আজ বাইশে শ্রাবণ। রবি ঠাকুরের প্রয়াণ দিবস। বাঙালির মন খারাপের অন্যতম দিন আজ। একদিকে যেমন রবি ঠাকুরের প্রয়াণে বাঙালির অন্তর আজও সিক্ত, তেমনই শেষ কিছুদিন বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া অপ্রীতিকর ঘটনায়, যেভাবে রবি ঠাকুরের মূর্তি ভেঙে ফেলা হয়েছে আপামর বাঙালির মনে ক্ষতর সৃষ্টি হয়েছে। আজ বাইশে শ্রাবণের দিন, ইমন চক্রবর্তীর নতুন গান 'তুমি রবে নীরবে' রিলিজ করেছে। বাংলাদেশের স্বপ্নিল সজীব এবং ইমনের যৌথ ভাবনায় এই গান রিলিজ করেছে। সে প্রসঙ্গে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা সাথে কথা বলেছিলেন গায়িকা।
বহুদিন পর নিশ্চয়ই আবারও পুরনো বন্ধুর সঙ্গে কাজ?
এক্সাইটেড তো খুবই গানটি নিয়ে। স্বপ্নীলের মতো বন্ধু আমার খুব কমই আছে, যাদেরকে আমি সত্যি সত্যি বন্ধু বলে মনে করি। আমি ওর সাথে গান গাইতে খুব কমফোর্টেবল। ও যেমন খুব ভালো মানুষ, তেমনই খুব ভালো একজন গায়ক। ও কলকাতায় আসার পরে আমরা একদিনের মধ্যেই ঠিক করেছিলাম গানটা গাইবো। আর আমাদের তো শেষ আশ্রয় নীলাঞ্জন। ওকেই বললাম, ওই গানটা অ্যারেঞ্জ করে দিল। পরের দিন আমরা শুট করলাম, ভিডিও শুট হয়ে গেল গান তৈরি হয়ে গেল। প্রায় সাত আট বছর পর আমরা একসাথে আবার গাইলাম।
আজকের বিশেষ দিনটা উপলক্ষে নিশ্চই গানটা করা?
একদমই তাই। বাইশে শ্রাবণকে উপলক্ষ করে এই গানটা গাওয়া। রবি ঠাকুরের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আমরা আবারো কাজ করলাম।
আমাদের বিশ্বকবি উনি, দুই বাংলাতে রবি ঠাকুর সমান জনপ্রিয়, কিন্তু বাংলাদেশের এই প্রজন্মের মধ্যে তাকে নিয়ে কি সেই আবেগটি রয়েছে?
নিশ্চয়ই অবশ্যই। বাংলাদেশের মানুষদের মধ্যে রবি ঠাকুরের গান শোনার চল কিন্তু আমাদের এপার বাংলার থেকেও অনেক বেশি। খেয়াল করে থাকবে আমাদের এখানে শুধুমাত্র রবীন্দ্র সংগীত গান এমন শিল্পী খুব কম রয়েছেন। শ্রাবণী সেন কিংবা স্বাগতালক্ষ্মী দাশগুপ্ত এরকম চেনা নামের বাইরে, আমায় তুমি ধরতে পারবে না কারণ আমি সব ধরনের গান গাই। জয়তী দিও সব ধরনের গান গান। কিন্তু ওখানে কিন্তু সে তালিকা অনেক বড়। শুরু করলে শেষ করতে পারবে না। রিজওয়ানা চৌধুরী বন্যা থেকে, অদিতি মহসিন আরো কত আর্টিস্ট রয়েছেন। শুধুমাত্র রবীন্দ্রনাথের গান গাওয়ার প্রবণতা কিন্তু ওদের মধ্যে অনেক বেশি। একবারও বলছি না যে সব ধরনের গান গাইলে রবীন্দ্রনাথের গানকে অপমান করা হয়। কিন্তু ওরা অনেক ভালো লাগা এবং আন্তরিকতা দিয়ে গানটি গান।
আমাদের এখানে কি শুধুমাত্র রবীন্দ্রনাথের গান গাইলে কেরিয়ারে সফলতা পেতে অসুবিধা হয়?
আমি যদি কখনো এটা বলতাম যে আমি শুধু রবীন্দ্রনাথের গান গাইবো, রবি ঠাকুরের গানের বাইরে বেরিয়ে আর কিছু গাইবো না, তাহলে কি অনুপমদা আমাকে গাইতে বলতেন? আমি কি রঙ্গবতী গাইতে পারতাম? এরকম অলিখিত কথা কেউ বলতে পারেন না যে আমি শুধু রবীন্দ্রনাথের গানে গাইবো। শ্রাবনীদির কাছে যদি কোন ফোন যায় অন্য গান গাওয়ার জন্য, তিনি গাইবেন না? গান তো গান- ই। যেকোনো গানই একই রকম পবিত্র। আমার মনে হয় এক্সপ্লোর করার খুব দরকার আছে। রবীন্দ্রনাথ নিজে যখন নিজেকে ভেঙেছেন, এত ধরনের গান তৈরি করেছেন, আমি কেন গাইব না। সবরকমের গান গাও।
অনেকেই বলেন রবীন্দ্রনাথকে গায়ে মেখে নিয়ে বেঁচে আছে, ইমনের কাছে রবি ঠাকুর ঠিক কেমন?
রবি ঠাকুর আমাদের ন্যাশনাল আইকন। উনার থেকে স্মার্ট মানুষ আমি খুব কম দেখেছি। কী করে তথ্য সংরক্ষণ করতে হয় সেটা রবি ঠাকুর খুব ভালো জানতেন। উনি একটা লেখা লিখতেন, সেটাকে কেটে দিয়ে হলেও প্রেজার্ভ করে রাখতেন। আমরা বাঙালিরা, সেরকমভাবে কিছুই সংরক্ষণ করতে জানি না কিন্তু উনি জানতেন। নিজের কাজ কী করে সংরক্ষন করে রাখতে হয় সেটা উনি আমাদের শিখিয়েছেন। উনি আড়াইহাজার গান লিখেছেন তিন হাজার কবিতা লিখেছেন, সেটা তো রেকর্ড। বাদবাকি জীবনযাত্রাটা আমরা দেখছি না। উনি স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগদান করেছেন আর্ট এবং ক্রাফ্টের মাধ্যমে। বাকি ওনার ফিলোজফি, জীবন দর্শন এসব নিয়ে বলার কোন দক্ষতা আমার নেই। উনিতো মহাসমুদ্র আমি তো সবে পাড়ে দাঁড়িয়ে হাতড়ে বেড়াচ্ছি। আমি যদি কোনদিন জলে ডুবে যাই, তবে তুলে আনবেন রবীন্দ্রনাথ, এটুকু আমি বলতে পারি।
এইবছর তোমার একটি গান খুব সুপারহিট, যশ-নুসরতের ছবির, এবং সেই প্রসঙ্গে তুমি বলেছিলে, যে লতা জি যদি সবধরনের গান গাইতে পারেন, আমি কেন নয়? সেই নিয়ে অনেক ট্রোল হয়, কিছু মনে হয়নি তারপর?
তুমি এটা বলছো, আমি একদিন আমার হাজবেন্ডের সঙ্গে হাসতে হাসতে একটি পোস্ট করেছিলাম, যে কল্কি আমার ভালো লাগেনি, আমি দ্বিতীয় হাফের আগেই হল থেকে চলে আসি। সেই নিয়ে কত লোকের কত মন্তব্য জানো? এগুলো নিয়ে কি আলোচনা করা কোন দরকার। আমি কোনদিন লতা মঙ্গেশকর হতে পারবো না। বামুন হয়ে চাঁদে হাত দেওয়ার তো কোন যৌক্তিকতাই নেই। এটা তো সম্ভবই না। আর রইল বাকি শ্রেয়া ঘোষালের কথা। শ্রেয়া এই প্রজন্মের অন্যতম নয়, ও শ্রেষ্ঠ। এরপরে আর কোন কথা হয় না ওকে নিয়ে। কে কার আগে? কে কার পরে, এই নিয়ে শিল্পীদের মধ্যে তুলনা আসে না। শ্রেয়া যেভাবে এই জায়গাটা অর্জন করেছে, এটা সম্পূর্ণ ওর কৃতিত্ব। আমি কোনদিন এটা বলতে পারি না যে আমি শ্রেয়া ঘোষাল হয়ে গিয়েছি। আমি একটা কথা জানি, শ্রেয়া ঘোষাল যেমন দুটো তৈরি হওয়া সম্ভব নয়, ইমন চক্রবর্তী ও দুটো তৈরি হওয়া সম্ভব নয়। আমি জানি আমি কি পারি।
তারকাদের নিয়ে এই যে সমালোচনা, এটার পেছনে কি তাদের সহজলভ্যতা দায়ী?
কিছুটা বলতে পারো। এখন সহজলভ্যতা, অর্থাৎ দুজন অনুরাগীর সঙ্গে হেসে একটু কথা বলা। কেউ একটি ছবি তুলতে চাইলে তার সঙ্গে হেসে ছবি তোলা, এই বিষয়টাকে যদি কেউ সহজ করে নিয়ে নেয়, অর্থাৎ টেকেন ফর গ্রান্টেড নিয়ে নেয়, এটা কিন্তু ভুল। তুমি যদি আমাকে মনে কর আমি লতা মঙ্গেশকার সেটা যেমন চূড়ান্ত ভুল, যেমন তুমি যদি আমাকে ভাবো যে আর পাঁচটা মানুষের মতোই আমি না কোথাও গিয়ে ভুল। আমার মডেস্টি নিয়ে খেলা করাটা মোটেই ঠিক না।
একটি শেষ ব্যক্তিগত প্রশ্ন, সোহিনী - শোভনের বিয়ের পর, সোহিনীর প্রাক্তনদের নিয়ে অনেক কথা হয়েছে, এবং তোমাকে যারা খুব ভালোবাসেন তারা বলেছেন যে তুমি নাকি বেঁচে গিয়েছো, তোমার বক্তব্য?
আমার সত্যি কথা বলতে গেলে তাদের দুজনকে নিয়ে কোন বক্তব্য নেই। দুটো মানুষ বিয়ে করেছেন। একটা বিয়ের পেছনে জানো তো অনেক চাওয়া পাওয়া থাকে। দুজনে ভালো থাকুক। গোটা জীবনের একটা শপথ নিয়ে কিন্তু তারা এক হয়েছে। বিয়েটা নিশ্চয়ই ছেলে খেলা নয়। যখন দুজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ ভেবে নেয় যে তারা একসঙ্গে থাকবেন, তার মধ্যে নিশ্চয়ই কোন সিনসিয়ারিটি থাকে। এবং আমি এটাই চাইবো, যে আশা নিয়ে তারা এক হয়েছেন, সেটা যেন পূর্ণ হয় এবং তারা যেন খুব ভালো থাকে।