এই শহরটা জুড়ে তাঁর উপস্থিতি ছড়িয়ে ছিটিয়ে। কারণ, তিনি মহানায়ক। সে মেট্রো স্টেশন হোক, কিংবা নন্দন চত্বর কিংবা ইন্দ্রপুরি স্টুডিওর বুকে নানা স্মৃতি, উত্তমবাবু মানেই বাঙালির আবেগ। তিনি বাংলার এমন এক অস্তিত্ব, যা বিশ্বদরবারে তো বটেই, বাঙালির মনে মনে নস্টালজিয়া আজও বাঁচিয়ে রেখেছে। এবার, তিনি আবার ফিরছেন! পর্দায়, তাও আবার সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের হাত ধরে।
সঙ্গে রয়েছেন তাঁর নাতি গৌরব চট্টোপাধ্যায়। দাদুকে এজীবনে চোখে দেখা হয়নি। কিন্তু, টেকনোলজির হাত ধরে, এমন এক ছবি যে হতে পারে সেটা কিন্তু ভাবনার বাইরে ছিল তাঁর। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার সঙ্গে গল্প করতে করতেই 'অতি উত্তমে'র অজানা কথা জানালেন অভিনেতা গৌরব।
মহানায়কের নাতি হিসেবে কাঁধে অত্যধিক চাপ মনে হয়?
চাপ, সত্যিই মনে হয় না। এবং তাঁর একটাই কারণ! আমি জানি উনি কিংবদন্তি। সুতরাং তাঁর নাম আমার কাছে গর্বের। আর বাকি পাঁচটা বাঙালি যেভাবে তাঁকে শ্রদ্ধা করেন, সম্মান করেন, উনি আমার কাছে একজন আইকন। বাঙালির এমন এক সত্যি উনি, যেটা ভীষণ সুন্দর।
তুমি তো তাঁকে ছোটবেলা থেকে পাওনি...
না না, আমার জন্মানোর আগেই উনি মারা গিয়েছেন। পেলে হয়তো না স্মৃতিটা একদম অন্যরকম হত। কিন্তু যেহেতু পাইনি, তাই তাঁর যে ছবিটা আমার সামনে এঁকে দেওয়া হয়েছে সেটা কিন্তু খুব প্রফেশনাল। মহানায়ক বলে কথা। শুধু, দাদু কেন, আমি তো বাবাকেও বেশিদিন পাইনি।
অভিনেতা হিসেবে কী মনে হয়, সৃজিত মুখোপাধ্যায় জাস্টিফাই করলেন বিষয়টা?
দেখ, সত্যি বলতে গেলে এই যে মহানায়ক ফিরছেন এই বিষয়টি কিন্তু খুব উত্তেজনার। এতবছর পর, তাঁকে আবার দেখা যাবে। আর আমি এটুকু জানতাম, যে সৃজিত দা যখন কিছু একটা ভেবেছেন তখন উনি নিজের মতো করে সামলে নেবেন। এটা উনার লিগাসি। সেটা উনি চেষ্টা করেছেন। এবং আমার মনে হয়, বিষয়টা খুব সুন্দরভাবে উপস্থাপন হয়েছে।
যখন, প্রথম অফারটা পেয়েছিলে কী মনে হয়েছিল, যুক্তি তক্কের হিসেব মিলেছিল?
একটা, বিষয় না বললেই নয় যে একটু অবাক হয়েছিলাম। যে কী করে জিনিসটা হবে। এটা তো সম্ভব না। কিন্তু, যেটা শুটিং ফ্লোরে গিয়ে দেখলাম, এই যে তাঁর সব সংলাপ - হাঁটাচলা, ওঠাবসা স্টাইল গুলো খুঁজে বের করে, একেকটা শটে বসানো। সেটা কিন্তু খুব ইউনিক। এমনও হত, যে একটা রিল হয়তো চলছে দাদুর ছবির। আমাদের সেটা দেখে হয়তো ডায়লগ বলতে হত। এখানে থামতে হবে, কীভাবে কোথায় কাটতে হবে সবটাই, খুব সন্তর্পনে করতে হয়েছে আমাদের।
একটা মজার প্রশ্ন করি? ট্রেলারে দেখলাম তোমায় মহানায়ক বলছেন ইডিয়ট, বাস্তবে তাঁকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা হয়েছে?
না, সত্যি বলতে গেলে হয়নি। আমি খুব অন্যরকম একটা মানুষ। আসলে তাঁকে দেখিনি তো বাস্তবে।
গৌরব কি মহানায়কের থেকে কিছু ধার নিয়েছে অভিনয় কিংবা ব্যাক্তিত্বের খাতিরে?
আমার সঙ্গে মহানায়কের ইমোশনাল কোনও বন্ড সেভাবে কিন্তু নেই। আমি ছোট থেকে জেনে এসেছি তিনি একজন নায়ক। একজন কিংবদন্তী। তাঁর থেকে ধার করা মানে বিরাট ব্যাপার। এবার বিষয়টা হচ্ছে, উনি একটা প্রতিষ্ঠান। যেহেতু ইমোশনাল বন্ডটা নেই, তাই উনি আমার কাছে বাঙালির অস্তিত্ব। এটুকু জানি, যে তিনি সিনেমার মধ্যে মিশে আছেন। আমার দাদু বা ঠাকুরদা বলে কোনও আলাদা বিষয় কিন্তু খুব একটা ফিল করি নি।
ব্যাক্তিগত প্রশ্ন করি? এই যে বাংলার বুকে মহানায়ক সম্মান দেওয়া হয়, যারা পাচ্ছেন তারা কি দাবিদার?
আসলে, কী বলতো আমাদের ভাবতে হবে যে আমরা কি কারণে পুরস্কার দিচ্ছি। আমরা তাঁকে উৎসর্গ করে পুরস্কার দিচ্ছি। তাঁর নামে দেওয়া হচ্ছে মানে এই নয় যে যারা পাচ্ছেন তারা সকলেই মহানায়ক। এটা একটা ট্রিবিউট। তো, এইদিক দিয়ে যদি ভাবি তাহলে কিন্তু বিষয়টা যুক্তিযুক্ত। সেটা নিয়ে কিন্তু খুব একটা আলোচনা হওয়া উচিত নয়।
তুমি পেয়েছ মহানায়ক সম্মান?
না, আমি এখনও পাইনি। ভাবনা চিন্তা আসে না। ওই আসলে অভিনয় করতে এসেছি। ক্যামেরা অন হলে, আমার সব ইমোশন। ক্যামেরা অফ হলে সবটা গেল.. ( হাসি )
মহানায়কের ভূমিকায় প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় নাকি শ্বাশত চট্টোপাধ্যায়, কাকে দেখে মনে হয়েছিল যে উত্তমবাবুর চরিত্র ভালভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন?
সত্যি বলি? আমি অপুদার ছবিটা দেখিই নি। তাই না জেনে বলা উচিত হবে না। আর এই ছবিটা বানানোর সময় আমাদের অনুমতি নেওয়া হয়নি তো, আইনি জট ছিল। আর, মহানায়কের ভূমিকায় বুম্বা দা, আমার যতদূর মনে পড়ছে। সেই সিরিয়ালের সময় আমার একটি সিরিয়াল টেলিকাস্ট হত তো একটু ঝলক দেখেছিলাম। সেটা আমাদের অনুমতি নিয়েই বানানো হয়েছিল। কিন্তু, যদি বল উত্তম কুমারের ভূমিকায় আমার কাকে সবচেয়ে ভাল লেগেছে, তাহলে বলব মহালয়া ছবিতে যীশুদা। আমার চোখে দেখা উত্তম হিসেবে যীশু দা অনবদ্য। যেই ছবিতে শুভাশীষ দা ছিলেন, বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের ভূমিকায়।
অভিনেতা হিসেবে মহানায়কের কোন ছবিটা তোমার পছন্দের?
ছোট থেকে এই ভাবনা আমার মাথায় ঘুরছে। আমি কোনোদিন এই উত্তর দিতে পারিনি। কখনও মনে হয় নায়ক, আবার কখনও মনে হয় অগ্নিশ্বর, আবার কখনও অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি। আমি বলে বোঝাতে পারব না।