Advertisment
Presenting Partner
Desktop GIF

উত্তমদা-অনুপদার জন্য সাবিত্রীদির রান্না করা খাবার নিয়ে চলে গেলেন সমিত ভঞ্জ: প্রভাত রায়

জুহু বিচে সিগারেটের প্যাকেটে লেখা গান কেন প্রভাতের ছবির জন্য বিনামূল্যে গেয়েছিলেন লতা মঙ্গেশকর? জানালেন পরিচালক।

author-image
Sandipta Bhanja
New Update
prabhat roy

প্রভাত রায়

কমার্শিয়াল হিট ছবির পাশাপাশি 'শ্বেতপাথরের থালা', 'লাঠি'র মতো ছবির জন্য জাতীয় পুরস্কার এসেছিল প্রভাত রায়ের ঝুলিতে। শক্তি সামন্তর সহকারী পরিচালক থেকে বাংলা সিনে-ইন্ডাস্ট্রির মোড় ঘোরানোয় তাঁর অবদানও নেহাত কম নয়। মুম্বই থেকে কলকাতায় এসে কীভাবে টলিউডের সিনে-ব্যবসা ঘুরিয়েছিলেন প্রভাত রায়? নস্ট্যালজিয়া ঘেঁটে স্টুডিওপাড়ার 'পুরনো সেই দিনের কথা' শোনালেন 'ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা'কে। লিখছেন সন্দীপ্তা ভঞ্জ

Advertisment

কলকাতার ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সবার মধ্যে আত্মিক টান দেখেই বম্বে থেকে চলে এসেছিলেন প্রভাত রায়। বললেন, "প্রথমদিন যখন শক্তিদা (সামন্ত) আমাকে উত্তমদার (কুমার) সঙ্গে দেখা করতে পাঠালেন, টেকনিশিয়ান স্টুডিওতে ঢুকেই দেখলাম, চাতালের ওপর একগামলা মুড়ি রেখে অনিল চট্টোপাধ্যায়, উত্তম কুমার সবাই একসঙ্গে বসে মুড়ি খাচ্ছেন। বম্বেতে পেশাদারিত্বটা আগাগোড়াই বেশি। শুটিং শেষ হলে প্যাক-আপ বলার সঙ্গে সঙ্গেই পাশের লোককে আর পাওয়া যেত না। এই হয়তো অন্য কোথাও কাজ করতে চলে গেলেন।"

বাঙালি মানেই তো আড্ডা, খাওয়া-দাওয়া, তা সে সিনেমার সেট হোক কিংবা পাহাড়-জঙ্গল। তখনকার স্টুডিওপাড়ার শুটিংয়ের দিনগুলোই ছিল আলাদা। সকলে একসঙ্গে বসে খাওয়া হত লাঞ্চ ব্রেকে। নানা মজার ঘটনাও ঘটত। সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় যে দক্ষ অভিনেত্রীর পাশাপাশি ভাল রাঁধুনিও , প্রভাত রায়ের স্মৃতিচারণায় উঠে এল সেসব কথাও। আড্ডার মাঝেই বললেন, "'আমার শপথ' ছবির শুটিং করার সময় অনুপদা (কুমার) প্রায়ই সাবিত্রীদিকে ফরমায়েস করতেন, কালকে এই মাছটা রান্না করে নিয়ে আসবি। কিংবা মাংসটা এইভাবে রান্না করে নিয়ে আসবি। তো সাবিত্রীদিও আমাকে জিজ্ঞেস করতেন, প্রভাত কী খাবে তুমি? আমি খানিক রসিকতা করেই বলতাম- উত্তমদা যা খান, আমিও তাই খাব। সত্যি সত্যিই উত্তমদা যা পছন্দ করতেন সেসব রেঁধে নিয়ে আসতেন তিনি। তেল বেগুনের মতো নিরামিষ রান্না থেকে শুরু করে নানা আমিষ পদ থাকত মেন্যুতে। একবার তো সমিত ভঞ্জ সাবিত্রীদির আনা পুরো টিফিন কেরিয়ারটাই টেনে নিয়ে চলে গেল নিজের ঘরে। সঙ্গে এও ঘোষণা করে গেল যে, আজকে আমি ছাড়া আর কেউ এই খাবার খাবে না।"

বাংলার পাশাপাশি হিন্দিতেও তিন-তিনটে ছবি করেছেন প্রভাত রায়। 'জিন্দেগানি', যে সিনেমার প্রযোজক ছিলেন রাখী গুলজার। অভিনয় করেছিলেন, রাখি নিজে এবং মিঠুন চক্রবর্তী, রতি অগ্নিহোত্রী, আমজাদ খান। মিউজিক দিয়েছিলেন আর ডি বর্মন। বাংলা ছবি অঞ্জন চৌধুরির 'লাল গোলাপ' থেকে 'হাম ইন্তেজার করেঙ্গে' হিন্দিতে বানিয়েছিলেন। যেখানে মিঠুন, শক্তি কাপুর, পদ্মিনী কোলাপুরী মতো তারকারা ছিলেন। আর এই ছবিতে মিউজিক করেছিলেন বাপ্পি লাহিড়ী। তারপর নতুন ছেলেমেয়েদের নিয়ে 'বন্ধন আঞ্জানা' করেছিলেন। সেটাতেও বাপ্পিদা মিউজিক করেছিলেন।

সেইসময়ে প্রভাত রায় বম্বে-কলকাতা দৌঁড়োদৌড়ি করছেন। তবে 'প্রতিকার' যখন ২৫ সপ্তাহ ধরে চলল, তখন প্রোডিউসার নিজে পরিচালককে ফোন করে বলেছিলেন, "তুই যে কেন বম্বেতে পড়ে আছিস কে জানে! কলকাতায় চলে আয় তোর জন্য সিনেমার লাইন লেগে যাবে। সত্যিই তাই! প্রতিকার যখন ৫০ সপ্তাহ চলল, সেদিন সিনেমার সাকসেস পার্টিতে একসঙ্গে ১১টি ছবি সাইন করলাম", জানালেন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত পরিচালক।

একবার সুরসম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকর প্রভাত রায়ের ছবির জন্য বিনামূল্যে গান গেয়েছিলেন। সেটা ছিল পরিচালক হিসেবে তাঁর প্রথম ছবি। তার আগে অবধি খ্যাতনামা পরিচালক শক্তি সামন্তর ডান হাত ছিলেন প্রভাত। সামন্তর সহকারী হিসেবে বহু সুপারহিট সিনেমার সহ-পরিচালনা করেছেন তিনি।

publive-image

কেন লতা বিনামূল্যে গান গেয়েছিলেন প্রভাত রায়ের জন্য? পরিচালকের মুখ থেকেই শোনা গেল সেকথা। বললেন, "একদিন জুহু বিচে গৌরীদার (গৌরী প্রসন্ন মজুমদার) সঙ্গে বেড়াতে গিয়েছি। হঠাৎ বলে বসলেন, প্রভাত তোমার কাছে কাগজ আছে? আমি বললাম, বেড়াতে এসে কাগজ সঙ্গে রাখব কেন? তখনই সমুদ্র সৈকতে পড়ে থাকা সিগারেটের প্যাকেটে নজরে পড়ল গৌরীদার। অমনি নির্দেশ এল, দেখ তো এই প্যাকেটটা বোধহয় খালি পড়ে আছে। তো সেই প্যাকেট ছিঁড়ে গৌরীদা প্রথম মঙ্গলদীপ জ্বলে.. গানটার মুখরা ঝলপট লিখে ফেললেন। 'প্রতিদান' সিনেমার গান। সেই গান লতা মঙ্গেশকরকে দিয়ে গাওয়ায় বাপ্পি। তো রেকর্ডিং স্টুডিওয় যখন দেখা হল, তখন লতাজি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন- তুমি এখানে কী করছ? বাপ্পি-ই তখন বলল যে, এটা প্রভাতের পরিচালনায় প্রথম ছবি। তো উনি আমার কাছ থেকে গল্পটা জানতে চাইলেন। শুনে উনি খুব প্রশংসাও করলেন। রেকর্ডিং শেষ হওয়ার পর যখন প্রযোজক লতাজিকে টাকা দিতে গেলেন, উনি বললেন- না, টাকা আমি নেব না। একজন অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর যাকে আমি চিনি, সে আজকে প্রথমবার নিজের ছবি পরিচালনা করছে। তাই এই টাকা নেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়।"

ইন্ডাস্ট্রির এই প্রজন্ম নিয়ে প্রভাত রায়ের আক্ষেপ, "এখনকার ছেলেমেয়েরা ট্যালেন্টেড হলেও অতটা সম্মান দিতে জানে না। শেষের দিকে সিরিয়াল করতে গিয়ে টের পেয়েছিলাম যে এখনকার প্রজন্মের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া মুশকিল! তাই এমন আচরণ দেখে দেখে খারাপ লাগত। এখন সবই সোশ্যাল মিডিয়ায়।"

ইন্ডাস্ট্রির তারকাদের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হওয়া প্রসঙ্গে প্রভাতবাবুর মন্তব্য, "আমাদের সময় এত রাজনীতি ছিল না। কে কংগ্রেস করে, কে সিপিএম করে.. ওকে নেব না, ওর সঙ্গে কাজ করব না, এইধরণের কোনও ব্যাপার ছিল না। জিৎ কিংবা ঋতুপর্ণা যেমন কোনও লবি বা দলের সঙ্গে যুক্ত নয়। নিজেদের মতো করে কাজ করছে।"

এখন কেন আর পরিচালকের আসনে দেখা যায় না প্রভাত রায়কে? সেই উত্তরও দিলেন তিনি। তাঁর কথায়, "একটা সময়ে মানুষকে থামতেই হয়। যখন ইচ্ছে ছিল চুটিয়ে কাজ করেছি। কিন্তু এখন আর শরীর সায় দেয় না। পায়ের ব্যথা নিয়ে খুব দৌঁড়ঝাপ করতে পারি না। তাছাড়া, এই প্রজন্মের সঙ্গে মানিয়ে কাজ করতেও ইচ্ছে করে না। তবে এই কাজ না করা নিয়ে কিন্তু আমার কোনও আক্ষেপ নেই। ভালই আছি।"

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

tollywood bengali films Lata Mangeshkar Uttam Kumar Entertainment News Prabhat Roy Anup Kumar Sabitri Chatterjee
Advertisment