তথ্য বলে, এক আকাশ সম ভারতবর্ষের মধ্যে বৈচিত্র্যে ভরপুর। তার নানা ভাষা নানা মত এবং পরিধানের মধ্যে দিয়েই পরস্পরের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে পথ চলা। আর চিত্র বলে, ধর্মের মারপ্যাঁচে ভারতের একই বৃন্তে দুটি কুসুমের চিত্র নাকি হারিয়ে গেছে বহুদিন। সংবিধানে 'ধর্মনিরপেক্ষতা' শব্দটা জ্বলজ্বল হলেও সংখ্যালঘু এবং গুরু এই দুটি অর্থ এখন মারাত্মকভাবে প্রাসঙ্গিক। বহু ধর্মের মানুষের বাস এই বাংলায়, বাঙালিয়ানাও রয়েছে সবার মধ্যে।
Advertisment
পরিচালক ইন্দ্রনীল সরকারের 'মাইনরিটি ডায়েরি'র শটের পর শট কিন্তু এমনই কিছু বলবে। নতুন তথ্যচিত্র নিয়ে বেজায় পরিশ্রম এবং হাজার গবেষণার পর অবশেষে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মাইনরিটিদের নিয়ে কাজ করার। তবে এখানেই রয়েছে ছোটোখাটো কিছু ভ্রান্ত ধারণা, সেগুলি কীরকম!
ইন্দ্রনীল সরকার
সংখ্যালঘু কিংবা মাইনরিটি বলতেই শুধু ইসলামের কথাই সকলের মাথায় আসে। তাদের সঙ্গে সঙ্গে বাংলার বুকে এত বছর ধরে থেকে যাওয়া খ্রিস্টান হোক কিংবা বৌদ্ধ অথবা জৈন এদের কথা কজনেই বা মনে রাখেন? তাদের কথা বলার প্রয়োজনও মনে করেন না কেউই। মানুষের মধ্যে বিভেদ, জাত-পাত নিয়ে সংগ্রাম প্রতিনিয়তই মানুষের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি করছে। পরিচালকের ইচ্ছে এই নিয়েই সম্পূর্ণ ছবিটি ফুটিয়ে তুলবেন।
Advertisment
বাংলার নানান জেলাস্তরে বাঁকুড়া, পুরুলিয়া বিভিন্ন জায়গায়, এমন অনেক মানুষ আছেন যারা ধর্মে খ্রিস্ট, তবে আদব কায়দায় সম্পূর্ণ বাঙালিয়ানা ঘিরে রেখেছে তাঁদের। ভিন্ন ধর্মের পরেও নিজেদেরকে বাঙালি বলেই পরিচয় দেন তারা, বলা উচিত তাতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। তাদের জীবন যাত্রা, রীতি নিয়ম এবং সবথেকে বড় ব্যাখ্যায় তাঁরা সকলেই আপামর ভারতের অধিবাসী, ওরা ভারতীয়- পরিচালকের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ক্যামেরার শট ফোকাস কিন্তু এই বিষয়েই।
প্রত্যেকটি ধর্মের মানুষের অবদান কিন্তু কোনওভাবেই পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে কম নেই। কি শিখ কি বৌদ্ধ কি জৈন বা খ্রিস্টান, নিজেদের সাধ্যমতো ভালবাসা দিয়ে বাংলার কোনায় কোনায় তারা কাজ করে চলেছেন প্রতিনিয়ত যার খবর অনেকেই রাখেন না। তাদের আর্থসামাজিক উন্নয়ন কিংবা সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট সবদিকেই দৃষ্টিপাত করেই নির্মাণ করা হবে এই তথ্যচিত্র।
শুট শুরু হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। কৃষ্ণনগর চার্চ থেকে পুরুলিয়া চার্চ এবং লেপ্রসি মিশন, তার সঙ্গে বাঁকুড়ার শামাদি অঞ্চলে পরিচালক নিজ দায়িত্বে একেবারেই অটল এবং অনড়। আগামী আট থেকে নয় মাস ধরে গ্রাম বাংলার নানান স্তরের গল্প এবং চিত্র নিয়েই নির্মিত হবে এই তথ্যচিত্র। একে একে নানান সম্প্রদায় এবং তাদের বাঙালিয়ানার অন্তর্ভুক্তির ছোট ছোট দৃশ্যপট নিয়েও 'মাইনরিটি ডায়েরি' তুলে ধরবে নানান তথ্য!
প্রসঙ্গত, পরিচালক ইন্দ্রনীল সরকার একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন তথ্যচিত্র নির্মাতা। পূর্বে মণিপুরের “আয়রন লেডি” ইরম চানু শর্মিলার উপর তিনি নির্মাণ করেন “দ্য টার্নিং পয়েন্ট” নামক একটি তথ্যচিত্র। যেটি প্রচুর আন্তর্জাতিক সম্মাননা পেয়েছে। মাদক দ্রব্য সংক্রান্ত তৃতীয় বিশ্বে ঘটে চলা রাজনীতির উপর ভিত্তি করে তৈরি, ইউটোপিক অ্যাসাইন। হাফ মুন এন্টারটেইনমেন্ট-এর পক্ষ থেকে শুভাশিস ও জয়শ্রী গাঙ্গুলির নিবেদন এই তথ্যচিত্রটি।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন