Advertisment
Presenting Partner
Desktop GIF

Ghawre Bairey Aaj movie review: সময়োপযোগী একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবাদী ছবি

Ghawre Bairey Aaj review: কিঞ্চিৎ বাণিজ্যিক মোড়ক সত্ত্বেও অপর্ণা সেন-এর 'ঘরে বাইরে আজ' একটি প্রতিবাদী ছবি, যে প্রতিবাদ সম্পর্কের রাজনীতির সীমাবদ্ধতা থেকে বেরিয়ে বৃহত্তর প্রেক্ষাপট নিয়ে দর্শককে ভাবতে বাধ্য করে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
বছর শেষে ফিরে দেখা, বাংলা সিনেমার সেরা ১০

ছবির একটি দৃশ্যে বৃন্দা (বিমলা) ওরফে তুহিনা। ছবি সৌজন্য: শ্রীভেঙ্কটেশ ফিল্মস

Ghawre Bairey Aaj movie cast: তুহিনা দাস, অনির্বাণ ভট্টাচার্য, যিশু সেনগুপ্ত, শ্রীনন্দা শঙ্কর, অঞ্জন দত্ত, ঋতব্রত মুখোপাধ্যায়

Advertisment

Ghawre Bairey Aaj director: অপর্ণা সেন

Ghawre Bairey Aaj movie rating: ৪/৫

Ghawre Bairey Aaj movie review: সিনেমা সময়ের কথা বলে। বহমান সময়, বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যাওয়া সময়, গণহত্যা, গণঅভ্যুত্থান-- ইতিহাসের এই সাদা-কালো মাইলফলকগুলি ধরা থাকেই সেলুলয়েডে। এমনকী যুক্তি ও মেধাচর্চাকে শূন্যে নামিয়ে, অন্ধ অনুসরণকারী উৎপাদনে তৎপর যে সময়, তার প্রহসনও প্রতিফলিত হয় অপ্রয়োজনীয় কিছু বাণিজ্যিক ছবিতে। দর্শক চান বা না চান, পছন্দ করুন বা না করুন, সিনেমায় সমসাময়িক রাজনৈতিক প্রসঙ্গ থাকবে কারণ সেটাই কাম্য। কিঞ্চিৎ বাণিজ্যিক মোড়ক সত্ত্বেও অপর্ণা সেন-এর 'ঘরে বাইরে আজ' একটি প্রতিবাদী ছবি, যে প্রতিবাদ সম্পর্কের রাজনীতির সীমাবদ্ধতা থেকে বেরিয়ে বৃহত্তর প্রেক্ষাপট নিয়ে দর্শককে ভাবতে বাধ্য করে।

নিঃসন্দেহে সেখানে প্রতিফলিত হয়েছে পরিচালকের নিজস্ব রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি। দর্শক তার সঙ্গে সহমত নাও হতে পারেন কিন্তু রবীন্দ্রসাহিত্য যেখানে থামে, পরিচালকের ভাবনা সেখানে শুরু হয়। যাঁরা রবীন্দ্র-উপন্যাসটি পড়েননি, তাঁদের কাজটি সহজ করে দিয়েছিলেন সত্যজিৎ রায়, উপন্যাসের পিরিয়ডের নিঁখুত নির্মাণে। বিশ্ববরেণ্য পরিচালকের ছবিটি যদি দর্শকের মনে থাকে, তবে তা শেষ হয় বিমলা-র বৈধব্য দিয়ে। সমসময়ের প্রেক্ষাপটে নির্মিত অপর্ণা সেনের এই অ্যাডাপ্টেশনে, বিমলার বৈধব্য বা নিখিলেশের মৃত্যু ছবির গন্তব্য নয়। বহুপঠিত উপন্যাসের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উত্তরণ ঘটে এই ছবিতে, যা এই সময়ের দাবি।

আরও পড়ুন: Bala Movie Review: একইসঙ্গে উচ্চকিত ও সূক্ষ্ম, আয়ুষ্মান খুরানা-র ‘বালা’ একটা অর্জন

পরিচালকের রাজনৈতিক চেতনা ও প্রজ্ঞায় নিখিলেশ-বিমলা-সন্দীপের সম্পর্কের সমীকরণ হয় ওঠে তিনটি ডিসকোর্সের সংঘাত ও সহবাস-- সমসাময়িক হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি, ধর্মনিরপেক্ষ বামপন্থী আন্দোলন ও ভারতীয় দলিত সমাজ। বিমলা এখানে অনুঘটক মাত্র নয়, সে নিজেই একটি ডিসকোর্স, দলিত সমাজের প্রতিনিধি, যদিও মূলস্রোতে আত্তীকরণের পরে তার উপজাতি অস্তিত্বের রেশ একমাত্র রয়ে গিয়েছে কথার টানে। বিমলা হয়ে উঠেছে দিল্লিনিবাসী বামপন্থী সংস্কারক ও আলোকপ্রাপ্ত সাংবাদিক-সম্পাদক নিখিলেশ চৌধুরীর স্ত্রী বৃন্দা। নিখিলেশ-বৃন্দার উল্টোদিকে রয়েছে একদা উগ্র বামপন্থী-বর্তমানে চরম দক্ষিণপন্থী হিন্দুত্ববাদী বুদ্ধিজীবী সন্দীপ।

Ghawre Bairey Aaj movie review ছবির একটি দৃশ্যে বৃন্দা (বিমলা) ও সন্দীপ।

রবীন্দ্রনাথের উগ্র জাতীয়তাবাদ-বিরোধিতা তাঁর সাহিত্যে অত্যন্ত স্পষ্টভাবে এসেছে। 'গোরা'-তে এসেছে একভাবে, 'ঘরে বাইরে'-তে আর একভাবে। সর্বধর্মসমন্বয় এবং সামাজিক বৈষম্য দূরীকরণের মাধ্যমে ভারতীয় সমাজের উন্নয়নই তাঁর কাছে জাতীয়তাবাদ। তাই যখন হাটের কাপড়-বিক্রেতাদের জোর করে অনেকটা বেশি দামি এবং ব্যবহারের অনুপযুক্ত স্বদেশী কাপড় বিক্রি করতে বাধ্য করা হয়, তার বিরোধিতা করে নিখিলেশ। নিখিলেশের বিপরীতে আসে সন্দীপ যে স্বদেশী আন্দোলনের অন্যতম স্থপতি হওয়া সত্ত্বেও ব্যক্তিগত অভ্যাসে বিলিতি দ্রব্যে আসক্ত।

রবীন্দ্র-উপন্যাসটিতে সন্দীপ অসম্ভব শীতল একজন মানুষ যে এক মুহূর্তের জন্য কোনও আবেগের কাছেই আত্মসমর্পণ করে না। তার প্রত্যেকটি পদক্ষেপ সুপরিকল্পিত। অপর্ণা সেনের ছবিতে কিন্তু ঠিক তেমনটা নয়। যে চরিত্রটি তার রাজনৈতিক মেরুকরণকে আমূল বদলে ফেলে পারিবারিক আনুগত্যের দায়ে, তার মধ্যে যান্ত্রিক শীতলতা থাকা অসম্ভব। সে প্রতি মুহূর্তে অপরাধবোধে ন্যুব্জ। রবীন্দ্রনাথের সন্দীপ বিমলাকে শুধুই ব্যবহার করে, অপর্ণা সেনের ছবিতে সন্দীপ বৃন্দার প্রতি আবেগপ্রবণও হয়। কিন্তু সে একজন আপাদমস্তক রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্খায় ভরা মানুষ। এই চরিত্রটির সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম প্রকাশগুলি অসম্ভব দক্ষতায় মনোজ্ঞ করে তুলেছেন যিশু সেনগুপ্ত।

Ghawre Bairey Aaj movie review নিখিলেশ ও সন্দীপ।

উপন্যাসের মতোই এই ছবিতেও নিখিলেশ সংশয়হীন, নিজের রাজনৈতিক বিশ্বাসের প্রতি দায়বদ্ধ। এই চরিত্রের রাজনৈতিক চেতনা ইস্পাতকঠিন, তাই সে কখনও উচ্চকিত নয়। তার এই আপাত-নৈঃশব্দ যে কাপুরুষতা নয়, তার দাঢ্যের বহিঃপ্রকাশ, উপন্যাসে তা বুঝে নিতে সময় লেগেছিল বিমলার। এই ছবিতেও বৃন্দার সময় লাগে কিন্তু এই উপলব্ধি পেরিয়ে বৃন্দার যে যাত্রা, তা নিয়েই এই ছবি। বৃন্দা বা বিমলার এই উত্তরণটি ছাড়া 'ঘরে বাইরে'-র সমসাময়িক অ্যাডাপ্টেশন সত্যিই খুব একটা প্রয়োজনীয় হতো না, আর্ট ফর দ্য আর্টস সেক হয়েই রয়ে যেত। বিমলা চরিত্রের উত্তরণই এই ছবির গন্তব্য যেখানে উগ্র ব্রাহ্মণ্যবাদী হিন্দু আগ্রাসনের বিরুদ্ধে উঠে দাঁড়ায় দলিত সমাজ, ভারতবর্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ। তুহিনা দাস অনবদ্য বৃন্দা চরিত্রে। বাংলা ছবিতে তুহিনার মতো অভিনেত্রীদের বড় প্রয়োজন। আর অনির্বাণ ভট্টাচার্য বরাবরই তাঁর সব চরিত্রেই নিখুঁত। এই ছবিও তার ব্যতিক্রম নয়।

আরও পড়ুন: এনএসডি-কে ন্যাশানাল স্কুল অফ টেলিভিশন বলতে ইচ্ছে করে: রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত

অত্যন্ত নান্দনিক উপস্থাপনা এই ছবির যা অপর্ণা সেনের সিগনেচার। পোশাকের রং থেকে টি-টেবিলে পড়ে থাকা পত্রিকা, প্রত্যেকটির ডিটেলিংয়ে তিনি বরাবরই সতর্ক। ছবির চিত্রগ্রাহক সৌমিক হালদার ও সম্পাদক রবিরঞ্জন মৈত্রের মতো দক্ষ পেশাদারদের সঙ্গতও খুব প্রয়োজনীয় ছিল। তেমনই প্রয়োজনীয় ছিল সাবর্ণী দাসের পোশাক পরিকল্পনা ও তন্ময় চক্রবর্তীর শিল্প নির্দেশনা। তবে যা ছাড়া এই ছবির আবেশ তৈরিই হতো না, তা হল ছবির সঙ্গীত পরিচালনা, যে দায়িত্বে ছিলে নীল দত্ত। ভারি সুন্দর এই ছবির গান ও আবহ। আর যে কোনও ভালো ছবিকে সম্পূর্ণ করেন পার্শ্বচরিত্রের অভিনেতা-অভিনেত্রীরা। বহু সম্ভাবনাময় ছবিকেই এই জায়গায় নড়ে যেতে দেখা গিয়েছে সাম্প্রতিককালে। কিন্তু অপর্ণা সেন তাঁর ছবির ক্ষেত্রে কখনও তেমনটা ঘটতে দেন না। পার্শ্বচরিত্রগুলিতে শ্রীনন্দা শঙ্কর, অনির্বাণ চক্রবর্তী, তনিকা বসু অত্যন্ত ভালো। আর সোহাগ সেন, বরুণ চন্দ বা অলকানন্দা রায়ের অভিনয় নিয়ে এই প্রজন্মের সমালোচকদের নতুন করে কিছু লেখার অবকাশই নেই। নতুন প্রজন্মের সুঅভিনেতা ঋতব্রত মুখোপাধ্যায় ছাড়া অমূল্য চরিত্রটি এত মায়াময় হতো না।

দেশের সমসাময়িক রাজনৈতিক আবহাওয়ায় যখন বহু পরিচালকই ছবিতে প্রত্যক্ষ রাজনৈতিক প্রসঙ্গ আনতে ভীত, সেখানে দাঁড়িয়ে বাংলার বাণিজ্যিক ছবির সবচেয়ে বড় প্রযোজনা সংস্থার পৃষ্ঠপোষকতাতেও এমন একটি ছবি অনেকটা শক্তি জোগাবে সমসাময়িক পরিচালক-চিত্রনাট্যকারদের।

Aparna Sen Bengali Cinema bengali films Bangla Movie Review
Advertisment