Rashid Khan Passes Away: প্রয়াত ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের অন্যতম নক্ষত্র শিল্পী উস্তাদ রাশিদ খান। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৫৬ বছর। প্রস্টেট ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে বিগত বেশ কয়েকমাস ধরেই হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। মঙ্গলবার সকালে উস্তাদজির শারীরিক অবস্থা অবনতি হয়। বিকেল ৩টে ৪৫ মিনিটে মৃত্যু হয় শিল্পীর।
শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় মঙ্গলবার সকালে ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয়েছিল প্রবাদপ্রতিম সঙ্গীত শিল্পী রশিদ খানকে। বিকেলে তাঁকে দেখতে বেসরকারি হাসপাতালে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরে মুখ্যমন্ত্রী থাকা অবস্থাতেই চিকিৎসকরা শিল্পীর প্রয়াণের কথা ঘোষণা করেন। জানান, হাসপাতালে থাকার ফলে রশিদ খানের সংক্রমণ হয়েছিল। ফলে উস্তাদজিকে ভেন্টিলেশনে পাঠাতে হয়। মঙ্গলবার বিকেল ৩টে ৪৫ মিনিটে তাঁর মৃত্যু হয়।
এরপরই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শোকপ্রকাশ করে বলেন, 'আমি গঙ্গাসাগরে ছিলাম৷ সেখান থেকে এলাম জয়নগর৷ তখন থেকেই একটু একটু খবর পাচ্ছিলাম৷ তার পর আমি তো নবান্নে এলাম৷ নবান্ন থেকে পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার খবর পাই৷ আমি তার পর সরাসরি হাসপাতালে চলে আসি৷ আমি তখনও জানতাম না৷ রশিদের প্রয়াণের খবরে আমি হতবাক৷ আমাকে বলত, তুমি আমার মা৷ গোটা দেশ ওস্তাদ রশিদ খানকে চেনে৷ সন্তান ও স্ত্রী রয়েছেন৷ ওঁরা হয়ত ভাবছেন, ওঁরা অভিভাবকহীন হল, কিন্তু না, আমি আছি, অভিভাবক হিসাবে৷ সবসময় ওদের পাশে থাকব৷ ওর ছেলেকে ভাল করে প্রশিক্ষণ দিয়েছে৷ আমার এই কথাগুলো বলতে বলতে গায়ে কাঁটা দিচ্ছে৷ কিন্তু কিছু তো করার নেই৷ ও আমাকে ব্যক্তিগত ভাবে এত ভালবাসত৷ ওকে আমি বিদেশের চিকিৎসার জন্য পাঠিয়েছিলাম৷'
আরও পড়ুন- বাংলাকে ভালবেসে ফেরা হয়নি ‘দেশের’ বাড়ি, সেই বাংলাতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ পদ্মবিভূষণ শিল্পীর
স্মৃতিচারণায় শোকে গলা ধরে আসছিল মুখ্যমন্ত্রীর৷ তাও বলছিলেন, 'আমাকে মাঝে মাঝে ও ফোনে ভয়েস মেসেজ পাঠাত৷ ও যখন অসুস্থ, আমাকে মেসেজ পাঠাত৷ জিজ্ঞাসা করত, দিদি তুমি কেমন আছো? আমার বাড়িতে এসো? আমার সঙ্গে পারিবারিক সম্পর্ক ছিল৷ শুনলাম কালকে রাত পর্যন্ত গল্প করেছে৷ আমি তো ভাবতে পারিনি৷ তার পর খবর পেয়ে ছুটতে-ছুটতে আসছি৷ বছরটা শুরু হল একটা বেদনার দিন দিয়ে৷ আমার রাশিদের মুখটা বড় মনে পড়ছে৷'
এদিন হাসপাতাল চত্বরে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, মঙ্গলবার হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে রাশিদের দেহ নিয়ে যাওয়া হবে পিসওয়ার্ল্ডে। সেখানেই রাখা থাকবে দেহ। বুধবার সকাল সাড়ে ৯টায় রবীন্দ্র সদনে নিয়ে যাওয়া হবে দেহ। এখানেই শ্রদ্ধা জানাবেন তাঁর ভক্তরা। বেলা একটায় কলকাতা পুলিশের তরফে প্রয়াত শিল্পীকে গান স্যালুট দেওয়া হবে। তারপর বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার হবে শিল্পীর দেহ। সেখানে নানা আচার পালনের পর কাঁধে করে নিয়ে যাওয়া হবে টালিগঞ্জ কবরস্থানে। সেখানেই হবে শিল্পীর শেষকৃত্য।
বিগত কয়েকমাস ধরেই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিল্পী রশিদ খান। জানা গিয়েছিল, অতীতে তাঁর প্রস্টেটে ক্যানসার হয়েছিল। সেখান থেকে ধীরে ধীরে তিনি সুস্থ হয়ে উঠছিলেন। তার মধ্যেই তাঁর মস্তিষ্কে একাধিক বার স্ট্রোক হয়। এর পরই তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেই থেকে চিকিৎসাধীন এই প্রখ্যাত শিল্পী। তবে হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছিল চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছিলেন রশিদ খান। আশা করা হয়েছিল, সুস্থ হয়ে উঠবেন তিনি। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না।
উত্তরপ্রদেশের বাদাউনে ১৯৬৮ সালের ১ জুলাই জন্ম রশিদ খানের। ছোটবেলা থেকেই তাঁর বেড়ে ওঠা সঙ্গীত পরিবারে। রশিদ উস্তাদ গুলাম মুস্তাফা খানের ভাইপো। কাকাই প্রথম তাঁকে মুম্বাই নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে গানের তালিম নেন রশিদ খান। এরপর উস্তাদ নিসার হুসেন খানের কাছে বাড়িতেই গানের তালিম নেন তিনি। ইনায়েত হুসেন খাঁ-সাহিব প্রতিষ্ঠিত রামপুর-সাসওয়ান ঘরানার শিল্পী রশিদ খান৷ মূলত শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের শিল্পী রশিদ খান। তবে বলিউড, টলিউডেও প্রতিভার সাক্ষর রেখেছেন এই শিল্পী। ‘যব উই মেট’, ‘কিসনা’, ‘হাম দিল দে চুকে সনম’, ‘মাই নেম ইজ খান’, ‘রাজ ৩’-র মতো বলিউড ছবিতে যেমন তাঁর গান রয়েছে, তেমনই ‘মিতিন মাসি’, ‘বাপি বাড়ি যা’, ‘কাদম্বরী’-র মতো বাংলা ছবিতেও রয়েছে রশিদের প্রতিভার সাক্ষর।