Homebound: দুই বন্ধুর অসমাপ্ত যাত্রা, অমৃতের স্মৃতিতে ডুবেই 'হোমবাউন্ডে' বিভোর সাইয়ুব

বারাহুবা দেওয়ারির গ্রামেও পৌঁছে গেছে খবর। সিনেমা এখনও কেউ দেখেনি- নিকটতম প্রেক্ষাগৃহ ২৫ কিলোমিটার দূরে। তবুও গ্রামের মানুষজন অপেক্ষা করছে। সাইয়ুব জানেন, তিনি হয়তো আর কখনো হোমবাউন্ড হতে পারবেন না।

বারাহুবা দেওয়ারির গ্রামেও পৌঁছে গেছে খবর। সিনেমা এখনও কেউ দেখেনি- নিকটতম প্রেক্ষাগৃহ ২৫ কিলোমিটার দূরে। তবুও গ্রামের মানুষজন অপেক্ষা করছে। সাইয়ুব জানেন, তিনি হয়তো আর কখনো হোমবাউন্ড হতে পারবেন না।

author-image
IE Bangla Entertainment Desk
New Update
home

কী এই গল্প...

 দুবাইয়ের এক প্রেক্ষাগৃহে বসে সাইয়ুব পর্দার দিকে তাকিয়েছিলেন। ঠিক তার চোখের সামনে ভেসে উঠছিল তাঁর নিজের জীবনের এক টুকরো গল্প- "হোমবাউন্ড" নামের সেই ছবি, যা এবারের অস্কারে ভারতের অফিশিয়াল এন্ট্রি। সিনেমাটি মুক্তির পরদিনই তিনি চার বন্ধুকে নিয়ে দেখতে এসেছিলেন। কিন্তু আলো–অন্ধকারে, ঝলমল করা সেই পর্দা, তাঁকে ফিরিয়ে নিচ্ছিল অতীতের এক ভয়ঙ্কর দিনে। কোভিডের প্রথম ঢেউয়ের সময়কার সেই যাত্রায়, যেখানে তাঁর শৈশবের বন্ধু অমৃত প্রসাদকে তাঁকে হারাতে হয়েছিল।

Advertisment

অমৃত আর সাইয়ুব- দু’জনের বাড়ি উত্তরপ্রদেশের ছোট্ট গ্রাম বারাহুবা দেওয়ারি। হিন্দু অধ্যুষিত গ্রামে তাদের বাড়ির মধ্যে দুরত্ব ছিল মাত্র ছয়শো মিটারের। ছোটবেলা থেকে একসাথে স্কুলে যাওয়া, একসাথে খেলা, তারপর একদিন সংসারের দায়ে পড়াশোনা ছাড়তে হলো। কাজের খোঁজে আলাদা পথে বেরোলেও, শেষমেশ অমৃতই তাকে ডেকে নিল সুরাটে। দুজন বন্ধু গুজরাটের টেক্সটাইল মিলে কাজ করতে শুরু করল।

২০২০ সালের মে মাস। হঠাৎ ঘোষণা হলো লকডাউন। কারখানা বন্ধ। মজুরি নেই। দুই তরুণের সামনে পড়ে রইল ১,৫০০ কিলোমিটারের পথ- সুরাট থেকে উত্তরপ্রদেশ। অগণিত পরিযায়ী শ্রমিকের মতো তারাও বেরিয়ে পড়ল বাড়ির পথে। গরমে জ্বলন্ত রাস্তায়, ঠাসা ট্রাকের পিঠে চেপে, অনিশ্চয়তার সঙ্গে চলছিল তাদের যাত্রা।

Advertisment

কিন্তু মাঝপথেই অসুস্থ হয়ে পড়ল অমৃত। ট্রাক ভর্তি মানুষ তখন থামতে রাজি নয়, সবাই শুধু বাড়ি পৌঁছোতে মরিয়া। সাইয়ুব একাই নেমে পড়ল বন্ধুর জীবন বাঁচাতে। রাস্তার ধারে অমৃতের মাথা কোলে নিয়ে, ভেজা রুমাল দিয়ে ঘাম মুছে দিয়ে, নিঃশ্বাস ফেরানোর মরিয়া চেষ্টা করছিল সে। পথচারীর এক ক্যামেরায় বন্দি হলো সেই মুহূর্ত। ছবি ছড়িয়ে পড়ল চারদিকে, ভাইরাল হয়ে গেল। কিন্তু সাইয়ুবের সমস্ত চেষ্টা ব্যর্থ হলো। বন্ধুকে আর বাঁচানো গেল না।

সেই দিন, সেই ছবি যেন চিরকাল সাইয়ুবের বুকের মধ্যে খোদাই হয়ে রইল। অমৃতের মরদেহ কাঁধে নিয়ে দু’দিনের মধ্যে সে পৌঁছে গেল গ্রামের বাড়িতে। অমৃতের পরিবার ভেঙে পড়েছিল। সংসারের বড় ভরসাটাই যে চলে গেছে। মা শুভবতী, পাঁচ বোন আর এক ভাই- তাদের দেখভালের দায় একরকম সাইয়ুব নিজের ঘাড়ে তুলে নিল। দুই বোনের বিয়েতেও সে পাশে দাঁড়াল অর্থ সাহায্য দিয়ে।

Zubeen Garg Death: সিঙ্গাপুরে জুবিন গর্গের মর্মান্তিক মৃত্যু, আসামে গ্রেপ্তার দুই অভিযুক্ত

এক বছর পর, নীরজ ঘাইওয়ান তার দরজায় এসে দাঁড়ালেন। জানালেন, এই গল্প তিনি সিনেমায় বলতে চান। "এই অন্ধকার সময়ে এক মুসলিম আর এক দলিত ছেলের বন্ধুত্বের গল্প দেশের দরকার," বলেছিলেন তিনি। সাইয়ুব রাজি হয়েছিলেন। সিনেমার নাম দেওয়া হলো হোমবাউন্ড - এ এক এমন যাত্রার গল্প, যেটা আর কোনোদিন শেষ হয়নি।

তিন বছর কেটে গেছে। এখন সাইয়ুব দুবাইয়ের এক কনস্ট্রাকশন সাইটে কাজ করেন। ঘরে আরও চারজন শ্রমিকের সঙ্গে থাকেন, মাসে বারো-তেরো হাজার টাকা বাড়ি পাঠান। শৈশবের বন্ধু ছাড়া সুরাটে আর ফিরে যাননি। বলেন, "অমৃত ছাড়া পারিনি। তাই নতুন জীবন খুঁজতে দুবাই এলাম।" তবুও এক আফসোস রয়ে গেছে- অমৃতের সেইসব ছবিগুলো, যেগুলো তাঁর পুরোনো মোবাইলে ছিল। মোবাইল নষ্ট হয়ে গেলে হারিয়ে গেছে প্রায় সবই। রয়ে গেছে শুধু স্মৃতি। 

Ankush Hazra: যত নেগেটিভিটি সোশ্যাল মিডিয়াতে! 'কাদা ছোঁড়াছুড়ি বন্ধ হোক', দেবের পর এবার স্পষ্ট কথা 'মুনির' অঙ্কুশের

পর্দার অন্ধকারে আলো ঝলমল করতে করতে যখন "হোমবাউন্ড" এগোচ্ছিল, সাইয়ুবের বুকের ভেতর তখন এক অদ্ভুত টান, শূন্যতার গহ্বর। "অমৃত আর আমি পুলিশ অফিসার হতে চাইনি," সিনেমার এক দৃশ্য দেখে হেসে উঠেছিলেন তিনি। কিন্তু তবুও মনে হয়েছিল, অমৃত যেন ঠিক তাঁর পাশেই বসে আছে।

বারাহুবা দেওয়ারির গ্রামেও পৌঁছে গেছে খবর। সিনেমা এখনও কেউ দেখেনি- নিকটতম প্রেক্ষাগৃহ ২৫ কিলোমিটার দূরে। তবুও গ্রামের মানুষজন অপেক্ষা করছে। সাইয়ুব জানেন, তিনি হয়তো আর কখনো হোমবাউন্ড হতে পারবেন না। কিন্তু অমৃতের স্মৃতি, তাদের বন্ধুত্ব, সেই ছবির মতো অমর হয়ে রয়ে যাবে।

bollywood Bollywood Actor Entertainment News Today