ছেলেমেয়েরা পাড়ি দিয়েছে বিদেশে, ফেরার সময় হয় না আর। বাড়িতে বাবা মা এখন একাই থাকেন। তাঁদের দেখভালে যেন খামতি না হয়, গ্রাম-মফস্বল এবং শহরাঞ্চল থেকে প্রতিদিন আয়া হিসেবে কাজ করতে আসেন অনেকেই। তাঁদের খোঁজ কেউ রাখে না, তাঁদের প্রতিদিনের জীবন কেমন কাটছে সেই নিয়েও হুঁশ নেই অনেকের। শুধুই পরিষেবা পাওয়া - তাঁদের ভাল থাকার পথে কেউ খবর রাখেন না। বিশেষ করে, করোনা আবহে নিজেদের প্রাণের ঝুকি নিয়েই প্রতিনিয়ত কাজ করে গেছেন তাঁরা। সুস্থ করে তুলেছেন অনেক মানুষকে- আয়া পরিষেবা নিয়ে এই প্রথমবার ভারতের বুকে এক অসামান্য তথ্যচিত্র বানিয়েছেন পরিচালক তন্বী চৌধুরী। নাম মিরাস মাইন্ডারস ( Mira's Minders )।
Advertisment
যেহেতু তথ্যচিত্র, তাই সাক্ষাৎকারের মাধ্যমেই তাঁদের জীবনযাত্রা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। একজন মানুষ যিনি অন্যের বাড়িতে পরিশ্রম করে দুটো টাকা রোজগার করেন, অসুস্থ রোগীকে সুস্থ করে তোলেন তাঁদের সঙ্গে সামাজিক ব্যাবহার ঠিক কেমন হয়, আদৌ সম্মান পান কি না? সেই নিয়েই সম্পূর্ণ তথ্যচিত্র। কিন্তু হঠাৎ এমন কোনও বিষয় নিয়ে ছবি বানাবার কথা ভাবলেন কেন পরিচালক? প্রসঙ্গে তিনি জানান জন্মসুত্রে ভারতীয় তবে আমেরিকার বাসিন্দা তিনি, এখন সেখানের এক কলেজেই অধ্যাপনা করেন কিন্তু মন পড়ে থাকে ভারতে। বাবা মা যে কলকাতায় থাকেন, তাঁদের দেখাশোনা করতেই বাড়িতে লোক রেখেছিলেন তন্বী। মায়ের নাম যেহেতু মীরা সেই সাপেক্ষে ছবির নাম দিয়েছেন মিরাস মাইন্ডারস অথবা যারা মীরার সঙ্গে ছিল।
সিনেমার প্রেক্ষাপট জুড়ে একজন আয়া তাঁর জীবন কাহিনী, তাঁদের প্রতি মানুষের আচরণ, সুখ দুঃখ যন্ত্রণা প্রকাশ পেয়েছে। সিনেমার তিনটি ভাগ, অর্থাৎ সুমতি - দুর্মতি - শান্তমতি, পরিচালকের বক্তব্য সবাই সমান হয় না। সবার বাঁচার ভঙ্গি এক নয়। সুমতি অর্থাৎ, যিনি বিনা প্রতিবাদে সমাজের ঘেরাটোপে সবকিছু মেনে নেন। অন্যায় হলেও আওয়াজ ওঠান না। কুমতি অর্থাৎ ধূর্ত কিংবা যারা মানুষকে ঠকিয়ে সবকিছু আদায় করেন। আর রইল শান্তমতি অর্থাৎ যিনি প্রতিবাদী। অন্যায় হলে আইনি পদক্ষেপ থেকে সবকিছুই তাঁকে দিয়ে সম্ভব কিন্তু মানুষ হিসেবে একেবারে ভরসা যোগ্য। ২০১৯ সালে এই ছবি শুট করা হয়েছে, স্টেজ শো করে দেখানো হয়েছে। সম্পূর্ণ তথ্যচিত্রটি তিনটি সিরিজের মধ্যে বিভক্ত, এটি প্রথম ভাগ। এর পরবর্তীতে যেটি আসবে তাতে টেলি জগতের অনেকেই অভিনয় করবেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম অনন্যা চট্টোপাধ্যায়।
Advertisment
তথ্যচিত্র হলেও পরিচালকের মতামত এতে মানবিকতার জায়গা অনেক বেশি। কারণ তাঁরা সবসময় আমার আপনার বাড়িতে থেকে কাজ করছেন, বদলে অন্যদের থেকে সম্মান কিংবা ভালবাসা কিছুই পান না। অল্প কিছু ভুল হলেই হাজার কথা সহ্য করেন শুধু রুটি রুজির প্রয়োজনে। বর্তমান সময়কে মাথায় রেখেই এই অসংগঠিত কর্ম সংস্থানকে নিয়ে গবেষণা করা হয়েছে। এই তথ্যচিত্র দেখবার পর মানুষের মনে অল্প হলেও যেন কিঞ্চিৎ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, সামগ্রিক চেষ্টা তবেই সফল হবে।