/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2022/01/onir.jpg)
সমকামী আর্মি অফিসার নিয়ে ওনিরের ছবি
এক সমকামী সেনাআধিকারিকের জীবনকাহিনি অবলম্বনে সিনেমা তৈরি করার পরিকল্পনা করেছিলেন ওনির (Onir)। তবে সেই সেই ছবি তৈরির আগেই প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের রোষানলে বাঙালি পরিচালক। ওনিরের আগামী ছবি 'উই আর' (We Are)-এ আর্মি অফিসারের সমকামীতা দেখানো যাবে না বলে সাফ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের তরফে।
মেজর জে সুরেশ নামে এক সমকামী সেনাআধিকারীকের জীবনের সত্যি ঘটনার প্রেক্ষাপটে চিত্রনাট্য সাজিয়েছিলেন ওনির। তবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের কাছে সেটা জমা দেওয়ার পরই তাতে কোপ পড়ে। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-এর কাছে এক এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে ওনির জানান, "আর্মি মেজর সুরেশের এক ইন্টারভিউ দেখার পরই, তাঁর জীবনকাহিনি অবলম্বনে ছবি তৈরির ভাবনা আসে। বছর খানেক আগেই ওই সমকামী অফিসার ভারতীয় সেনাবাহিনি থেকে পদত্যাগ করেছেন। ২০১৮ সালে যখন সুপ্রিম কোর্ট সমকামীতা নিয়ে যাবতীয় ছুঁৎমার্গ বর্জন করার নির্দেশ দিয়েছে, তখন আজও কোনও সমকামী ভারতীয় সেনাবাহিনিতে যোগ দিয়ে নিজের দেশের সেবা করার সুযোগ পান না। সেই ভাবনা থেকেই 'উই আর'-এর গল্পের শুরুটা ভেবেছিলাম।"
মোট ৪টে গল্প নিয়ে 'উই আর' ছবিটা। প্রতিটা প্লট একে-অপরের সঙ্গে জড়িত। বন্ধু দেবদত্ত পট্টনায়কের সঙ্গে সিনেমার কনসেপ্ট আলোচনা করে চিত্রনাট্যের কাজে হাত দেন ওনির। প্রতিটা গল্পেই সমকামীতা দেখানো হয়েছে। সুপ্রীম কোর্টের রায়ের পর রূপান্তরকামী কিংবা সমকামী জুটিদের নিয়ে সমাজের ধ্যান-ধারণা কতটা বদলেছে, সেসবই ছিল ছবির প্রতিপাদ্য বিষয়। কিন্তু নয়া আইন অনুযায়ী ভারতীয় সেনা বিষয়ক কোনও ছবি বানালে আগে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের থেকে অনুমতি নিতে হয়। গত ডিসেম্বর মাসে সেই আইন অনুসারেই নিজের ছবির স্ক্রিপ্ট জমা দিয়ে NOC'র জন্য আবেদন জানান ওনির। এরপরই বুধবার ই-মেল মারফৎ কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে আপত্তি জানানো হয়।
<আরও রড়ুন: ‘পুষ্পা’র গানে নেচে বাজিমাত ডেভিড ওয়ার্নারের! ভিডিও দেখে কী বলছেন আল্লু অর্জুন?>
প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফে ছবির গল্প নাকচ করে দেওয়ার পর ওনিরের মন্তব্য, "আমি তো কাউকে অসম্মান করতে চাইনি। আমার ছবিতে কোনও খলচরিত্র থাকে না। গোটা বিষয়টাকেই আবেগের ধারায় ধরতে চাই। 'উই আর' -এর গল্পের ক্ষেত্রেও সেটার অন্যথা হয়নি। ইন্ডিয়ান আর্মি নিয়ে কোনওরকম সমালোচনা না করেই কয়েকটা ঘটনা তুলে ধরেছি চিত্রনাট্যে। গতবছর প্রতিরক্ষা মন্ত্রক যে নির্দেশ জারি করেছেন, যে সেনা বিষয়ক কোনও গল্প বা চরিত্র সাজানো হলে আগে তাঁরা চিত্রনাট্য পড়ে দেখবেন, তাতে আমার মনে হয় পরিচালকদের স্বাধীনতে ক্ষুণ্ণ হয় কোথাও গিয়ে। ভারতের মতো গণতান্ত্রিক একটা দেশে কেন একজন সৃজনশীল ব্যক্তির স্বাধীনতা থাকবে না? কেন প্রশ্ন তুলতে পারবে না তাঁরা?"
ওনির আরও জানান, ২০১১ সালে যখন এক সিনেমার গল্পে দেখিয়েছিলাম যে, একজন নাগরিক পুলিশ অফিসারের কাছে হেনস্তার শিকার হয়েছেন, সেই ছবি জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিল সেরা হিন্দি ফিচার ফিল্ম হিসেবে। কিন্তু ২০২২ সালে এসে একজন সমকামী আর্মি অফিসারকে নিয়ে সিনেমার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হল! ভাবতেও খারাপ লাগে। আমাকে বলা হয়েছে, এটা আইনবিরুদ্ধ। কলোনিয়ার আইনের চোখে হয়তো সমকামীতা বেআইনি হতে পারে, কিন্তু আজকে বিশ্বের ৫৬টা দেশের সেনাবিভাগে সমকামী মানুষদের চাকরি দেওয়া হচ্ছে। ঠিক এই কারণেই আমাদের দেশের মহিলারাও সেনাবিভাগে কম যোগদান করেন। এটা পুরুষতান্ত্রিক সমাজের মজ্জাগত সমস্যা ছাড়া আর কিছুই নয়।
খুব শিগগিরিই পিটিশন দাখিল করতে চলেছেন বলে জানালেন ওনির। তাঁর কথায়, "যত সময় লাগে লাগুক। আগামী মে মাসেই কাশ্মীর ও কলকাতায় সিনেমার শুটিং হবে। অতি সত্ত্বর এই একজন আইনজীবী নিয়োগ করব।"
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন