Bengali Television, Non-payment: টেলিজগতে অভিনেতা-অভিনেত্রীর বকেয়া পারিশ্রমিকের ইস্যুটি লোকসভা নির্বাচনের আবহে কিঞ্চিৎ আড়াল হয়ে গিয়েছিল। অভিনেতা শুভ রায়চৌধুরীর ধারাবাহিক ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত আবারও সামনে আনল টেলিপাড়ার সেই সমস্য়াকে, যার কোনও সমাধান এখনও হয়নি। কালারস বাংলা-র ধারাবাহিক, 'মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্য'-তে বদলে গিয়েছে মুখ। এই সপ্তাহ থেকেই দর্শক এই চরিত্রে আর শুভ রায়চৌধুরীকে দেখতে পাবেন না। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে শুভ জানালেন, একমাস আগেই তিনি এই স্বেচ্ছায় এনওসি দিয়েছিলেন চ্য়ানেল কর্তৃপক্ষকে।
পূর্ববর্তী প্রযোজনা সংস্থার পক্ষ থেকে পারিশ্রমিক হিসেবে বিপুল পরিমাণ টাকা বকেয়া রয়েছে অভিনেতার। সেই বকেয়া পারিশ্রমিকের ক্ষোভেই ধারাবাহিকের কাজটি ছেড়ে দিয়েছেন শুভ এমনটাই জানিয়েছেন তিনি এবং চ্যানেলের প্রতিনিধি। ১৫ মার্চ পর্যন্ত এই ধারাবাহিকের প্রযোজনার দায়িত্বে ছিল দাগ সি মিডিয়া। আর্টিস্ট ও টেকনিসিয়ানদের পারিশ্রমিক বকেয়া রাখার অসন্তোষ যখন তীব্র হয়, তখন চ্যানেলের হস্তক্ষেপে প্রযোজনার দায়িত্বটি হস্তান্তরিত হয়ে যায় সুরিন্দর ফিল্মস-এর কাছে। অভিনেতা শুভ রায়চৌধুরী জানিয়েছেন যে সুরিন্দর ফিল্মস-এর সঙ্গে যতটা সময় তিনি কাজ করেছেন, পারিশ্রমিক নিয়ে কোনও সমস্যা হয়নি। কিন্তু তার পরেও তিনি বাধ্য হয়েছেন ধারাবাহিকটি ছাড়তে কারণ পূর্ববর্তী প্রযোজনা সংস্থার কাছে তাঁর তিন মাসের টাকা এখনও বাকি এবং সেই টাকা পুনরুদ্ধারের কোনও আশা তিনি দেখতে পাচ্ছেন না।
আরও পড়ুন: বকেয়া টাকা কবে পাবেন শিল্পীরা! কী বললেন প্রসেনজিৎ?
''আমরা শিল্পীরা কাজ করি প্যাশন থেকে, অনেক সময়েই অনেক অসুবিধার সঙ্গে আমরা মানিয়ে নিই। আমিও সেই কথা মাথায় রেখে, পারিশ্রমিক না পেয়েই কাজ করে গিয়েছি। কিন্তু পারিশ্রমিক তো আমার প্রাপ্য। এমন তো নয় যে বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করার কথা ছিল। তার পরেও অপেক্ষা করেছি, কিন্তু আর কতদিন ঠিক কতদিন অপেক্ষা করতে হবে, তা কেউ জানে না'', ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে জানালেন শুভ রায়চৌধুরী।
'মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্য' ধারাবাহিকে পূর্ণবয়স্ক মহাপ্রভু-র চরিত্রে শুভ রায়চৌধুরী কাজ করতে শুরু করেন ২০১৮ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে এবং একমাস আগে তিনি চ্য়ানেল কর্তৃপক্ষের কাছে এনওসি জমা দিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে জানিয়ে দেন যে তিনি আর ওই চরিত্রে অভিনয় করতে ইচ্ছুক নন। ওই ধারাবাহিকের কার্যনির্বাহী প্রযোজক শ্রিয়া বসুও জানিয়েছেন যে শুভ রায়চৌধুরীর এই সিদ্ধান্তের মূল কারণ, বকেয়া পারিশ্রমিকের ক্ষোভ।
''আমি কোনও দিন কোনও চরিত্র নিয়ে আপোষ করিনি। একজন অভিনেতা হিসেবে মনে হয়েছে যে এই পরিবেশেও একজন শিল্পী তার কাজের মানের সঙ্গে আপোষ করতে পারে না। তাই আমি 'মহাপ্রভু' ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি'', জানালেন শুভ। গত ১৩ মে শেষ শুটিং করেছেন তিনি। তাঁর নোটিস পিরিয়ড কার্যকরী ছিল ৩১ মে পর্যন্ত কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই নতুন অভিনেতার কাস্টিং সম্পূর্ণ হওয়ায় তাঁকে নিয়ে পরবর্তী এপিসোডের শুটিং শুরু হয়েছে।
আরও পড়ুন: চল্লিশ পেরিয়ে কেমন আছেন ‘তেরে নাম’-নায়িকা?
যে কোনও ধর্মীয় গুরু বা সাধকের চরিত্রকে খুবই সম্মানের চোখে দেখা হয় অভিনয় জগতে। বিশেষ করে শ্রীচৈতন্য়দেব শুধুমাত্র ধর্মীয় নয়, বাংলার সমাজ-রাজনৈতিক ইতিহাসে একজন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। এমন একটি চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পাওয়াও সহজ নয়। এর পরেও যখন অভিনেতা এমন একটি সিদ্ধান্ত নেন, তখন বুঝতে হয় তিনি কতটা বিচলিত এবং বীতশ্রদ্ধ।
''আমার ছাড়তে ইচ্ছে করেনি। কিন্তু অর্থ ছাড়া কি চলবে? চ্যানেল কর্তৃপক্ষও আমার এই সমস্যাটা বুঝেছেন। আমি সোজাসাপ্টা কথা বলি, পক্ষপাতদুষ্ট নই'', বলে চলেন অভিনেতা, ''চ্য়ানেলের প্রতিনিধিরাও অত্যন্ত সহানুভূতিশীল বিষয়টা নিয়ে কিন্তু মুশকিল হল সমস্যার কোনও সুরাহা হয়নি। এমন একটা অর্থনৈতিক সঙ্কট তৈরি হয়েছে টেলিজগতে যে এর পরে ভয় নিয়ে ক্য়ামেরার সামনে দাঁড়াতে হবে অভিনেতা-অভিনেত্রীদের, নির্দিষ্ট সময়ে পারিশ্রমিক না পাওয়ার ভয়! ভয় নিয়ে কাজ করলে কাজের মান খারাপ হতে বাধ্য। আর কাজের মান খারাপ হওয়া মানে দর্শক ভাল জিনিস থেকে বঞ্চিত হবেন। ''