দেবস্মিতা দাস
ছোট্ট ইভান লিভারসেজের ব্রেন ক্যানসার, হাতে সময় বড্ড কম। আর ইচ্ছের তালিকা বা উইশ লিস্টটা লম্বা। মা নিকোল জানতে পারেন ইভানের শখ ক্রিসমাস দেখার। কিন্তু জীবনস্রোতকে ডিসেম্বর অবধি বইয়ে নিয়ে যাওয়া অসম্ভব সাত বছরের ছোট্ট প্রাণের পক্ষে। তবে উপায়? ভাবতেই পারেননি সেন্ট জর্জের মানুষ এই অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলবেন। কানাডার অন্টারিওতে তিরিশ হাজারের সেন্ট জর্জ শহর অক্টোবরেই মাতল ক্রিসমাসে। এই গল্পে অনুপ্রাণিত হয়েই কলকাতায় সৃজিত মুখোপাধ্যায় তৈরি করলেন 'উমা'। সেই ছবির প্রিমিয়ারে উপস্থিত থাকতেই কলকাতায় প্রথমবার পা রাখলেন নিকোল ওয়েলউড।
ছবিটা দেখার শুরুতেই বুক কেঁপে উঠেছিল এই সাহসী মায়ের। কৃতজ্ঞতা স্বীকারে ইভান ও সেন্ট জর্জের উল্লেখ কাঁদিয়েছিল তাকে। আর ছবির ক্লাইম্যাক্সে উদগ্রীব হয়েছিলেন উমা ঠিক থাকবে কী না ভেবে।
উমা দেখে কেমন লাগল ?
নিকোল: নিজের মধ্যে কোথাও আবার শক্তি পেলাম। অনুভূতিগুলো তাজা হয়ে উঠল। ছবিটা এত সুন্দর করে বুনেছেন সৃজিত, আমার ভাল না লেগে উপায় ছিলনা। কলকাতার আতিথেয়তা আমায় অভিভূত করেছে। ইভানের গল্প এত মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছে সেটা আশাতীত। ইভানের গল্প আর 'উমার' চিত্রনাট্যে অনেক মিল রয়েছে। 'উমা' আমাকে নতুন করে অনুপ্রেরণা দিয়েছে।
ভেবেছিলেন ইভানের গল্প সবার হয়ে উঠবে ?
নিকোল: না! এখনও বিশ্বাস হয় না ইভান, সেন্ট জর্জের গল্প কলকাতার কোন পরিচালককে নাড়া দেবে। কলকাতায় আসার পর আমার মনে হয়েছিল সত্যিই ছবিটা হয়ে গেছে। আমার মতে 'উমা' মাস্টারপিস। সিনেমাটা দেখার জন্য সাবটাইটেলের দরকার নেই বিশ্বাস করুন।
সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের আপনার কাছে পৌঁছনর পর জার্নিটা কেমন ছিল?
নিকোল: আই ওয়াজ শকড! মেসেজটা পাওয়ার পর পরিবারকে জানাই। বলি একজন ভারতীয় পরিচালক আমায় মেসেজ করেছেন। প্রথমে ভেবেছিলাম এটা ফ্রড নয় তো? সত্যি তো? কিন্তু সৃজিত যেভাবে আমায় টেক্সট করে, সেখানে এতটুকু ভনিতার জায়গা ছিল না। ইভান ওকে উদবুদ্ধ করেছে, এরপরেই তৈরি হয় 'উমা'। ছবি তৈরির সময়ই সৃজিত আমায় বলেছিল ২০১৮ তে যখন প্রিমিয়ার করব তখন আপনাকে আসতেই হবে। বলেছিলাম আমি সিঙ্গল মাদার, তাই ইভানের চিকিৎসার পর কিছুই সেভ করতে পারিনি। সৃজিত বলেছিল আপনি আমাদের অতিথি।
আরও পড়ুন, Adil Hussain: ঘুম কম হচ্ছে আর জেট ল্যাগ বেশি, তবে দিব্যি লাগছে
কলকাতা আপনার কেমন লাগছে? ঘুরেছেন?
নিকোল: ভীষণ ভাল! কলকাতা আসার জন্য অনেকদিন ধরে অপেক্ষা করেছি। এই শহরটায় বিশেষ টান আছে, আপন করে নেয়। আগে অনেকে বলেছে, তবে আজ বুঝতে পারছি কলকাতা প্রকৃত অর্থেই সিটি অফ জয়।
সারা....?
নিকোল: ওর সঙ্গে তো আমার ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান আছে। যিশুর পরিবার ভীষণ ভাল। আমি তো ওদের কানাডাও আসতে বলেছি। সারাকে ওয়ান্ডারল্যান্ড, স্নো হিল দেখাবো। ও খুব খুশি। সারা একদম ইভানের মতো। ইভানের স্ট্রেংথ ছিল ওর হাসি। ক্রিসমাসের ইচ্ছে পূরণের জন্য যে অক্লান্ত পরিশ্রম সেন্ট জর্জ করেছিল তা ভোলার নয়। ১৮ ঘন্টার বেশি সময় কাজ করেছিল তারা অক্টোবরে শহরটাকে ক্রিসমাসের মতো তৈরি করতে।
আর পেঙ্গুইনটা ?
নিকোল: ইট ইজ অ্যা পিস অফ ইভান। সবসময় এটা আমার সঙ্গে থাকে। যেখানেই যাই ওকে ভুলি না। মনে হয় ইভান সঙ্গে আছে।