/indian-express-bangla/media/media_files/2025/09/05/javed-2025-09-05-15-15-39.jpg)
জাভেদের জন্য নয়া বিতর্ক...
পশ্চিমবঙ্গ উর্দু একাডেমির সাহিত্য উৎসব স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যেখানে গীতিকার ও কবি জাভেদ আখতারকে প্রধান বক্তা হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।
মিডিয়া সূত্রে জানা যায়, রাজ্যের প্রভাবশালী ইসলামী সংগঠন জমিয়তে উলামা কলকাতা, আখতারকে আমন্ত্রণ জানানোর তীব্র বিরোধিতা করে এবং সরকারকে সতর্ক করে জানায় যে, তাদের দাবি উপেক্ষা করা হলে রাজ্য জুড়ে আন্দোলন হবে।
স্বাধীন মতপ্রকাশ বনাম রাজনৈতিক হিসাব
এই ঘটনাকে সাধারণভাবে “বাকস্বাধীনতার প্রশ্ন” হিসেবে দেখা যায়। শিল্পী, সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবীদের শৈল্পিক স্বাধীনতা রক্ষা নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। তবে শুধু স্বাধীন মতপ্রকাশের যুক্তি দিলেই এ ধরনের ঘটনার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পুরোপুরি বোঝা যায় না। বড় প্রশ্ন হলো- একজন নির্দিষ্ট শিল্পী বা তাঁর সৃষ্টিকে কেন হঠাৎ, ধর্মের স্বঘোষিত রক্ষকদের চোখে আপত্তিকর মনে হয়? কীভাবে এই “আঘাত” ছড়িয়ে পড়ে এবং রাজনৈতিক বিতর্কে রূপ নেয়? আর এর পেছনে রাজনৈতিক নেতৃত্বের ভূমিকা কী?
জমিয়তের চিঠি ও বার্তা
জমিয়ত কলকাতার সভাপতি মৌলানা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী, আখতারের বিরুদ্ধে যে চিঠি দেন, তাতে দুটি বিষয় বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, তিনি লেখেন- “উর্দু একাডেমির কাজ হওয়া উচিত উর্দু ভাষা ও লেখকদের সেবা করা, ঈশ্বরের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানো নয়।” এখানে এক ধরনের সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় পরিচয়ের মিশ্রণ ঘটানো হয়েছে। বাস্তবে, উর্দু কোনো ধর্মীয় ভাষা নয়, কিন্তু একে ইসলামের সঙ্গে জুড়ে দিয়ে জমিয়ত মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি হিসেবে নিজেদের অবস্থান জোরদার করার চেষ্টা করেছে। একাডেমি যেহেতু সংখ্যালঘু বিষয়ক ও মাদ্রাসা শিক্ষা দপ্তরের অধীন, তাই “সংখ্যালঘু মর্যাদা”র প্রশ্নকে তারা রাজনৈতিকভাবে কাজে লাগিয়েছে।
দ্বিতীয়ত, চিঠিতে বলা হয়- যদি তাদের দাবি মানা না হয়, তবে তারা গণতান্ত্রিক উপায়ে আন্দোলন করবে। এ প্রসঙ্গে জমিয়ত স্মরণ করিয়ে দেয়, কীভাবে তারা একসময় তসলিমা নাসরিনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে তাঁকে বাংলা ছেড়ে যেতে বাধ্য করেছিল। এভাবে নাসরিনের ঘটনাকে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরে আখতারকেও 'ইসলামবিরোধী' তকমা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে, যদিও তাঁর কোনো নির্দিষ্ট বক্তব্য বা লেখা উদ্ধৃত করা হয়নি।
রাজনৈতিক লাভের হিসাব
আখতারের মতো পরিচিত কবি ও চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্বকে ঘিরে, বিতর্ক তৈরি করা মিডিয়ার নজর কাড়ার সহজ উপায় ছিল। তাঁর সাংস্কৃতিক মূলধনকে ঘিরে বিরোধিতা করলে তা রাজনৈতিকভাবে লাভজনক হতে পারে, জমিয়তের নেতারা সেটা ভালোভাবেই জানতেন। তাই তারা ইচ্ছে করেই চিঠি প্রকাশ্যে আনেন এবং ব্যাপক প্রচার ঘটান। এর ফলে তারা কেবল জনসমর্থনই নয়, রাজনৈতিক মহলেও দর কষাকষির সুযোগ তৈরি করতে সক্ষম হন।
উপসংহার
উর্দু একাডেমির এই অনুষ্ঠান বাতিল হওয়া কেবল সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের ক্ষতি নয়। এর মাধ্যমে জমিয়ত আবারও প্রমাণ করতে পারল যে তারা মুসলিম সংস্কৃতি ও ধর্মীয় পরিচয়ের প্রতিনিধিত্ব দাবি করতে পারে। “আহত অনুভূতির রাজনীতি”র এটাই সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ দিক। যেখানে সাংস্কৃতিক পরিসরকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক মূলধন বাড়ানো হয় এবং জনসমাজে নিজেদের কর্তৃত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা হয়।