লাঠিতে ভর করে ক্যাফের দিকে যখন এগিয়ে আসছেন, না চাইতেও আপনার চোখ আটকাবেই। রুপোলি পর্দা থেকে সরেই এসেছিলেন তিনি, আবার ফিরলেন ওয়েব সিরিজের দৌলতে। কমেডির আড়ালে বুদ্ধিদীপ্ত বাচনভঙ্গি, চরিত্রায়নে তাঁর মেধাবি ছোঁয়াকে অনেকদিন আগেই গ্রহণ করেছিলেন দর্শক। অবশ্য কিউয়ের তৈরি ওয়েব সিরিজ 'তারানাথ তান্ত্রিক'-এর জন্য এখন তিনি হইচই ফেলে দেওয়া তারকা। তিনি লেখক-অভিনেতা জয়ন্ত কৃপলানি। ধুমায়মান কফির কাপে চুমুক দিয়ে আড্ডা জমল তাঁর সঙ্গে।
এতদিন পর অভিনয়ে ফিরে আসার একমাত্র কারণ কি কিউ?
হ্যাঁ! বলতে পারেন। আসলে ভেবেছিলাম অভিনয় থেকে আমি অবসর নিয়ে ফেলেছি। হঠাৎ একদিন কিউ এল বাড়িতে। "চা খাওয়াবে।" সেদিন প্রায় কুড়ি বছর পরে ওর সঙ্গে দেখা হল। সহকর্মী ছিলাম আমরা। এসেই বলল, "চা-টা বাদ দাও। এই নাও স্ক্রিপ্ট।" বলেছিলাম, এসব বিদেশি ভাষা আমি পড়ব না। শেষ বলে দিল, "তুমি পড়ো না পড়ো, কাজটা করতে তো হবেই। আমি আর কাউকে নেব না।" এরপর না বলে কী হত?
কাজটা কেমন হল?
সমস্ত সমস্যা আমি আগেই ওকে বলে দিয়েছিলাম। বাংলা জানি না। লাইন মুখস্থ করতে সময় লাগে। এত অত্যাচার করেছি স্মরণশক্তির ওপরে যে আর মুখস্থ করতে পারি না। কিউ বলে দিয়েছিল, "এসব আমি সামলাব।" ওর সহকারী সুরজিৎ সেন বাড়িতে এসে মহড়া দিতেন। আমার উচ্চারণে পাশ্চাত্যের প্রভাব বেশি ছিল, সেগুলো ঠিক করতে হয়েছে।
বাংলা শুধু নয়, এক্কেবারে সাধু বাংলা...
তাহলেই ভাবুন। তবে মুখস্থ করার পরে প্রয়োজন সেভাবে পড়েনি। যতই মুখস্থ করুন না কেন, শেষ মূহুর্তে ঠিক সংলাপ বদলে দিত। একটু প্র্যাকটিস করলেই রপ্ত করতে পারতাম।
আর মেকআপ?
বাবা! মুম্বই থেকে নাগেন্দ্র এসেছিল এই কাজটার জন্য। প্রতিদিন সকাল এবং বিকেলে দেড় ঘন্টা করে অত্যাচার চালাত। একদিন বললাম, "ছেড়ে দাও না, আমি এরকমই ঘুমিয়ে পড়ি। কাল তো আবার শুট আছে।" শুনে বলল, "না তোমাকে রাস্তায় পুলিশ পাকড়াও করে নেবে। চল তুলে দিই" (হাসি)। মেকআপটা একটু কষ্টকর ছিল।
আরও পড়ুন, কারও ঘনিষ্ঠ না হওয়া সত্ত্বেও পদ্মশ্রী পেয়েছি: মনোজ বাজপেয়ী
এখন আপনাকে পর্দায় দেখা যায় না কেন?
ঠিক জানি না। যে কাজগুলো পাচ্ছিলাম তাতে আত্মতুষ্টি হচ্ছিল না। যদিও তন্ত্রমন্ত্রের ধারণাতে আমার বিশ্বাস নেই। কিন্তু 'তারানাথ তান্ত্রিক'-এর চিত্রনাট্যটার মধ্যে পশ্চাৎমুখী কিছু ছিল না। কাজটা ভীষণ আনন্দ করে করেছি। নয়তো বলেই দিয়েছিলাম করব না।
ওয়েব মাধ্যমে কাজ করতে কেমন লাগল?
অভিনয়ে আলাদা করে কিছু করার নেই। মজাটা হলো, তোমাকে সিনেমা হলে যেতে হবে না। এখানে বিষয় নিয়ে খেলা যায়। সেই স্বাধীনতাটা রয়েছে। এখনো সেন্সর ঢোকেনি এই মাধ্যমে, তবে নিজের মতো করে প্রত্যেকে সেন্সর করে নেয়। বিশ্ব এখন হাতের মুঠোয়, সুতরাং শিক্ষা বাড়াতে হবে। সেন্সরের কাটাছেঁড়া করে লাভ নেই।
আরও পড়ুন, ‘অভিযাত্রিক’ সত্যজিৎ রায়ের ছবির রিমেক নয়: মধুর ভান্ডারকর
নাসিরউদ্দিনের বক্তব্যে পরিপ্রেক্ষিতে দেশে যে ঝড় উঠেছে... (প্রশ্ন থামিয়ে)
নাসির আমার ভীষণ ভাল বন্ধু। সেটা না হলেও বলতাম, ওর কথা আমি সমর্থন করি। নাসির যেভাবে, আমিও একইভাবে সন্তানদের মানুষ করেছি। যা পরিস্থিতি আসছে, তাতে তো আমার ছেলে মার খাবে। ও তো জানেই না, ও হিন্দু-মুসলিম-খ্রীস্টান না কি। কেউ যদি নাসিরের পাশে আমার দাঁড়ানো পছন্দ না করে, আমার বিরুদ্ধে আদালতে যেতে পারে। কিন্তু ও যা বলেছে সেটা আমি বিশ্বাস করি। নাসিরকে আমি চিনি, ও কেমন মানুষ আমি জানি। সমাজের জন্য নাসির সামান্যতম ক্ষতিকরও নয়। কিন্তু কিছু দক্ষিণপন্থী অপগণ্ডের দল যেভাবে ওকে আক্রমন করেছে সেটা ন্যক্কারজনক।
বর্তমান দেশের পরিস্থিতি আপনাকে কতটা নাড়া দেয়?
আপনি তো দেখছেন কত ক্ষতি হচ্ছে। কানহাইয়া, উমর খালিদ-দের মতো বুদ্ধিমান ছাত্রদের 'টুকড়ে টুকড়ে গ্যাং' বলছে, আর নিজের দেশকে এরা কী করে রেখেছে? উত্তর-পশ্চিম ভেঙে গিয়েছে, বাংলাকে ভাঙতে চাইছে, কেরালায় অরাজকতা চালাচ্ছে বিজেপি। আমি মোদী কিংবা অমিত শাহকে ভয় পাই না। একুটু আমি জানি, তারা যেভাবে দেশের ক্ষতি করছে, সেটা অকল্পনীয়। তবে আমি নিশ্চিত যে বাংলার মানুষ বিজেপিকে ঢুকতে দেবে না।