শিক্ষাঙ্গন, সেটা কি অপরাধের জায়গা? সেখানে কি জেনে বুঝে দিনের পর দিন বছরের পর বছর অন্যায় অপরাধ করা যায়? একটি নামজাদা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে ছাত্র নির্যাতন, কেন? শিক্ষাঙ্গনে সিসিটিভির প্রয়োজনীয়তা কেন? নিয়মানুবর্তিতা - সুরক্ষা এগুলো কোথায়? এবার ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার কাছে এক্সক্লুসিভ যাদবপুরের প্রাক্তনী তথা জনপ্রিয় অভিনেত্রী অরিজিতা মুখোপাধ্যায়।
তাঁর বর্তমান পরিচয়, তিনি বাবুর মা। এছাড়াও ওয়েব সিরিজ এমনকি ফাটাফাটি ছবিতে কাজ করেছেন তিনি। কিন্তু মনে প্রাণে সে নিজেও একজন যাদবপুরের ছাত্রী। স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পড়াশোনা করেছেন সেখানে। আজ যখন যাদবপুর প্রসঙ্গে এত চর্চা, অভিনেত্রীর প্রথম কথা একটাই, "যখন শুনলাম যে যাদবপুরে এমন হয়েছে এবং বছরের পর বছর এটি হয়ে আসছে, আমি আমার বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। যারা সেসময় হোস্টেলে থাকতো তারা স্বীকার করে যে হ্যাঁ! এরকম আমাদের সঙ্গেও হয়েছে। কিন্তু, আমার প্রশ্ন একটাই! হবে কেন? একটি বাচ্চা যে, সবেমাত্র পড়াশোনা করতে গিয়েছে তাঁর সঙ্গে এটি হবে কেন?
আরও পড়ুন - ‘সাচ্চা বামেদের ভয় পাচ্ছে…’, মৌনতা ভেঙে যাদবপুর কাণ্ডে ‘স্বাধীন-জটিল’ মন্তব্য কমলেশ্বরের
কোনটা বডি শেমিং, কোনটা হ্যারাসমেন্ট আর কোনটা সহজ ভাষায় মজা পাওয়া এটা কে ঠিক করে দেবে? প্রশ্ন তুললেন অরিজিতা। অভিনেত্রীর জিজ্ঞাস্য এখানেই, "একজন পড়ুয়াকে ভয় দেখানোর অধিকার বা স্বাধীনতা কে দিয়েছে? এত সাহস আসে কোথাথেকে? একটা শিক্ষাপ্রাঙ্গণে সবসময় বহিরাগতদের আনাগোনা কেন হবে? মাঠে বসে প্রকাশ্যে নেশা করবে কেন? আমি প্রাক্তনী হিসেবে ভীষণ লজ্জিত। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গায়ে হিপোক্রেসির দাগ লাগলে সেটা খুব লজ্জার। কতটা অমানসিক পরিস্থিতি হলে প্রথম বর্ষকে উদ্ধার করা হয়?"
ইন্ট্রো... যাদবপুরের বুকে কেন এই শব্দটি মোটামুটি নানা কলেজ ক্যাম্পাস থেকে বিশ্ববিদ্যালয় সর্বত্র শোনা যায়। প্রথম বর্ষের ছাত্রদের উত্তর দিতে হয় নানা প্রশ্নের। কিন্তু কেন? অরিজিতার কথায়, "এটা শোনাও ভয়ঙ্কর যে ফার্স্ট ইয়ারকে আলাদা রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ওদের উদ্ধার করা হচ্ছে। কিন্তু, যা বর্তমান পরিস্থিতি, বাচ্চাদের সঙ্গে অত্যাচার। তাতে, আজ অন্তত এটা বলব ওদের প্রাণে বাঁচাতে এর থেকে সহজ রাস্তা আর নেই। ওদের প্রোটেক্ট করতে গেলে, লজ্জার সঙ্গে বলছি মানুষের অভব্য অসভ্য আচরণ থেকে বাঁচাতে গেলে কিছু করার নেই। র্যাগিং মারাত্মক জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে। ফার্স্ট ইয়ারকে আলাদাই রাখতে হবে। তাতে যদি, পরবর্তীতে এধরনের মানসিকতা ওদের মধ্যে না পৌঁছায়।"
ক্যাম্পাসে সিসিটিভি ক্যামেরা নেই কেন? বা, আদৌ এর প্রয়োজন আছে কি? এই নিয়েও নানা তরজা! কিন্তু অরিজিতা স্পষ্ট দাবি করলেন, "একটা সময় আমরাও অনেক লড়াই করেছি। যে শিক্ষাঙ্গন তো ক্রিমিনালদের জায়গা নয়। তাহলে কেন এখানে সিসিটিভি থাকবে? কিন্তু, আজ যা দেখছি একটাই কথা বলব, যাদবপুরের ক্রিমিনালদের ধরতে গেলে অন্তত কিছু জায়গায় সিসিটিভি রাখা খুব জরুরি। এটা তো জানা যাবে যে অপরাধ করেছিল কারা।"
আরও পড়ুন - ‘স্বাধীনতার নামে ক্রাইম খুব মারাত্মক…’, যাদবপুর কাণ্ডে সরব প্রাক্তনী-অভিনেত্রী পায়েল
যাদবপুর তাঁকে অনেককিছু শিখিয়েছে। যদিও, ছাত্রী হিসেবে হোস্টেলে থাকা হয়নি তাঁর। কিন্তু, এই বিশ্ববিদ্যালয়েই তিনি উদার হতে শিখেছেন। সমাজকে প্রশ্ন করতে শিখেছেন। অভিনেত্রী সহজ ভাষাতেই বললেন, গ্রিন জোনে বসে নেশা করার ঘটনা আমার চোখেও পড়েছে। প্রশ্ন অনেক, "যে একজন বহিরাগত ছাত্র সে দুপুর তিনটে থেকে বসে এও ঘৃণ্য অপরাধ করবে, আর কেউ কিছু বলবে না কেন? যেহেতু আমি এই ক্যাম্পাসের প্রাক্তনী আমার মা একটি প্রশ্ন করেছেন আমায়...বাবা মায়েরা কী শিখিয়ে পাঠাবে সন্তানকে? যে আমরা যেখানে তোমায় পাঠাচ্ছি সেখানে তোমায় বুলি করা হবে, হেনস্থা করা হবে? এতে আমাদের মনের অবস্থা কী হয়? একটা পতাকা ঝান্ডা নিয়ে মিছিলে হেঁটে নিজেকে খুব উচ্চ প্রমাণ করে মানসিকতা নীচু রাখার কোনও মানে হয় না। আর এমন সংখ্যা যাদবপুরে কম নেই..."।