রাজনীতি কি শুধু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরাই করতে পারেন? একেবারেই না! রাজনীতির রেশ থাকতে হয় মনে এবং অবশ্যই পরিচালককে বাঁধতে হয় ঠাসা একটা গল্প। রাজনীতির সঙ্গে বাংলা যেমন আপাদমস্তক জড়িয়ে তেমনই এই ছবির সঙ্গেও কিন্তু দিতিপ্রয়া ভয়ঙ্কর ভাবে জড়িয়ে। অর্থাৎ, নিজের খোলস ছেড়ে বেরিয়ে রাশি বন্দোপাধ্যায় হয়ে ওঠার গল্পটা মোটেই সহজ ছিল না। রাজনীতির প্রাক্কালে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার সঙ্গে খোশমেজাজে দিতিপ্রিয়া রায়।
খুব ব্যস্ত তো?
আর কি বলব, সামনে পরীক্ষা, শেষ সেমেস্টার! উফ! তাঁর সঙ্গে ছবির কাজ। আমিই জানি।
অভিজ্ঞতা কেমন?
বলতে পারো, রাসমণির পর এমন একটা চরিত্র করলাম যে দিতিপ্রিয়ার থেকে একদম আলাদা। আমি আর পাঁচটা মেয়ের সঙ্গে ওঁর মিল পাই না। কোনও রেফারেন্স পাইনি। এছাড়া তাবড় তাবড় সব অভিনেতাদের সঙ্গে বলতেই পারো, এটা একটা অন্যরকম অভিজ্ঞতা।
বর্তমানের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে কি মাথায় রেখেই এটা বানানো?
এটা যদি প্রথম থেকেই মনে হত, তাহলে তো অনেকেই একথা বলত যে হ্যাঁ, বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে মানুষ মিল খুঁজে পাচ্ছে। সমস্তটাই আমাদের পরিচালকের কল্পনাপ্রসূত বিষয়। ওর মাথা থেকেই এসব বেড়িয়েছে। হ্যাঁ, এটা বলতে পারি যে আমরা যেখানে বাস করি সেখানের কিছু ইনফ্লুয়েন্স তো থাকবেই। আমরা তো আমাদের জায়গায় সঙ্গে আমেরিকা-ব্রিটেনকে মেলাতে পারব না।
সিনেমাটিক অ্যাঙ্গেলে 'রাজনীতি', মানুষ কতটা বিশ্বাস করবে?
এই ছবিটায় জানো তো, পুরোদস্তুর রাজনীতি দেখানো হয়েছে। রাজনীতিবিদদের পলিটিক্স থেকে শুরু করে, সাধারণ মানুষ, বাড়ির ভিতরে বাইরে সর্বত্র রাজনীতি দেখানো হয়েছে। প্রতিটা ক্লাসের মধ্যে রাজনীতি কী করে হয় সেটা দেখানো হয়েছে। আমার মনে হয়, মানুষের কাছে ধরণ একটু হলেও পরিষ্কার হবে।
বিশ্বাস করো যে ইন্ডাস্ট্রিতে এবং আমাদের রোজকার জীবনে অনেক কিছু নিয়ে রাজনীতি হয়?
নিশ্চয়ই চলে। প্রত্যক্ষ ভাবে বলব না আমি যে রাজনীতির শিকার হয়েছি। তবে, আমার আড়ালে কি হয়নি? অবশ্যই হয়েছে। আমরা প্রত্যেকে এর শিকার, কোনও না কোনওভাবে। কিন্তু যেহেতু আমি চোখে দেখিনি, আমার কাছে প্রমাণ নেই, আর তাঁরা এতটাই ভাল রাজনীতিবিদ যে বিষয়টা আমি অবধি আর পৌঁছায় নি... ( হাসি )।
ছোট বয়সে ইন্ডাস্ট্রিতে আসার সুবাদে কি এই সমস্যা কম এসেছে?
একেবারেই না! আমার কাজ যারা দেখে তাঁরা আমার খুঁত ধরতে খুব ভালবাসে। আমায় রীতিমতো বলে তাঁরা যে, এটা ভাল হয়নি। এবং আমি সেটা খুব স্বাভাবিকভাবেই নিই। নাহলে এগোব কী করে? আমায় তো আমার ভুলটা বলতেই হবে।
এখন তো বিনোদনের সঙ্গে রাজনীতির অনেক সংযোগ, তোমার কি মনে হয় এটা একটা শিল্পকে আঘাত করে?
না! আমার সেটা একদম মনে হয়নি বিশ্বাস করো। এমন অনেকেই আছেন যারা দলীয় রাজনীতি করেন। নির্দিষ্ট রং লেগে গিয়েছে তাঁদের নামের সঙ্গে। তবে, আমি এমনও দেখেছি যখন তাঁরা শুটিং ফ্লোরে থাকে তাঁরা গলায়-গলায় বন্ধু। তখন পলিটিকাল কোনও আলোচনা আসে না। আমার মনে হয়, দুটো আলাদা জগৎ এবং আলাদা পেশা। যখন সিনেমা করছ তখন সিনেমা আবার যখন রাজনীতি তখন তারা রাজনীতি করছে। একসঙ্গে সেই খিদেটা না থাকলে, সেই যৌথভাবে কাজ করার প্যাশন না থাকলে একটা ভাল প্রজেক্ট নামানো খুব চাপ।
দিতিপ্রয়া কলেজে রাজনীতি করেছে কোনওদিন?
একেবারেই না! ( হাসি ).. আমি তো দূরে থাকি। আর তাছাড়া জোরাজুরি করেও না। আর ভবিষ্যতেও না, আমি সক্রিয় রাজনীতি জিনিসটায় আগ্রহী না। আপাতত কাজেই ফোকাস থাকবে।
ইন্ডাস্ট্রিতে গদি দখলের লড়াইয়ে কতটা এগোলে?
ইন্ডাস্ট্রিতে গদি হয় কিনা আমি আজও বলতে পারব না গো। আমি এটুকু জানি, কাজটা করে যেতে হবে। আমার সবটা দিয়ে কাজ করতে হবে। এখানে আমার কোনও প্রতিযোগী নেই। আর যদি আমার আউটপুট ভাল না হয়, আমায় এক ঝটকায় যে কেউ সরিয়ে দেবে। সেসব দিন চলে গিয়েছে যে একচেটিয়া একজনই রাজ করবেন, এখন সবটাই অভিনয় - দক্ষতা এবং স্ক্রিনের ওপর। তো, আমি এই গদি দখলের লড়াইয়ে শামিল হইনি।
পরিচালক হিসেবে সৌরভ কেমন?
এটা বললে জানি না কে কীভাবে নেবে। তবে, আমি সবসময় পরিচালক সৌরভকে এগিয়ে রাখব। তাঁর একটা না, অনেকগুলো কারণ আছে। ও এত সুন্দর সুন্দর ইনপুট দেয়, মানুষকে ভাবার সুযোগ করে দেয় যেটা একজন ভাল অভিনেতা না হলে সম্ভব নয়। আজকে আমার এই রাশি চরিত্রটা যে এত জনপ্রিয় হয়েছে এটার বেশিরভাগ ক্রেডিট সৌরভদার। কারণ, ও এত সুন্দর সাজিয়েছে, সর্টেড একজন পরিচালক।
রাজনীতি করতে গেলে কতটা সাহসের প্রয়োজন হয়েছে?
সাহসের কতটা প্রয়োজন জানি না, তবে সঠিক শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ অবশ্যই প্রয়োজন। যদি, কারওর রাজনীতিবিদ হওয়ার হয় তবে তাঁকে ছোট থেকে ঐদিকেই নজর রাখা উচিত। অনেক কিছু জানা উচিত। সে এক মস্ত বড় গল্প।
রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের মধ্যে কাকে দেখে সবথেকে বেশি অনুপ্রেরণা পায় দিতিপ্রিয়া?
না! কাউকে দেখে না! একেবারেই না। হ্যাঁ, কিছু কিছুসময় কারওর কোনও কাজ বা বক্তব্য ভাল লাগলেও আমি অনুপ্রেরণা এত সহজে কাউকে দেখে পাই না।