বাংলা ছবিতে পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে প্লেব্যাক করছেন মধুবন্তী বাগচী। প্রতিভাময়ী এই গায়িকা বলিউড ছবিতে সম্প্রতি বেশ কিছু কাজ করেছেন। গত বছর 'মিতিনমাসি' ছবিতে তাঁর গাওয়া গান 'বাত চলত' অসম্ভব জনপ্রিয় হয়। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-র সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে মধুবন্তী জানালেন শাস্ত্রীয় সঙ্গীত নিয়ে তাঁর বড় হয়ে ওঠার কথা এবং কেন তিনি সঙ্গীতের রিয়্যালিটি শো-কে সমর্থন করেন না।
'মিতিনমাসি'-তে সম্পূর্ণ অন্য রকম মেজাজে তোমাকে পেয়েছি আমরা, তুমি কি ক্লাসিকাল পারফর্ম করো স্টেজে?
অনেকেই আমাকে এই কথাটা বলেছেন। আসলে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতই আমার রুট। বাংলা ছবিতে তো ওই ধরনের গান খুব একটা হয় না। এই ধরনের গান বিক্রমদা (বিক্রম ঘোষ) বা ইন্দ্রদীপদা (ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত) সাধারণত করেন। আমাকে অনেকে বলেছেন যে সিনেমায় যেভাবে গানটা ব্যবহার করা হয়েছে, সেটাও খুব ভাল লেগেছে। বিক্রমদার কাছে অনেক অপশন ছিল কিন্তু উনি যে আমাকে দিয়ে গানটা গাওয়ালেন, তার জন্য ওঁকে অকুণ্ঠ ধন্যবাদ। তবে পিওর ক্লাসিকাল আমি কখনোই পারফর্ম করিনি। যখন পারফর্ম করতে শুরু করেছি স্টেজে তখন প্রথমেই ব্যান্ডের মধ্যে ঢুকে গেছি। এখন যখন লাইভ পারফরম্যান্স করি, তখন 'জোছনা করেছে আড়ি' বা ওই ধাঁচের একটা বা দুটো গান আমি রাখি।
আরও পড়ুন: কলকাতার মানুষ বড্ড মিষ্টি: মামে খান
ক্লাসিকাল মিউজিকের সঙ্গে তোমার যাত্রাটা কীভাবে শুরু হল, ছোটবেলা থেকেই কি?
হ্যাঁ, একদম ছোটবেলা থেকেই। আমার বাড়িতে সবাই শাস্ত্রীয় সঙ্গীত ভালবাসেন। আমার বাবা কখনও প্রফেশনালি গান করেননি, কলেজে পড়ান। আমার কাকা সেতার বাজান। আবার মায়ের দিকে, দিদা খুব ভাল গান করতেন। আমি যতদিন স্কুলে পড়েছি, ইলেভেন-টুয়েলভ-এর আগে পর্যন্ত সেভাবে সিনেমার গান বা বলিউড শুনিনি। অনেকেই এটা বিশ্বাস করতে চান না কিন্তু আমার বাড়িতে শুধুই ক্লাসিকাল গানের চর্চা ছিল। আর আমি খুব ছোটবেলা থেকেই ক্লাসিকাল শিখেছি বিদূষী শুভ্রা গুহর কাছে।
তার পরে প্লেব্যাকে এলে কীভাবে?
আমি ক্লাস টেন পর্যন্ত পড়েছি সেন্ট টেরেসা-তে। তার পর ইলেভেন-টুয়েলভ এমপি বিড়লা-তে। ইলেভেন-টুয়েলভে স্কুল ব্যান্ডে গাইতে শুরু করি। রক, মেটাল, এই ধরনের গান শুনতে শুরু করেছি সেই সময় থেকে। তার পরে হেরিটেজে ভর্তি হলাম ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে, যাদবপুরে এমটেক করলাম লেজার সায়েন্সে। এই সময়টা পড়াশোনার পাশাপাশি নিয়মিত গাইতাম বিভিন্ন ফেস্টে। একটা ব্যান্ড ছিল আমাদের, পপ ব্যান্ড। ওরকমই একটা পারফরম্যান্সে নীল দত্ত আমাকে প্রথম শোনেন। আমাকে অডিশনে ডাকেন। তখন মৈনাক ভৌমিক 'আমি ও আমার গার্লফ্রেন্ডস' করছেন। ওঁরা নতুন সিঙ্গার চাইছিলেন। আমরা চারজন সিলেক্টেড হয়েছিলাম। ওইভাবে প্লেব্যাক শুরু। তার পর অনেকগুলো প্লেব্যাক করলাম-- 'ক্রস কানেকশন টু', 'শেষ বলে কিছু নেই' ছবিতে, অরিজিৎ সিংয়ের সঙ্গে ডুয়েট 'এগিয়ে দে', 'শুধু তোমারই জন্য' ছবিতে, তার পর 'গ্যাংস্টার'-এ 'তোমাকে চাই'-এর ফিমেল ভার্সন... এইভাবেই। ২০১৭-তে আমি মুম্বই শিফট করি।
মুম্বইতে তুমি কী কী কাজ করলে একটু বলো...
আমার সিঙ্গলস বেরিয়েছে টাইমস মিউজিক থেকে। আমি এখানে পর পর তিনটে বলিউড ছবির বিজিএম (ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক)-এ গেয়েছি-- 'উরি', 'অন্ধাধুন' আর 'জাজমেন্টাল হ্যায় কেয়া'। আর সঞ্জয় নাগ-এর ছবি 'ইওরস ট্রুলি'-তে আমি ছিলাম স্কোর কম্পোজার। আমি গানও গেয়েছি। সম্প্রতি আমার একটা মিউজিক ভিডিও বেরিয়েছে-- 'ভুল যা'। ভিডিওতে চারজন মেয়ে রয়েছে, আমিও আছি। 'ইন্ডি মিউজিক লেবেল' থেকে রিলিজ হয়েছে গানটা। একটা ব্রেক আপ সং। থুব ভাল শুট করা হয়েছে। বম্বের রেডিও স্টেশনগুলোতে খুব ভাল রেসপন্স পেয়েছে গানটা। ইউটিউবেও এক সপ্তাহেই খুব ভাল ভিউ হয়েছে--
তুমি কতক্ষণ রেওয়াজ করো এখন? নতুন যারা গান গাইছে তাদের কিছু পরামর্শ দিও, কীভাবে রেওয়াজ করবে বাড়িতে...
আমি অন্তত একঘণ্টা রেওয়াজ করি। আর রেওয়াজে মূলত যেটা করতে হয় সেটা হল প্রত্যেকটা নোট সোজাসুজি প্র্যাকটিস করা। যাতে প্রত্যেকটা সুর সঠিকভাবে লাগে। এখন সবাই গাইতে গিয়ে প্রথমেই ফলসেটো-ভিব্র্যটো-তে চলে যায়। প্রথমেই ওটা করলে খুব মুশকিল।
এখনকার রিয়্যালিটি শো-গুলিতে বেশিরভাগ গায়ক-গায়িকাকেই কিন্তু ফলসেটো-তে গাইতে শোনা যায়। এই ব্যাপারে তুমি কিছু বলবে?
আমি প্রথমত, রিয়্যালিটি শো একেবারেই সাপোর্ট করি না। মিউজিক নিয়ে কম্পিটিশন হওয়া উচিত না। এটা একটা আর্ট ফর্ম। আর রিয়্যালিটি শো থেকে একটা প্রবণতা তৈরি হয়, অন্যকে নকল করা। এটা খুবই ইনএফেক্টিভ একটা প্র্যাকটিস। আমরা যদি ইন্ডাস্ট্রির হিস্ট্রি দেখি বিগত দশ-বারো বছরে যারা যারা রিয়্যালিটি শো থেকে বেরিয়েছে, তাদের মধ্যে খুব কমজনই কিন্তু টিকে গিয়েছে। অরিজিৎ সিং একটা ব্যতিক্রম। তাছাড়া 'ফেম গুরুকুল'-এর পরে অন্তত ৬-৭ বছর নতুন করে অভ্যাস করে তবেই অরিজিৎ প্লেব্যাকে এসেছেন। আর দ্বিতীয়ত, রিয়্যালিটি শো থেকে বেরিয়ে কিন্তু কাজ পেতে খুব অসুবিধা হয়। কিছুদিন পর্যন্ত অনেক লাইভ শো, ইনস্ট্যান্ট শোয়ের ব্যাপার থাকে। কিন্তু সেটা কতদিন? রিয়্যালিটি শোয়ের দৌলতে গান গাইতে শুরু করে অনেকে স্ট্রাগল করার আগেই স্টার হয়ে যায়। কারণ পাবলিক তাদের স্টার বানিয়ে দেয়। এখন যে নিজেকে স্টার একবার ভাবতে শুরু করেছে, তার পক্ষে স্ট্রাগল করা খুব মুশকিল। মুম্বইতে বা যে কোনও বড় ইন্ডাস্ট্রিতে তারা মাথা নীচু করে কাজ করতে পারে না। ফলে একটা বড় সমস্যার মধ্যে পড়ে। আমার মনে হয় গানকে পেশা হিসেবেই যদি নিতে হয়, তবে সেটা রিয়্যালিটি শোয়ের হাত ধরে শুরু না করাই ভাল।