scorecardresearch

‘সেটে ভুল দেখলে নিজে হাতে ঠিক করে দিত’, প্রযোজক দেবকে ‘ফুল মার্কস’ শাশ্বতর

হবু চন্দ্র রাজা গবু চন্দ্র মন্ত্রী: অভিনেতার তুলনায় প্রযোজক দেবকে কেন এগিয়ে রাখলেন? সেই উত্তরও দিলেন শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়।

Hobu Chandra Raja Gobu Chandra Mantri, Saswata Chatterjee praises Producer Dev, Saswata Chatterjee, Dev, Arpita Chatterjee, হবু চন্দ্র রাজা গবু চন্দ্র মন্ত্রী, শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, দেব, প্রযোজক দেব, দেব-শাশ্বত, অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়, bengali news today, Tollywood
দেব প্রযোজিত ‘হবু চন্দ্র রাজা গবু চন্দ্র মন্ত্রী’ মুক্তির প্রাক্কালে একান্ত আলাপচারিতায় শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়

‘হবু চন্দ্র রাজা গবু চন্দ্র মন্ত্রী’। থাকেন বোম্বাগড়ে। পুজোর মরসুমে পর্দায় আগমন ঘটছে রাজা হবু চন্দ্রর। আর সেই প্রেক্ষিতেই ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার মুখোমুখি শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়। শুনলেন সন্দীপ্তা ভঞ্জ

হবু চন্দ্র রাজা গবু চন্দ্র মন্ত্রী’ রূপকথার গল্প হলেও অনেকেই সিনেমায় রাজনৈতিক গন্ধ পাচ্ছেন। বলছেন, পলিটিক্যাল স্যাটায়ার ধর্মী ছবি। আপনার কী মত?

যে কোনও ছবিতেই লোকজন আজকাল রাজনৈতিক গন্ধ খুঁজে পাচ্ছেন। পলিটিক্যাল চিন্তাধারার বাইরে কোথাও বেরতে পারছেন না কেউ। সেদিক থেকে দেখতে গেলে কিন্তু ‘গুপি গাইন বাঘা বাইন’ কিংবা ‘হীরক রাজার দেশে’ও পলিটিক্যাল মেসেজ ছিল। তবে এক্ষেত্রে আমি বলব, ‘হবু চন্দ্র রাজা গবু চন্দ্র মন্ত্রী’তে ভীষণ মজার একটা গল্প বলা হয়েছে, যেটা আট থেকে আশি সব বয়সের সিনেদর্শকরাই উপভোগ করতে পারবেন।

কমলা ঝড়’ গান নিয়ে বিতর্ক শোনা গিয়েছিল। বলা হয়েছিল পদ্মশিবিরকে বিঁধতেই এই গান। আপনার ব্যক্তিগত মতামত কী?

পরিচালক অনিকেতদা (চট্টোপাধ্যায়) এটা ভাল বলতে পারবেন। তবে হ্যাঁ, ছবিতে একটা ‘ঝড় ঝড়… বোম্বাগড়ের ঝড়’ গান রয়েছে।

তাহলে কি ‘কমলা ঝড়’ গানটা বাদ পড়েছে?

হয়তো, এটা আমার জানা নেই।

হবু চন্দ্র রাজা গবু চন্দ্র মন্ত্রী প্রসঙ্গ টেনেই বলব, নবীন প্রজন্মের কাছে কি বাংলা রূপকথার কদর কমেছে?

নবীন প্রজন্মকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। আমরা সন্তানদের আমাদের ঐতিহ্যের বিষয়ে না শেখালে, ওরা শিখবে কী করে? আমার দায়িত্ব, আমার কী অতীত সেটা ভবিষ্যৎকে জানানো। আমি আমার মেয়েকে ছোটবেলা থেকেই ‘গু-গা-বা-বা’, ‘হীরক রাজার দেশে’ দেখিয়ে এসেছি। ও ‘নায়ক’, ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ সব সিনেমার বিষয়েই অবগত। এখন বাচ্চাদের যদি ছোট থেকে শুধু ‘হ্যারিপটার’ দেখানো হয়, তাহলে তারা বাংলার রূপকথা সম্পর্কে জানবে না, সেটাই স্বাভাবিক। এই নবীন প্রজন্মের জন্যই ‘হবু চন্দ্র রাজা গবু চন্দ্র মন্ত্রী’ সিনেমাটা করা। ওরা অন্তত জানতে পারবে আমাদের ঐতিহ্য সম্পর্কে।

তাহলে বলছেন, আজকাল বাঙালিরা নিজের শিঁকড়ের থেকেও বিদেশি ঐতিহ্য নিয়ে বেশি চর্চা করছে?

আমরা নিশ্চয়ই বাইরের দেশের ঐতিহ্যের কথা জানব, কিন্তু নিজের শিঁকড়টা ভুলে নয়, নিশ্চয়ই। আমি অনেক জায়গায় দেখেছি যে, অনেক বাবা-মায়েরাই গর্ববোধ করে বলেন যে, “আমার ছেলে-মেয়ে না একদম বাংলাটা বলতে পারে না।” সেটা কিন্তু একেবারেই গর্বের কথা নয়। আগে নিজেদের সংস্কৃতি নিয়ে বাচ্চাদের শেখানো উচিত।

অতিমারী আবহে সিনেদর্শকরা যেভাবে হতাশ হয়েছেন, ‘হবু চন্দ্র রাজা গবু চন্দ্র মন্ত্রী’র গল্প কি সেখান থেকে কোথাও গিয়ে সতেজ হাওয়ার সন্ধান দেবে?

একদমই তাই। পুজোর সময়ে সিনেমা দেখব না কী করে হয়! বিদেশে খেলার স্টেডিয়াম ভর্তি হয়ে যাচ্ছে। যে কোনও সময়ে বার, রেস্তরাঁয় লোক থিকথিক করছে। সিনেমাতে অসুবিধে কোথায়? মাস্কটা নিয়মিত পরলেই তো হল! তাও তো রেস্তরাঁয় গিয়ে মাস্ক খুলে খেতে হয়। সিনেমাহলে তো সেটাও করতে হবে না! হ্যাঁ পপকর্ন খাওয়ার অভ্যেস থাকলে একটা জিপ লাগানো মাস্ক পরলে সেই সমস্যাও মিটে যাবে.. (হেসে)।

এই ছবির ইউএসপি কী?

অনেকদিন পর লোকে মন খুলে হাসবে সিনেমাহলে গিয়ে। আমাদের সমাজে মজা বলে বস্তুটাই তো আজকাল উধাও। মজার বিষয়ে লেখার লোকও নেই। বহুদিন বাদে একরাশ সতেজ হাওয়ার সন্ধান পাবেন দর্শকরা। আমি নিজেই বড়পর্দায় ছবিটা দেখার জন্য মুখিয়ে রয়েছি। ৭ তারিখে প্রিমিয়ারে কখন দেখব? তর আর সইছে না যেন!

অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে ২ দশক পরে জুটি বাঁধলেন। প্রভাত রায়ের ‘তুমি এলে তাই’- এর পর। রানি কুসুমকলির সঙ্গে দীর্ঘ এতবছর পর স্ক্রিনস্পেস শেয়ার করার অভিজ্ঞতা কেমন?

অর্পিতার প্রথম ছবিতেই অভিনয় করেছিলাম আমি। কিন্তু পর্দায় খুব বেশি দৈর্ঘ্যের চরিত্র সেটা ছিল না। হ্যাঁ ২২ বছর পরে একসঙ্গে স্ক্রিনস্পেস শেয়ার করলাম। তাছাড়া ও চরিত্র নির্বাচন করে খুব বেছে বেছে। এবার চিত্রনাট্যটা পড়ে দু’জনেরই ভাল লেগেছে। তাই আমরা কেউই অমত করিনি।

ব্যক্তিগত প্রসঙ্গ টেনেই বলব, বাড়িতে কি আপনিই রাজা? নাকি গিন্নি-ই সর্বেসর্বা? মানে নিজের রাজত্বটাকে কীভাবে বর্নণা করবেন?

এখন আমি বাড়ির বাইরে, তাই খুব সাহস করে বলছি- “বাড়িতে আমি রাজা।” কিন্তু এই প্রশ্নটা আমাকে বাড়িতে করলে, একথা বলার সাহস আমার নেই! (হেসে) বুঝতেই পারছেন…।

পুজোর কী প্ল্যান.. পরিবারের সঙ্গেই কাটাবেন নাকি শুটিং রয়েছে?

পুজোয় আমি কলকাতায় থাকি না। ভীড়ে বেরতে পারি না। আর আমার পরিবার কলকাতার পুজো ছেড়ে বাইরে যাবে না। তাই প্রতিবছরই পুজো মানেই আমাদের বিচ্ছেদ। এবার প্ল্যান করেছি বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে উত্তরবঙ্গে ঘুরতে যাব।

আপনার কয়েকজন অনুরাগী একবার বাজি ধরেছিলেন “অপুদা রাঁধতে পারেন কিনা..” বেজায় হট্টগোল। আপনি কি সত্যিই রান্না করতে পারেন?

আমি খেতে খুব ভালবাসি, তাই একটা সময়ে টুকটাক রান্না করেছি। আমার মনে হয়, যারা খেতে ভালবাসে, তারা সাধ করে খুন্তিও একটু-আধটু নাড়তে শিখে যায়। হয়তো ভাত ফোটাতে গিয়ে গলিয়ে দিতে পারি..! তবে মাংসটা ম্যারিনেট করে বেশ গুছিয়ে রেঁধে দিতে পারব।

ইন্ডাস্ট্রির কেউ প্রশংসা করেনি আপনার রান্না করা মাংস খেয়ে?

সে বিয়ের আগে খেয়েছে। প্রশংসাও করেছে। কিন্তু বিয়ের পর সচরাচর এই গুণটা আমি বউয়ের সামনে দেখাইনি। তাহলে বুঝতেই পারছেন, দিনের অর্ধেকটা সময় হয়তো আমার রান্নাঘরেই কেটে যেত।

এই টলিউড, আবার পরদিনই বলিউড.. এত দৌড়োদৌড়ি সামলান কী করে?

ট্রাভেল করা আর কাজের মধ্যে থাকা, এই দুই-ই আমার খুব পছন্দের। সত্যি কথা বলতে কী, এই লকডাউনে দেখেছি, কাজ না থাকলে বাঁচা দায়! বাড়িতে বসে থাকায় আমার আবার অ্যালার্জি। আমার যদি শুট না-ও থাকে, তাহলেও গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ি লং-ড্রাইভে। নর্থবেঙ্গলে গেলে তো আমি ফ্লাইটে না গিয়ে গাড়ি নিয়ে যেতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি।

কঙ্গনা রানাউতের সঙ্গে বুদাপেস্টে ‘ধাকড়’-এর শুটিং করে এলেন। অভিজ্ঞতা কেমন?

দারুণ অভিজ্ঞতা। বুদাপেস্টে সিংহভাগ মানুষের ভ্যাকসিনেশন হয়ে গিয়েছে। তাঁরা কেউ মাস্ক পরেন না। আমি, কঙ্গনা, গোটা ‘ধাকড়’ টিম সেখানকার একটা মাল্টিপ্লেক্সে ‘ব্ল্যাক উইডো’ সিনেমাটা দেখতে গেছিলাম। বিশ্বাস করবেন না, ৮০ শতাংশ লোকের মুখে মাস্ক নেই। এদিকে হাউজফুল শো। রেস্তরাঁতেও খেতে গিয়েছি।

বাংলা নিয়ে কঙ্গনার সঙ্গে কী আলোচনা হয়েছে?

আমরা সিনেমার দৃশ্য নিয়েই বেশিরভাগ আলোচনা করেছি। তবে একসঙ্গে আড্ডায় বসলে কঙ্গনা বাংলার হাল-হকিকত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতেন।

আবার শোনা যাচ্ছে, মদন মিত্রের বায়োপিকেও রয়েছেন আপনি। সম্প্রতি ৪ ঘণ্টার মিটিং হয়েছে আপনাদের..

হ্যাঁ, আমার বাড়িতেই চার ঘণ্টা ধরে মদনদার সঙ্গে মিটিং হয়েছে। আমি ওঁকে বলেছি যে, বায়োপিকে আপনি কী কী দেখাতে চান কিংবা নিজেকে কীরকমভাবে ভাবছেন, সেটা আগে আমাকে বলুন। সেই অনুযায়ী স্ক্রিপ্ট তৈরি হোক। তারপর শুটিং। আমরা সবাই জানি, মদনদা খুব রঙিন মানুষ। (খানিক রসিকতা করেই) হলে একটা রঙিন বায়োপিক-ই হবে।

অভিনেতা দেব না প্রযোজক দেব? কাকে এগিয়ে রাখবেন?

অভিনেতা-প্রযোজক দেবের এই দুই সত্ত্বার সঙ্গেই আমি পরিচিত। কিন্তু এক্ষেত্রে আমি প্রযোদক দেব-কে অনেক বেশি এগিয়ে রাখব। কারণ, একজন অভিনেতা যিনি একটি ছবির প্রযোজক কিন্তু ওই ছবিতে অভিনয় করছেন না, তার এত ইনভলভমেন্ট দেখে অবাক হয়েছি। এটা প্যাশনেট না হলে সম্ভব নয়। আমি নিজেকে দিয়ে বিচার করলেও বলব, আজকে যদি আমি এমন একটা ছবির প্রযোজনা করি, যার কাস্টিংয়ে আমি নেই। সেখানে সারাক্ষণ থাকা এবং চারদিকে কড়া নজর রাখা হয়তো আমার পক্ষেও সম্ভব নয়। তবে দেব কিন্তু এটা করেছে। ও সবসময়ে থেকেছে, দেখেছে। জিনিসপত্র নিজে হাতে সরিয়েছে। এমনকী কোনও প্রপসও যদি বেঁকে থাকে, সেদিকেও নজর দেবের। নিজেই এসে সোজা করে দিয়েছে। অনেককিছু করেছে। প্রযোজক হিসেবে প্রত্যেকটা খুঁটিনাটিতে দেবের নজর।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

Stay updated with the latest news headlines and all the latest Entertainment news download Indian Express Bengali App.

Web Title: Exclusice interview hobu chandra raja gobu chandra mantri saswata chatterjee praises producer dev