করোনা কাটিয়ে কেমন আছেন?
- এখন পুরোপুরি ভাল রয়েছি।
অতিমারীতে শিল্পীরা যেভাবে প্রভাবিত, সেই সম্পর্কে কী বলবেন?
- গোটা বিশ্বেই শিল্পীদের একইরকম অবস্থা। মুশকিলটা হচ্ছে, আমরা যাঁরা গান-বাজনা করি, যে কোনও পারফর্মিং আর্ট, আমরা ট্যাক্স-জিএসটি সবই দিই, সরকারের সমস্ত নিয়মাবলী মেনে চলি। কিন্তু এই বিপদের সময়ে দাঁড়িয়ে কারও একবারের জন্য মনে হচ্ছে না যে এই পেশারও অস্তিত্ব রয়েছে। মানে, এমন একটা ব্যবহার যে গান-বাজনা পেশাটাই বোধহয় বিলুপ্তির পথে। সেটা সরকার দেখে-বুঝেও চোখ বন্ধ করে রয়েছে।
হাওড়া-শিয়ালদা স্টেশন খোলা, যেখানে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ মানুষের যাতায়াত। এতদিন মিছিল, সমাবেশ সবই চলছিল। গঙ্গাসাগর মেলায় যেখানে বিভিন্ন রাজ্য থেকে আসছে, কিন্তু শিল্পীদের শো বন্ধ। আমার প্রশ্ন, শো থেকেই কি খালি করোনা সংগ্রমণ ছড়ায়?
কত বড় বাজেটের অনুষ্ঠান বাতিল হয়েছে, আপনার ব্যক্তিগতভাবে কত লোকসান হয়েছে?
- শো বাতিল হওয়ায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে শিল্পীরা। এমনও হয়েছে যে শিল্পীদের দেওয়া আগাম টাকা ফিরিয়ে নিয়েছেন উদ্যোক্তারা। আমার ক্ষেত্রেই ২ জায়গায় এরকম হয়েছে। কোনওরকম ঝুট-ঝামেলায় থাকা আমার না-পসন্দ, তাই যাঁরা টাকা ফেরত চেয়েছেন, আমি দিয়ে দিয়েছি। আবার অতিমারীর জন্য অনেকে শো অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত রেখেছেন।
২০টার ওপর শো বাতিল হয়েছে আমার। কবে সেই শো-গুলো হবে, সেটাও জানা নেই। আর্থিক দিক থেকে কতটা লোকসান হয়েছে আমার, এখনো সেটা গুনে শেষ করতে পারিনি।
সম্প্রতি রূপঙ্কর বাগচি বলেছিলেন, "যা পরিস্থতি এরপর শিল্পীদের আত্মহত্যা করতে হবে.." ব্যক্তিগতভাবে আপনার কী মত?
- আমার কাছে জীবনটাই সবথেকে বড়। গান-বাজনা বন্ধ হলে আত্মহত্যার পথ বেছে নেওয়া কোনওমতেই কাম্য নয়। আমি সমস্ত শিল্পী বন্ধুদের একটাই কথা বলব, জীবন থাকলে সমস্যা-আনন্দ সব মিলিয়ে মিশিয়েই থাকবে। আত্মহত্যা কোনও সমাধান হতে পারে না। আমার মনে হয়, এরকম নেতিবাচক কথা যদি আমি একজন শিল্পী হয়ে বলি, তাহলে তার প্রভাবটা আরও অনেক বেশি গভীর হবে। সুতরাং, এহেন কোনও নেতিবাচক মন্তব্যকে আমি সমর্থন করি না।
বুঝতে হবে, এই পরিস্থিতি তো সবসময়ে চলবে না। কোটি-কোটি মানুষ করোনায় কোনও না কোনও দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্থ, তাহলে কি সবাই আত্মহত্যা করবেন? লড়াই তো চালিয়ে যেতে হবে। আমাদের সকলের জন্যই এই পরিস্থিতি শিক্ষণীয়।
কী মনে হয়, এই কোভিড পরিস্থিতিতে সরকারের কি শিল্পীদের আলাদাভাবে সাহায্য করা প্রয়োজন?
- পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে বাংলার বহু লোকশিল্পীরা প্রতি মাসে টাকা পান। অনেক আগে থেকেই এটা চালু করা হয়েছে। পাশাপাশি আমি এও বলব যে, আমাদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শিল্পীদের প্রতি অনেকটাই সহানুভূতিশীল, অন্যান্য রাজ্যের তুলনায়। দেশের একাধিক রাজ্যে গত দু-আড়াই বছর ধরে কোনও স্টেজ শো হয়নি। তবে বাংলায় আমরা গতবছরও কিছু শো করেছি, অন্তত ডিসেম্বর অবধি। মন্দের ভাল হলেও! যতটা সম্ভব উনি কিন্তু শো করার অনুমতি দিয়েছেন। আমি কখনোই একজন অকৃতজ্ঞের মতো বলব না যে উনি ভাবেননি। তবে এটা বলতে চাই যে দেশের নেতা-মন্ত্রীরা অভিভাবকের মতো অন্য পেশাগুলোকে যতটা গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন, আমাদের গান-বাজনার পেশাকেও ততটাই গুরুত্ব দিন।
শিল্পীদের কথা ভাবার সময় এসেছে। এরকম চলতে থাকলে কেউ আত্মহত্যা করে মারা যাবেন কিনা জানি না। তবে না খেতে পেয়ে নিশ্চয়ই মরে যাবেন। কারণ, আমাদের মতো শিল্পীরা কতটা ক্রাইসিসের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি, সেটা জানি। লোকাল ব্যান্ড, পাব সবখানেই শো এখন বন্ধ।
কোভিড থেকে সেরে ওঠার পর প্রথমবার 'পৌষপার্বণ' লাইভ শো করতে যাচ্ছেন, কতটা সাবধানতা অবলম্বন করা হচ্ছে সেটে?
- আকাশ আটে এর আগেও কয়েকবার লাইভ পারফর্ম করার সময়ে দেখেছি, মিউজিশিয়ান-টেকনিশিয়ান সবাই মাস্ক পরে থাকেন। অ্যাংকরের থেকেও অনেকটা দূরে যাতে শিল্পীরা বসতে পারেন, মঞ্চে সেভাবেই আয়োজন করা হয়। রবিবার আমি আমার স্টুডেন্টদের নিয়ে পারফর্ম করব। প্রত্যেককে বলা রয়েছে, RTPCR রিপোর্ট নেগেটিভ নিয়েই ওরা যেন অংশগ্রহণ করে।
গায়িকা থেকে নায়িকা। বড়পর্দার পর ওয়েব সিরিজ। এই জার্নিটা শুনব একটু…
- আমার মনে হয়, প্রতিটা আটফর্ম নিয়েই নেড়েচেড়ে দেখা উচিত শিল্পী হিসেবে। একজন সঙ্গীতশিল্পীর অভিনয় ক্ষমতা থাকা দরকার নাহলে স্টেজে পারফর্ম করবে কী করে! সেটা আমার মধ্যে শৈশব থেকেই ছিল। সেটারই বহিঃপ্রকাশ আর কী।
অভিনেত্রী ইমন চক্রবর্তীকে আবিষ্কার করার কৃতিত্ব কাকে দেবেন?
- আমি সর্বক্ষণ-ই অভিনয় করি। আমার মধ্যে একটা ড্রামা-ক্যুইন সবসময়েই বিরাজ করে। সবাই জানে। তাই পুরো কৃতিত্বটাই আমার। আমি কারণ-অকারণে ড্রামা করি।
স্বামী নীলাঞ্জন ঘোষের কী মত?
- ও পুরোপুরি নির্বিকার। ও যতটা চুপচাপ, আমি ততটাই ড্রামা-ক্যুইন।
সংসার কেমন চলছে?
- খুব ভাল।
সামনেই বিবাহবার্ষিকী, কী প্ল্যান?
- কোনও প্ল্যান নেই। আমার কিংবা নীলাঞ্জনের কারো কাছেই টাকা নেই।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন