Uttam Kumar birth anniversary: যদি এমনটা হতো, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ সকালে আপনি ফেসবুক খুলেই দেখতে পেলেন একটি ছবি যা ভাইরাল হয়ে গিয়েছে মাত্র কয়েক মিনিটেই, কারণ সেই ছবিটি মহানায়ক উত্তমকুমারের। একটি সেলফি, হয়তো তাঁর নাতি বা নাতনি অথবা পরিবারের অন্য কোনও সদস্যের সঙ্গে। এই মিলেনিয়াম-পরবর্তী সময়টা দেখে যেতে পারেননি উত্তমকুমার। তাঁর কল্পনাতে কখনও এসেছিল কি না ভবিষ্যতের এই সোশাল মিডিয়া-কেন্দ্রিক পৃথিবী, তা বলা অসম্ভব। কিন্তু এই সময়ে থাকলে তিনি জানতেন, মিলেনিয়াম পেরিয়েও এখনও বাংলার মানুষ কতটা উচ্ছ্বসিত তাঁদের মহানায়ককে নিয়ে।
92nd Birth Anniversary of Actor Uttam Kumar
''দাদু যদি আজ থাকত, প্রচুর এনজয় করতাম এই দিনটা। আমার আর দাদার চিরকালের আপশোষ, দাদুকে আমরা দেখিনি। আর দিদিকে যে কী হিংসে হয়... দিদিকে উনি কোলে নিয়েছেন, দিদির নাম রেখেছেন, আমরা তো সেটা পাইনি'', বলে চলেন মহানায়কের ছোট নাতনি মৌমিতা, ''কিন্তু দাদু যদি আজ থাকত, দাদুর সঙ্গে মর্নিং সেলফি একটা তুলতাম। সবার আগে পোস্ট করতাম! আর প্রচুর হ্যাশট্যাগ থাকত পোস্টে... লাভ ইউ গ্র্যান্ডফাদার, মহানায়ক বার্থডে, হ্যাপি বার্থডে গ্র্যান্ডপা...খুব মিস করি আমরা।''
আরও পড়ুন: মহানায়কের প্রয়াণ দিবসে রোমান্টিক নায়কের স্মৃতিচারণা
মহানায়ককে যে কতটা মিস করেন বাংলার মানুষ সেটা বোধহয় সবচেয়ে ভালো করে জানেন চট্টোপাধ্যায় পরিবারের সদস্যরা। গৌরব, নবমিতা ও মৌমিতা তিনজনেই জানালেন, প্রতি বছর এই দিনটিতে মহানায়কের অফিস ঘরটি খুলে দেওয়া হয় সাধারণ মানুষের জন্য। সেখানে তাঁর ছবি সাজানো হয় মালা দিয়ে। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসেন তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে।
''আমাদের বাড়ির চারতলাটা দাদুর তৈরি করা, এখানেই এখন আমরা থাকি আর উঠোন পেরিয়ে উল্টোদিকে বাড়ির পুরনো অংশ, যেখানে রয়েছে অফিস ঘর'', বলেন মহানায়কের বড় নাতনি নবমিতা, ''আমি ছোট থেকেই তো দেখছি, আজকের দিনে কত মানুষ এসে মালা দিয়ে কাঁদছেন, কেউ কথা বলছেন আপনমনে। যে গাড়িটা করে দাদুকে আনা হয়েছিল, সেই গাড়িতেও মালা দিতে দেখেছি। বাংলাদেশের সুপারস্টার আলমগীর ভাই দাদুকে যে কী ভক্তি করেন। ওঁর খুব ইচ্ছে ছিল দাদুর ঘরটা একবার দেখার। এখন কলকাতায় এলেই একদিন আমাদের বাড়ি আসবেনই আলমগীর ভাই। ইন্ডাস্ট্রিতে যখন কেউ আমাকে বলেন, উনি তোমাকে কোলে নিয়েছিলেন, একটু ছুঁয়ে দেখি তোমাকে, খুব লজ্জা করে আমার।''
এখনও মহানায়কের জন্মদিনে অনেকেই তাঁদের প্রিয় নায়কের জন্য মিষ্টি আনেন, ছবির সামনে রেখে চলে যান। কে আসছেন, কে রেখে যাচ্ছেন, বেশিরভাগ সময়েই জানতে পারেন না পরিবারের সদস্যরা। গৌরব জানালেন, একজনকে তিনি দেখেছিলেন প্রতি জন্মদিনে এসে মহানায়কের ছবির সামনে বসে গান গেয়ে চলে যেতেন। মহানায়ক যে অসম্ভব গানবাজনা ভালোবাসতেন সেকথা কারও অজানা নয়। প্রতি জন্মদিনে তাঁর বাড়িতে সকালবেলা পায়েস খাওয়া ও রাতের কেক সেরিমনি ছিল বাধা। একদিকে যেমন চলত পার্টি, পাশাপাশি বসত বিশেষ জলসা। সেই দিনগুলো পেলেন না বলে মৌমিতার মন খারাপ করে মাঝেমধ্যে।
নবমিতা তখন নমাসের শিশু, যখন মহানায়কের জীবনাবসান হয়। গৌরব ও মৌমিতার জন্ম অনেক পরে। তাই গৌরব চট্টোপাধ্যায়ের কাছে উত্তমকুমার আগে মহানায়ক, তার পরে দাদু। যেভাবে অন্য অভিনেতা-অভিনেত্রীরা তাঁর অভিনয় থেকে শেখেন, গৌরব জানালেন, তিনিও সেভাবেই শিখেছেন অনেক কিছু। তবে মনে যখন অভিনয় নিয়ে কোনও প্রশ্ন ওঠে, তখন দাদু উত্তমকুমারের অভাবটা অনুভব করেন বেশি। ''আমার মাঝে মাঝে মনে হয় উনি থাকলে জিজ্ঞেস করতাম, মেথড অ্যাক্টিংয়ে কতক্ষণ থাকা যায় বা মেথড থেকে কীভাবে ফেরা যায়। আমি নিজে কখনও খুব ইনস্টিংটিভ, কখনও আবার মেথড অ্যাক্টিংয়ের উপর ডিপেন্ড করি। কিন্তু মেথড অ্যাক্টিংয়ের পরে একটা চরিত্রের রেশ কতটা রয়ে যায় অভিনেতার উপর... এই সব নিয়ে যখন ভাবি, তখন মনে হয়, ওঁকে জিজ্ঞেস করতে পারলে ভালো হতো'', বলেন গৌরব।
আরও পড়ুন: ফকিরদাসের নিয়ে যাওয়া চালভাজা এবং নাড়ুতে মন ভরে যেত মহানায়কের
গৌরব ও নবমিতা দুজনেই নিয়মিত অভিনয় করেন আর মৌমিতা এখন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের প্রযোজনা সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে। মৌমিতা ও নবমিতা দুজনেরই অভিনয়ের হাতেখড়ি মঞ্চে এবং তাও তরুণকুমারের তত্ত্বাবধানে। আর গৌরব তো এই মুহূর্তে বাংলা টেলিভিশন ও ওয়েবের ব্যস্ততম অভিনেতা। কিছুদিন আগেই শেষ হয়েছে স্টার জলসা-র ধারাবাহিক 'বাজলো তোমার আলোর বেণু'। সেখানে একটি প্রধান চরিত্রে ছিলেন নবমিতা আর সামনেই রয়েছে তাঁর নতুন ছবির মুক্তি-- 'লাইমলাইট'।
তিন ভাইবোনই সময় পেলেই দেখেন মহানায়কের ছবি। মৌমিতার প্রিয় ছবি 'ছদ্মবেশী', 'সপ্তপদী' ও 'নায়ক'। অবশ্য় নায়ক এমন একটি ছবি যা মহানায়কের সব গুণমুগ্ধেরই সবচেয়ে প্রিয় ছবি হওয়াটাই স্বাভাবিক। নবমিতা জানালেন, যে কোনও সময়ে, যে কোনও মুডে দাদুর ওই ছবিটিই তিনি দেখতে পছন্দ করেন। গৌরব ও নবমিতা দুজনেরই প্রিয় ছবি 'অগ্নীশ্বর'-- আর একটি কাল্ট সিনেমা। 'ভ্রান্তিবিলাস'-এর মতো কমেডি ছবিও আবার খুবই পছন্দ গৌরব ও মৌমিতার। আর মৌমিতার বিশেষ করে ভালোবাসেন 'চিড়িয়াখানা' ছবিটি।
মৌমিতা বলেন, ''মহানায়কের মধ্যে তিনটি জিনিস ছিল-- তিনটি ডি-- ডিসিপ্লিন, ডেডিকেশন ও ডিভোশন। এই তিনটি গুণ আমি এই প্রজন্মের খুব হাতে-গোনা অভিনেতাদের মধ্যে দেখতে পাই। তার মধ্যে দুজন আমার খুব প্রিয় মানুষ-- বুম্বাদা, যাঁর সঙ্গে আমি কাজ করি আর আমার দাদা গৌরব। মহানায়ক একটা ইন্সটিটিউশন। তিনি আমাদের শিক্ষাগুরু।''