/indian-express-bangla/media/media_files/2025/10/31/fil-2025-10-31-10-53-06.jpg)
পড়ে নিন সেসব তথ্য...
বলিউড আজ শুধু ভারতের নয়, বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় সিনে জগৎ। হলিউডের চেয়েও বেশি মানুষ বছরে বলিউডের ছবি দেখে, সংখ্যা প্রায় এক বিলিয়নেরও বেশি! বছরে তৈরি হয় ৭০০-রও বেশি নতুন ছবি। কিন্তু এই বলিউডের সূচনা কবে? কীভাবে বদলে গেল এই শিল্পের রূপ?
BBC-এর জনপ্রিয় পডকাস্ট You’re Dead To Me–তে উপস্থাপক গ্রেগ জেনার কথা বলেছেন অধ্যাপক সানি সিং এবং সম্প্রচারক পপি জয়ের সঙ্গে। তাঁদের আলোচনার ভিত্তিতে জানা গেল, বলিউডের রঙিন ঝলমলে দুনিয়ার আড়ালে লুকিয়ে থাকা কিছু চমকপ্রদ ইতিহাস।
১. ভারতীয় সিনেমার শিকড় প্রায় ২০০০ বছর আগে
ভারতীয় সিনেমার উৎস প্রাচীন সংস্কৃত গ্রন্থ নাট্যশাস্ত্র-এ। খ্রিষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতকে রচিত এই গ্রন্থে প্রায় ছয় হাজার শ্লোকে নাট্যকলা, সংগীত, নৃত্য ও মঞ্চ-প্রদর্শনের নিয়মকানুন বিস্তারিতভাবে লেখা হয়েছে। আজকের বলিউডের গল্প বলার ধরণ, আবেগ, গান আর নাচ—সবই এসেছে সেই ঐতিহ্য থেকেই।
২. ভারতে সিনেমা জনপ্রিয় হতে দেরি লাগেনি
১৮৯৫ সালে ফ্রান্সের লুমিয়ের ব্রাদার ক্যামেরা এবং প্রজেক্টর দিয়ে প্রথম সিনেমা দেখানো হয় প্যারিসে। মাত্র ছয় মাসের মধ্যেই সেই নতুন প্রযুক্তি পৌঁছে যায় মুম্বাইয়ে! ভারতের প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য নির্বাক চলচ্চিত্র রাজা হরিশচন্দ্র মুক্তি পায় ১৯১৩ সালে। পরিচালক দাদাসাহেব ফালকে মাত্র দুই সপ্তাহ লন্ডনে প্রশিক্ষণ নিয়ে ফিরে এসে তৈরি করেছিলেন সেই ঐতিহাসিক ছবি।
/indian-express-bangla/media/post_attachments/b28db327-791.jpg)
৩. বলিউডে আলাদা করে “মিউজিক্যাল” ঘরনা নেই
বলিউডের কথা উঠলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে নাচ আর গান। কিন্তু বলে রাখা ভালো বলিউডে আলাদা করে “মিউজিক্যাল” ঘরানা নেই, কারণ প্রায় সব ছবিতেই গান থাকে। গানের মাধ্যমেই ক্যারেক্টার, ইমোশন আর গল্পকে টেনে নিয়ে যায়। অনেক সময় সিনেমার বাজেটের প্রায় এক-চতুর্থাংশই নির্ভর করে গান বিক্রির ওপর। আশ্চর্যের ব্যাপার, ১৯৩২ সালের ইন্দ্রসভা ছবিতে ছিল ৭১টি গান! যা বিশ্ব রেকর্ড
৪. ভারতীয় সিনেমা রঙ্গিন করেছিলেন জার্মানরা
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগের সময়ে ভারত ও জার্মানির মধ্যে চলচ্চিত্র নিয়ে ছিল ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা। অনেক জার্মান পরিচালক ভারতে কাজ করেছিলেন, আবার ভারতীয় পরিচালকরাও প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন জার্মানিতে। ভারতের প্রথম রঙিন ছবি সৈরন্ধ্রী (১৯৩৩) তৈরি হয়েছিল জার্মানিতেই। তবে যুদ্ধ শুরু হলে ব্রিটিশ শাসকেরা সব জার্মান নাগরিককে দেশ থেকে বহিষ্কার করেন, আর সেই সম্পর্কের ইতি ঘটে।
/indian-express-bangla/media/post_attachments/fbbbdc71-c93.jpg)
৫. তারকা সংস্কৃতি শুরু থেকেই বলিউডে
ভারতের প্রথম সিনেমা তারকারা ছিলেন থিয়েটারের বিখ্যাত অভিনেতা-অভিনেত্রীরা। তাঁদের জনপ্রিয়তা পর্দায়ও ছড়িয়ে পড়ে। প্রথম দিকের অন্যতম বড় তারকা ছিলেন সুলোচনা—বোম্বের ইহুদি ইরাকি সম্প্রদায়ের এক অভিনেত্রী। নির্বাক ছবিতে তিনি ছিলেন অত্যন্ত সফল। তবে সিনেমায় সাউন্ড আসার পর তিনি এক বছর অভিনয় বন্ধ রেখে হিন্দি ভাষা শিখেছিলেন।
৬. বলিউডে শুটিংও হতে পারে বিপজ্জনক
১৯৮২ সালে কুলি ছবির শুটিং চলাকালীন মারাত্মক আহত হন অমিতাভ বচ্চন। তাঁর অবস্থা এতটাই গুরুতর ছিল যে, সারা দেশ তাঁর সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করেছিল। হাসপাতালের বাইরে হাজার হাজার ভক্ত ভিড় জমিয়েছিলেন। পরে তিনি সুস্থ হয়ে উঠলে ছবির গল্প বদলে দেওয়া হয়, যেখানে তাঁর চরিত্রের মৃত্যুর দৃশ্যটি পুরোপুরি বাদ দেওয়া হয়।
৭. ভারতীয় সিনেমা সবসময়ই ছিল রাজনৈতিক
২০২৩ সালের শাহরুখ খান অভিনীত জওয়ান ছবির শেষে রয়েছে ভোট ও নাগরিক দায়িত্ব নিয়ে এক শক্তিশালী বার্তা। কিন্তু এই রাজনৈতিক সুর নতুন কিছু নয়। ১৯৩০-এর দশকের সিনেমাতেই স্বাধীনতার দাবি ও অন্যায় শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের গল্প দেখা যেত।
১৯৬০ ও ৭০-এর দশকে যুদ্ধ, বেকারত্ব, নারীর অধিকার, বিবাহবিচ্ছেদ ও সামাজিক বৈষম্যের মতো বিষয় নিয়েও সিনেমা তৈরি হয়েছে। বলিউড সবসময়ই ছিল ভারতের সমাজ ও রাজনীতির আয়না।
ফুরিয়ে গিয়েও যা ফুরোয় না:
বলিউড শুধু গান, নাচ আর রঙিন পর্দার গল্প নয়—এ এক দীর্ঘ সাংস্কৃতিক ইতিহাস। প্রাচীন নাট্যশাস্ত্র থেকে আজকের বিশ্ব জনপ্রিয়তা, এই পথচলাই বলিউডকে করেছে বিশ্বের সবচেয়ে জীবন্ত ও বৈচিত্র্যময় করেছে সিনেমা জগৎ।
/indian-express-bangla/media/agency_attachments/2024-07-23t122310686z-short.webp)

Follow Us