তারকাদের পুজো:
পুজো মানেই বাঙালির কাছে কবজি ডুবিয়ে খাওয়া-দাওয়া, দেদার গান-গল্প, আড্ডা আর অবশ্যই সিনেমা দেখা। সারাবছর শুটিং, সিনেমার প্রচার কাজের ব্যস্ততা দূরে সরিয়ে পুজোর আমেজে মেতে ওঠেন তারকারা। আর পুজো রিলিজ হলে আলাদা কথা! পায়ের তলায় সর্ষে দিয়ে এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত। মধুমিতা সরকার অবশ্য এবার সেই তালিকায় নন। তাহলে পুজোটা কীভাবে কাটানোর পরিকল্পনা করেছেন অভিনেত্রী? ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার তরফে খোঁজ নিলেন সন্দীপ্তা ভঞ্জ।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার তরফে প্রশ্ন যেতেই নস্ট্যালজিয়ায় ভাসলেন মধুমিতা। বললেন, "ছোটবেলায় দুর্গাপুজোর জন্য ১ মাস আগে থেকে অপেক্ষা করতাম। বালিগঞ্জে আমার বাড়ি। আমাদের রান্নাঘর থেকে দুর্গাবাড়ি দেখা যায়। প্রতিবছর ওখানে পারফর্ম করতাম। ষষ্ঠী থেকে নবমী অনুষ্ঠান থাকত। নাচ, গান, নাটক সবকিছুর সঙ্গেই যুক্ত থাকতাম আমি।"
"প্যান্ডেলের প্রথম বাঁশটা যখন পড়ত, পাগলের মতো ছুটতাম পাড়ার বন্ধুরা। কারণ বাঁশ-ত্রিপল পড়া মানেই আমাদের রিহার্সাল শুরু হওয়া। সেই হুল্লোড় চলত একেবারে কালীপুজো, ভাইফোঁটা অবধি। দশমীতেও আমাদের পুজোর আমেজ শেষ হত না। ভাই-দাদাদের কপালে ফোঁটা মানেই আমাদের সে কী মন খারাপ… আসছে বছর আবার হবে। আবার অপেক্ষা করতাম সরস্বতী পুজোর জন্য।", উচ্ছ্বাসের সঙ্গে প্রায় এক নিঃশ্বাসে বলে চললেন মধুমিতা সরকার।
তবে কালের নিয়মে সবটাই বদলেছে। পাড়ার সেই ছোট্ট মেয়েটা এখন টলিউড কাঁপানো নায়িকা। তাই পুজো উদযাপনের ধরণও বদলেছে। অভিনেত্রী জানালেন, আগে প্রতিবছর বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হত। এবার সেই নিয়মে কিছুটা ভাঁটা পড়ছে। কারণ কাজের সূত্রে অনেকেই ভিন্ন রাজ্যে। তবে পুজোর আগে পঞ্চমী অবধি শুট-ই থাকছে। তারপর ঘনিষ্ঠ বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে আড্ডা। তাই বেশিরভাগ সময়টা বাড়িতেই সকলের সঙ্গে কাটবে। তবে অষ্টমীর অঞ্জলী দেব।
শৈশবের পুজোর দিনগুলো কতটা মিস করেন? ঝটপট টলিউডের মিষ্টি নায়িকা 'চিনি'র উত্তর, "বন্ধুদের সঙ্গে প্রতিবছর নাগরদোলা চড়া, ভোগ খাওয়া, বড়দের হাতে হাতে পুজোর কাজ এগিয়ে দেওয়া, প্যান্ডেল হপিং, সকাল থেকে দূর্গাবাড়িতে দেদার আড্ডা দেওয়া.. এসব এখন মিস করি একটু। সবমিলিয়ে বছরের সেরা সময় কাটত দূর্গাপুজোতে।"
তবে ছোটবেলায় পুজোর জামা নিয়ে কম বায়নাক্কাও ছিল না মধুমিতার। নিজেই ফাঁস করলেন সেই গল্প- "প্রত্যেকবার পুজোয় ১০টা জামা চাই-ই-চাই। ১১-১২টা হলে ঠিক আছে। কিন্তু দশটার থেকে কম হলে চলবে না। ষষ্ঠা থেকে দশমী দু-বেলা নতুন পোশাক। সকালের পোশাক রাতে পরা নৈব নৈব চ! সেখান থেকে এখন এরকম অবস্থা যে আগের বছরের পুজোর জামাকাপড়ও পরে নিই। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কাঁধে দায়িত্ব বাড়লে মানুষের কত পরিবর্তন হয়, এখন সেটাই দেখি। পুজোর ওই ইনোসেন্সটাই এখন মিস করি।"
তা এবারের পুজোয় কী বেছে নিলেন নিজের জন্য? মধুমিতা জানালেন, "সারাবছর ওয়েস্টার্ন, ইন্দো-ওয়েস্টার্ন থেকে শুরু করে এত ধরণের পোশাক পরি যে, পুজোর সময়ে শাড়িটাই পরতে বেশি ভাল লাগে। সাজে সাবেকিয়ানা থাকে। পুজো মানেই আমার কাছে, 'আবেগী পুনর্মিলন'।"
তবে সেলেব হওয়ার পরও কিন্তু প্যান্ডেলে ঘুরে প্রতিমাদর্শন করতে ভোলেন না মধুমিতা সরকার। বললেন, "প্যান্ডেল হপিং এখনও করি। আমার একটাই কথা- মবড হওয়ার ভয় যতই থাকুক, কিন্তু মা এসেছে দেখব না?.. ভিড় থেকে বাঁচার হাজারটা উপায় বের করেছি। এখন মাস্ক আছে। দর্শকদের কাছে জনপ্রিয়তার পর পুজোয় যখন ঘুরতে যেতাম, তখন প্যান্ডেলে ঢোকার আগে আমার চারপাশে বন্ধুদের একটা দূর্গ বানিয়ে নিতাম। আমি মাঝখানে থাকতাম। কোনও বন্ধু আবার রসিকতা করার জন্যই মণ্ডপের ভিড়েই 'এই যে পাখি-পাখি..' করে চেঁচিয়ে ওঠত। আমার বন্ধুরা সকলে খুব হুল্লোড়বাজ। এখনও। দূর্গাপুজোয় বন্ধুদের সঙ্গে বেশিরভাগ সময় কাটালেও কালীপুজোটা পরিবারের সঙ্গে কাটাই। বাবার সঙ্গে প্রতিমা-দর্শনে যাই।"
আর পুজোর প্রেম? সেই নিয়েও আলাদা মজার গল্প রয়েছে অভিনেত্রীর ঝুলিতে। মধুমিতা ফাঁস করলেন, "জীবনের প্রথম ক্রাশটাই বুঝেছি পুজোয়। তখন আমি ক্লাস সিক্সে। গুপি গাইন বাঘা বাইন নাটকের রিহার্সাল করছি। ভূত সেজেছিলাম আমি। এছাড়াও নাচ-গানের রিহার্সাল চলছে। বাড়ির সামনের স্কুলটাতেই তখন পড়ছি। কানে খবর এল, সাউথ পয়েন্টের ২-৩ জন ছেলে বেশ ঘুরঘুর করছে। আমার সম্পর্কে বেশ খোঁজখবর নিচ্ছে। পঞ্চমীর সন্ধেবেলা থেকেই সব বন্ধুরা ঠাট্টা করা শুরু করল যে, এই দেখ তোকে পছন্দ করেছে ওই ছেলেটা। সেই প্রথম বুঝতে পেরেছিলাম দুষ্টু-মিষ্টি চোখে চাহনি, ক্রাশ-প্রেম.. এগুলো আসলে কী?"