থেকে এসে মুম্বইতে এতটা সফল হওয়া... এটা খুব বড় একটা অ্যাচিভমেন্ট। খুব ভাল একজন কো-অ্যাক্টর। ব্যোমকেশ বক্সীর শুটিংয়ের দিন আমরা প্রথমে রিহার্সাল করলাম, তার পরে প্র্যাকটিস টেক দিলাম একটা। কোনওটাতেই সুশান্তের কোনও অসুবিধা ছিল না। তার পরে ফাইনাল টেক। সিনের পরে উই শুক হ্যান্ডস। দুজন দুজনকে ধন্যবাদ দিলাম। তার পরে আর কথা হয়নি। কিন্তু বলিউডের ছবিতে আমার প্রথম কো-অ্যাক্টর তো। মনে হচ্ছে যেন বাড়ির কেউ চলে গেছে...।''

Detective Byomkesh Bakshi Bengali co-actors remembering Sushant Singh Rajput ছবির একটি দৃশ্যে সুশান্ত সিং রাজপুতের সঙ্গে আরিয়ান ভৌমিক।

আরও পড়ুন, পুলিশের অনুমান আত্মহত্যা, রহস্যেই সুশান্তের মৃত্যু

ছবিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেন আরিয়ান ভৌমিক। ''এত প্যাশনেট একজন মানুষ... দেখেছি তো কাজ করে। যেভাবে ঘটেছে সেটা সত্য়িই মেনে নেওয়া যায় না। আমার বেশিরভাগ সিন ওর সঙ্গেই ছিল। খুব হেল্প করেছিল। সব মিলিয়েই ক্রাফটটা নিয়ে হি ওয়াজ ভেরি ডেডিকেটেড অ্যান্ড প্যাশনেট। এরকমভাবে চলে যাওয়াটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না'', ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে জানালেন আরিয়ান, ''উই অল গো থ্রু স্ট্রাগলস। শোবিজে এটা খুব বেশি দেখা যায়। কিন্তু যাদের কিছু অসুবিধা হচ্ছে, তারা যেন একটু ওপেন আপ করে। খুব খারাপ একটা খবর। কী বলব জানি না।''

সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলেই ঘোষণা করেছে মুম্বই পুলিশ। যদিও ঘটনার তদন্ত চলছে। তবে আত্মহত্যার কারণ কী তা জানা যায়নি। তাঁর ঘনিষ্ঠ অনেকেই মনে করছেন যে তিনি অবসাদগ্রস্ত ছিলেন কোনও কারণে। সোশাল মিডিয়ায় এমন একটি চর্চা চলছে। করণ জোহর-সহ বলিউডের অনেকেরই সোশাল মিডিয়া পোস্টে ধরা পড়েছে, বিগত কয়েকদিন ধরেই সুশান্ত ভাল ছিলেন না। সেই কারণেই কি চলে যাওয়া? এই ঘটনার সত্যান্বেষণ কে করবে, ডিটেকটিভ ব্যোমকেশ বক্সী?

Sushant Singh Rajput
Advertisment