/indian-express-bangla/media/media_files/2025/09/25/raghu-3-2025-09-25-23-08-47.jpg)
কেমন হল এই ছবি?
'রঘু নাকি কালীর ব্যাটা...' সে খাঁড়ায় এত দম, যে ব্রিটিশ রাজকে টুকরো টুকরো করে দিতে পারে। ডাকাত রাজের রাজ্য জয় নয় কেবল, এই জয় নীলকর সাহেবদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জয়। এই জয় এমন এক ভোরে স্বাধীন ভারত দেখার জয়। রঘুর জয়...
দেবের পুজো রিলিজ টক অফ দ্যা টাউন ছিল প্রথম থেকেই। রঘু ডাকাত, এই নামটা শুনলেই প্রথম ভেসে আসে, মায়ের সেবক। যার ডাকাতি শুরু হত মা কালীর কাছে রক্তাহুতি দিয়ে। সে কালী নাম না জপে ডাকাতি করতে বেরত না। ললাটে সিঁদুর তিলক, সঙ্গে আস্ত একটা খাঁড়া, ঘোড়া ছুটিয়ে সে চলল মানুষের সেবা করতে। গরীবদের মসিহা রঘু, তাঁর চাবুকের আঘাত পড়ত বাংলার বুকে হওয়া অত্যাচারের পিঠে। ছবির শুরুতেই রঘুর ( দেব ) দাপট দেখার মত। সঙ্গী গুঞ্জা ( সোহিনী সরকার ) এবং কালু ওস্তাদ। রঘুর উদ্দেশ্যে একটাই, যে বাংলায় সোনার ফসল ফলে, সেই বাংলায় যেন নীলের চাষ না হয়। যেকোনও ভাবে অন্যায়কে দমন করা।
/indian-express-bangla/media/post_attachments/a62ec2a9-cbe.jpg)
এগোতে থাকে ছবি। রঘু ডাকাতের ডেরায় সে এক অনন্যসুন্দর পরিবেশ। ডাকাত মায়ের ( রূপা গঙ্গোপাধ্যায় ) সন্তানরা, সকলে মিলে বাংলাকে নীল-মুক্ত করতে সচেষ্ট। আর রঘু, সেদিন থেকে ব্রিটিশ রাজের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নিয়েছিল, যেদিন তাঁর সংগ্রামী বাবাকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে দেয় ইংরেজ এবং এই ছবির একমাত্র ভিলেন অহিন্দ্র বর্মন ( অনির্বাণ ভট্টাচার্য )। রঘুর প্রতিপক্ষ অহিন্দ্র। তাঁর পরনের কালো পোশাক সর্বদাই যেন এই ইঙ্গিত দেয়, আঁধার ঘনিয়েছে তাঁর চারপাশে। সে, রুদ্রপুরের একমাত্র ভগবান। কিন্তু, নিয়তির লিখন? কে কতটা বাঁচবে সে তো নিয়তি লিখবে মা, আর বিধান দেবে রঘু....!!
/indian-express-bangla/media/post_attachments/cc75b5b3-559.jpg)
কিন্তু, ডাকাত বলে কি তাঁর ভালবাসার অধিকার নেই? নিশ্চই আছে। ছবি কিছুটা এগোতেই বোঝা গেল, গুঞ্জা বেজায় ভালবাসে তাঁর রাজা রঘুকে, তাঁকে বিয়ে করতে চায়। কিন্তু, রঘুর চোখ? সে তো সৌদামিনীর ( ইধিকা পাল ) ছুরিতে কাবু। অন্যদিকে, অহিন্দ্র বর্মন যে জোরাল প্রতিপক্ষ, তা ছবির শুরু থেকে শেষ বেশ ভালই বোঝা গিয়েছে। ইংরেজদের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করেই রঘুকে সরিয়ে দেওয়ার একটা প্ল্যানিং করতে বাদ রাখেনি সে। তাঁর ষড়যন্ত্র মাফিক রঘু তাঁর জীবনের সব হারায়। কিন্তু, ডাকাত রাজা, এত সহজে তো হেরে যাওয়ার নয়। ছবি জুড়ে, পাওয়ার প্যাক একশন। প্রথমভাগ বেশ ইন্টারেস্টিং, ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর সকলকে জাগিয়ে রাখবে। গল্প ভাল বোনার চেষ্টা করলেও, স্লো খেলেছেন পরিচালক। স্টোরিলাইন নিয়ে আরেকটু গবেষণা হলে মন্দ হত না। শট ডিভিশন কিছু জায়গায় ভাল, তবে ক্রাফট আরও ভাল হলেও পারত। ক্লাইম্যাক্স অবধি পৌঁছতে পৌঁছতে একটু একঘেয়ে লাগতেই পারে।
/indian-express-bangla/media/post_attachments/81b9279f-954.jpg)
আসা যাক অভিনেতাদের প্রসঙ্গে। রঘু ডাকাত যেমন দেবকে ছাড়া ইম্পসিবল। তেমনই, অনির্বাণ ভট্টাচার্য না থাকলে বোধহয়... তাঁর চোখ মুখের এক্সপ্রেশন গায়ে জ্বালা ধরাতে বাধ্য। অহিন্দ্র অনির্বাণ, নিংড়ে বের করে এনেছেন শিল্পীসত্বাকে। ছাপিয়ে গিয়েছেন সকলকে। দেব, এই ছবিতে অনেকটাই পরিণত। সংলাপ বলায় বেশ পরিপক্ব সে। তবে, স্ক্রিন প্রেজেন্স নিয়ে ভাবা উচিৎ ছিল। সোহিনী সরকার, এর উল্লেখ না করলেই নয়। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি চরিত্র বেশ সাবলীলতা দিয়েই সামলেছেন তিনি। নজরে রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর অভিনয় নিয়ে প্রশ্ন রাখা উচিত না। ডাকাত মা হিসেবে তিনিও বেশ দোর্দণ্ড। রয়েছেন ইধিকা। সৌদামিনী হিসেবে তিনিও বেশ সাবলীল। কিন্তু, এই ছবির আরেকটি ইউএসপি, ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর। তারিফ করতেই হয়।
/indian-express-bangla/media/post_attachments/0b2395ea-ae9.jpg)
সবশেষে, রঘু ডাকাত শুধুই লুটের গল্প নয়। এই গল্প, গরীবের পাশে দাঁড়ানোর গল্প, ঠিক যেমন জেমস বন্ড? রঘু সেই আশার স্বপ্ন, যা অন্যায়ের বিরুদ্ধে বাঁচতে শেখায়, লড়তে শেখায়। অনির্বাণ এবং দেবের বৈপরীত্য দর্শকদের কিছু হলেও ভাবাবে।
ছবির নামঃ রঘু ডাকাত
পরিচালনাঃ ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায়
অভিনয়েঃ দেব, ইধিকা পাল, অনির্বাণ ভট্টাচার্য, রূপা গঙ্গোপাধ্যায়, সোহিনী সরকার ও অন্যান্য
রেটিংঃ ৩.৫/৫