/indian-express-bangla/media/media_files/2025/09/07/sunil-dutt-1-2025-09-07-13-50-31.jpg)
অভিনেতার জীবন কাহিনী...
সুনীল দত্তের জীবন যেন একেকটি নাটকীয় গল্প-কাহিনী। কখনও তিনি শুটিং সেটে আগুন থেকে তাঁর ভবিষ্যৎ স্ত্রী নরগিসকে বাঁচিয়ে ছিলেন। আবার কখনও ৫০০ কিলোমিটার হেঁটে পাঞ্জাব জুড়ে শান্তি ও সম্প্রীতির বার্তা দিয়েছেন। জীবনে তিনি একদিকে স্ত্রীর ক্যান্সারে মৃত্যু দেখেছেন, অন্যদিকে বহু বছর ধরে ছেলে সঞ্জয় দত্তকে মাদকাসক্তি থেকে মুক্ত করার সংগ্রাম চালিয়েছেন। তিনি রাজনীতিতেও সক্রিয় হয়েছিলেন। মুম্বইয়ের প্রথম জীবনে ফুটপাথে রাত কাটালেও, জীবনের শেষভাগে ছেলের জন্য লড়াই করেই সময় কেটেছে।
সঞ্জয় যে নানাভাবে আইনের জালে জড়িয়ে জেলে গিয়েছিলেন একথা অনেকেই জানেন। সুনীল দত্তের জন্ম, বলরাজ দত্ত নামে, পাকিস্তানের বর্তমান খুর্দ গ্রামে। মাত্র ১৮ বছর বয়সে তিনি ভারতে চলে আসেন। দেশভাগের ভয়াবহতা তাঁর জীবনে গভীর দাগ কেটে যায়। রিডার্স ডাইজেস্টকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি স্মৃতিচারণ করেছিলেন- "আম্বালার একটি শরণার্থী শিবিরে আমি একদিকে মৃতদেহ নিয়ে কান্না দেখেছি, আর কিছুদূরে একই সময়ে চলছিল বিয়ের অনুষ্ঠান, সেটাও দেখেছি।" রেডিফকে দেওয়া শেষ সাক্ষাৎকারে তিনি আরও জানান, দেশভাগের সময় একজন মুসলিম, ইয়াকুব, তাঁদের গোটা পরিবারকে বাঁচিয়ে দিয়েছিলেন এবং নিরাপদে ঝিলামে পৌঁছে দিয়েছিলেন।
দত্ত পরে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, মাত্র পাঁচ বছর বয়সে বাবাকে হারানোর পর, তাঁরা মা ও ভাইবোনদের সঙ্গে ভারতে আসেন, তবে পথে আলাদা হয়ে গিয়েছিলেন। বিভিন্ন শিবিরে মা, ভাই ও বোনকে খুঁজে তিনি প্রায় আশা হারিয়ে ফেলেছিলেন। পরে এক আত্মীয় তাঁকে আম্বালায় তাঁর কাকার কাছে নিয়ে যান, যিনি তখন স্থানীয় পুলিশ সুপার ছিলেন।
সেই সময়ের স্মৃতি সুনীল দত্ত নিজেই একবার বর্ণনা করেছিলেন- “আমি যখন ঘোড়ার গাড়ি থেকে নামলাম, তখন সামনে দেখলাম আমার মা দাঁড়িয়ে আছেন, নোংরা পোশাকে, যা বহুদিন ধোয়া হয়নি। আমার ভাইয়ের পরনে ছিল হাফপ্যান্ট, বোনটিও পাশে দাঁড়িয়েছিল। এ যেন জীবনের সবচেয়ে বড় বিস্ময়।”
বছর কয়েক আগে, ৬০ বছরের কোঠায় পৌঁছে তিনি তাঁর পৈতৃক গ্রামে ফিরে যান। সেখানে স্থানীয়রা তাঁকে এবং তাঁর পরিবারকে দারুণভাবে স্বাগত জানান। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “গ্রামবাসীরা বলেছিলেন, এটা আমার জন্য নয়, বরং আমার পূর্বপুরুষদের জন্য। তাঁরা ভালো মানুষ ছিলেন, ধর্মকে সম্মান করতেন। আমাদের গ্রামের দরগাহ পেরোতে হলে তাঁরা সবসময় ঘোড়া থেকে নেমে পায়ে হেঁটে যেতেন। এত সম্মান তাঁরা আমাদের দিয়েছেন, আমরা কেন তাঁদের সম্মান করব না?"