গত ১১ জানুয়ারি, রেড এফ এম আয়োজিত 'দ্য ইয়েলো ট্যাক্সি মিউজিক প্রজেক্ট' অনুষ্ঠিত হল নিক্কো পার্কে। সারা দিনব্যাপী এই গানের উৎসবে ছিল মামে খান, জাভেদ আলি, দর্শন রাভাল, লাউ মাজ এবং দ্য সোলমেট-এর অনুষ্ঠান। রক, ফোক, সুফি, ফিউশন-- এই সব ধারার গান নিয়েই জমে উঠল উৎসব। অনুষ্ঠানের শেষে রাজস্থানি লোকসঙ্গীতের তারকা মামে খানের সঙ্গে বিশেষ সাক্ষাৎকারে উঠে এল রাজস্থানের মাঙ্গনিয়ার ঘরানার কথা এবং কলকাতার সঙ্গে তাঁর আত্মিক যোগাযোগের কথাও।
কলকাতার সঙ্গে আপনার ব্যক্তিগত ও সাঙ্গীতিক সম্পর্কটা ঠিক কেমন?
কলকাতার সঙ্গে আমার আত্মার সম্পর্ক। আমার খুব ভালবাসার একটা শহর। আর আমার প্রাণের মানুষ যিনি, তিনিও আদতে কলকাতারই মানুষ। কলকাতায় এই নিয়ে আমি ১৩-১৪টা শো করলাম। প্রথম শো করেছিলাম আমার বাবার সঙ্গে। তখনই দেখেছিলাম, আর যেটা আমার সবচেয়ে ভাল লাগে, সেটা হল... কলকাতার মানুষ খুব মিষ্টি... বড্ড মিষ্টি লাগে আমার। আমার অনেক বন্ধু আছেন এখানে। জয় সরকার, লোপামুদ্রা, ঊষাদি... আর একজন এখন নেই কালিদা (কালিকাপ্রসাদ)। উনি আমার খুব ভাল বন্ধু ছিলেন। তাছাড়া পার্বতী বাউল রয়েছেন, প্রশান্ত, নয়ন ঘোষজি, অনিন্দ্য চ্যাটার্জি... অনেকেই আছেন। সেদিক থেকে বলতে গেলে কলকাতার সঙ্গে আমার সম্পর্ক খুবই নিবিড়।
আরও পড়ুন: ‘ছপাক’ করমুক্ত করুন, মুখ্যমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীকে আবেদন মৌবনির
আপনার গানে আধ্যাত্মিকতা কীভাবে মিশে আছে?
ভীষণভাবে মিশে থাকে। আমরা যখন গান বাঁধি আর যখন মঞ্চে উঠি-- দুটো জার্নি আলাদা। এটা সত্যি যে গান গাওয়ার সময়, পারফর্ম করার সময় আমার কোনও খেয়াল থাকে না যে আমি কোথায় আছি, কী করছি, কখন আপন মনেই নেচে উঠছি। আমি যেন অন্য কোনও দুনিয়ায় চলে যাই, হয়তো পীর-ফকির-আউলিয়ারা আমাকে আশীর্বাদ করেন... তাঁরা কারা আমি জানি না কিন্তু কিছু একটা ব্যাপার থাকে। আমি যে কখন কোন রঙে থাকি, সেটা নিজেও বুঝিনা।
আপনি তো উস্তাদ রানা খানের ঘরানাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। এই ঘরানার তাৎপর্য নিয়ে যদি কিছু জানান।
নিশ্চয়ই। উস্তাদ রানা খান সাহেব আমার বাবা। আমরা মাঙ্গনিয়ার সম্প্রদায়, যারা রাজস্থানের বিকানের, বারমের, যোধপুর এই সব অঞ্চলে থাকে। মাঙ্গনিয়ার একটি সাঙ্গীতিক সম্প্রদায়। ১৫-১৬টি প্রজন্ম ধরে আমরা সঙ্গীতের সাধনা করি। আমি আমার বাবা, আমার গুরু, উস্তাদ রানা খানের থেকে যা শিখেছি, চেষ্টা করি তাকে আরও বেশি করে আমার শ্রোতাদের কাছে তুলে ধরতে। মাঙ্গনিয়ারদের গান মানেই শুধু কেসরিয়া নয়। এই যেমন আজ আমি লাল-পিলি গাইলাম। আর আমার বাবা-র কথা যদি বলি, শুধু মাঙ্গনিয়াররা নয়, অন্য অনেক সম্প্রদায়ের মানুষ আমার বাবার কাছে গান শিখেছেন। আমি খুবই গর্বিত যে আমি ওঁর ঘরে জন্ম নিয়েছি।
রয়স্টেন আবেল-এর সঙ্গে আপনি তো পৃথিবীর বহু জায়গায় পারফর্ম করেছেন। সেই জার্নিটা কেমন ছিল?
আমি সারা পৃথিবী ঘুরেছি, অনেক জায়গায় পারফর্ম করেছি। কিন্তু শুধু রয়স্টেন আবেলের সঙ্গে নয়। আমার বাবার সঙ্গেও গেছি, আমার নিজের দলের সঙ্গেও গেছি আবার হ্যাঁ, রয়স্টেন আবেলের সঙ্গেও গেছি। কিন্তু আমার প্রথম ওয়ার্ল্ড ট্যুর ১৯৯৯ সালে। সেটা আমার বাবার সঙ্গে। আমেরিকা, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড প্রচুর জায়গায় গিয়েছি। লিঙ্কন সেন্টার থেকে সিডনি অপেরা-- সব জায়গায় গান করেছি। প্রায় ৫০-৬০টি শহরে গান গেয়েছি। তবে হ্যাঁ, রয়স্টেন আবেল-এর যে শো দ্য মাঙ্গনিয়ার সিডাকশন, সেখানে আমিই ছিলাম লিড সিঙ্গার। আমরা ১০০ টা শো করেছিলাম ওই প্রজেক্টে। সেটা ২০০৭ সালে। খুবই ভাল অভিজ্ঞতা, অনেক কিছুই শিখেছি। কিন্তু আমি বিদেশে যাচ্ছি তার অনেক আগে থেকে।
রিমিক্স, হিপ হপ এবং কৃত্রিম সাউন্ডস্কেপের যুগে একটা লোকসঙ্গীতের ধারাকে সজীব রাখা কতটা কঠিন?
আজকের সময়ে কিন্তু কঠিন নয়। আজ তো আমার পারফরম্যান্স দেখলেন। এনএইচ সেভেন থেকে শুরু করে অনেক বড় বড় ফেস্টিভ্যালে গেয়েছি আমি। আমাদের এদেশের শ্রোতারা তাও তো অনেকটা বোঝেন। বিদেশের শ্রোতাদের সামনে পারফর্ম করাই বরং অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং। ওঁরা তো আমাদের ভাষাটাও বোঝেন না। ওখানে এমনও হয়েছে, একটা গান আমাকে চার-পাঁচবার গাইতে হয়েছে, শ্রোতাদের অনুরোধে। আমার মনে হয় না এটা খুব শক্ত ব্যাপার। আসলে কে গাইছেন, তার উপরেই পুরোটা নির্ভর করে। গানের সঙ্গে আপনি কীভাবে মিশে যাচ্ছেন আর সেই মিশে যাওয়াটা কীভাবে আপনার বসে থাকা মানুষটির সামনে তুলে ধরছেন, তার উপরেই নির্ভর করে আপনি গানটা কতটা পৌঁছে দিতে পারছেন। আমি যেটা করেছি, ফোক মিউজিককে একটা মডার্ন টুইস্ট দিয়েছি। আর ফিউশন করতে আমার ভালই লাগে।