তাঁকে পর্দার সত্যজিৎ হিসেবেই বেশিরভাগ মানুষ চেনেন। অভিনেতা হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন প্রতিনিয়ত। তাই, হয়তো এবার একদম অন্যরকম একটা চরিত্র। কারণ, জিতু কামাল এই প্রথম অরণ্য চট্টোপাধ্যায় একজন গোয়েন্দার ভূমিকায়। ছবির নাম 'অরন্যর প্রাচীন প্রবাদ'। কিন্তু, সেটা একদম ভিন্ন একটা চরিত্র। অভিনেতার এই চরিত্রটা যেমন আলাদা তেমনই বেশ টুইস্ট রয়েছে। নিজেই নানা প্রশ্নের উত্তর দিলেন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার কাছে।
গোয়েন্দা চরিত্র তো নিশ্চই এই প্রথম, অভিজ্ঞতা কেমন?
হ্যাঁ, গোয়েন্দা চরিত্রটা এই প্রথম। অভিজ্ঞতা বলতে, যাদের পর্দায় দেখেছি তাঁরা তো গোয়েন্দাগিরিটাই করেছেন, এটা একটু আলাদা। মানে, একজন খুব সাধারণ মানুষ সে কী করে গোয়েন্দা হয়ে গেল! এটাই গল্প...
অর্থাৎ, ছবিতে বাই প্রফেশন আপনি গোয়েন্দা নন?
অরণ্য চট্টোপাধ্যায়, আসলে একজন উঠতি ক্রিকেটার! তিনি আবার কারণবশত গোয়েন্দা হয়ে ওঠেন। সেটাই হলো আসল গল্প। ও হ্যাঁ, সে কিন্তু আবার ডাক্তারি প্র্যাকটিস করে। এবার যখন আবার নতুন করে প্র্যাকটিস শুরু করেন ভাবছে, তখন নানা কারণে গোয়েন্দা হয়ে ওঠা তাঁর।
এরমও সম্ভব? এত টুইস্ট অ্যান্ড টার্ন! আশাবাদী এরকম একটা গোয়েন্দা চরিত্র নিয়ে?
দেখো, চরিত্রটা নিয়ে আমি খুব আশাবাদী। সত্যি বলতে গেলে নাহলে আমি সাইন করতাম না। নতুন পরিচালক এবং প্রযোজক একটু ভাবিয়েছিল। কিন্তু তারপরে দেখলাম, গোয়েন্দা ছবি হলেও একটা ফ্রেশ বিষয় আছে। আমার ভাল লেগেছে ছবিটা দেখতে।
একটা ছোট্ট প্রশ্ন, বাংলার গোয়েন্দাদের সঙ্গে কি কোথাও গিয়ে শারীরিক ব্যায়াম, কসরত কিংবা যোগসাধনার সম্পর্ক রয়েছে? আপনাকেও দেখা গেল সেরকমই...
না না, গোয়েন্দাদের সঙ্গে সত্যি বলতে গেলে সেরকমভাবে ব্যায়াম কিংবা যোগসাধারণার মিল নেই। ফেলুদা কিন্তু যোগা শুরু করেছিলেন অনেক পরে। সত্যজিৎ রায়ের লেখায় সেই উল্লেখ আমরা পেয়েছি। কিন্তু অরণ্য একদম আলাদা। সে তো স্পোজর্টসম্যান। তাঁকে তো শরীর চর্চা করতেই হবে। একজন ক্যাপ্টেন, সে যদি নিজেকে ফিট না রাখে...
একজন মানুষ, তাঁর কি এহেন মাল্টিপল পেশায় যুক্ত হওয়া সম্ভব?
কেন নয়? যদি নেশা থাকে তাহলে কেন না? আমাদের প্রতিদিনের জীবনে ইনভেস্টিগেশন থাকে। আর সবচেয়ে বড় কথা, আমাদের জীবনে প্রথম গোয়েন্দা হচ্ছেন আমাদের মা। গোয়েন্দা বিষয়টা আমাদের রক্তে রয়েছে। দরজা বন্ধ করে যদি আমরা কিছু করি, মা কিন্তু বুঝতে পারতেন, তাঁর থেকে লোকানোর কিছুই নেই। সুতরাং এটা সম্ভব। যে কেউ গোয়েন্দা হতেই পারেন। আমি বিশ্বাস করি না, একটা মানুষ একটা কাজের জন্যই বিখ্যাত হতে পারে। আমরা বহু মানুষকে দেখেছি পেশা বদলে দিতে। আমি নিজেই খেলার ছেলে...
তারকাদের জীবনে সিক্রেট গোয়েন্দা থাকলে কি অসুবিধা হয়?
তারকাদের জীবনে গোয়েন্দা না থাকলে চলে? না, আমার এটা নিয়ে বলার আছে। কারণ, এই যে যারা আমাদের জীবনে সিক্রেট গোয়েন্দা, তাদের জন্য আমরা কপাল কুঁচকে ফেললেও মনে মনে একটা আত্মতুষ্টি থেকে যায়। কেউ যদি মনে করে আমায় ফোন না করে, আমার কিন্তু একটা প্যালপিটিশন শুরু হয়ে যাবে। আমার অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন শুরু হবে। অভিনেতা যেটা চায়, সেটা কপাল কুঁচকে চায়, আর অভিনেতা যেটা চায় না সেটা কিন্তু হাসিমুখে চায়। আমি যেমন আমার জীবনে অনেক ঘটনা চাইনি কিন্তু সেটা ঘটে গিয়েছে, আমি সেটাকে মেনে নিয়েছি।
জীবনের সেই পর্যায়ে যখন ছিলেন, তখন নিজেকে গুটিয়ে রাখতে ইচ্ছে হয়নি?
না না, আমার কোনোদিন সেসব মনে হয় না। আমি, ব্যক্তিগত এবং পেশাদার জীবন আলাদা করতে জানি। কেউ এটা বলতে পারবে না, যে যখন একটা সম্পর্কের শেষ নিয়ে এত কাটাছেঁড়া চলছে, আমি সেটে গিয়ে কোনও খারাপ আচরণ করেছি, বা খারাপ ব্যবহার করেছি কারওর সঙ্গে।
কারওর জীবনে গোয়েন্দা হতে চান?
না না... একদম না! ধুর, সময় নস্ট.. টাকা পাওয়া যায় না। সময় নস্ট হয়ে। আমি আমার পেশা নিয়ে দিব্য খুশি। কোনোদিন যদি বদলাতে হয় সেদিন ভেবে দেখব!
ইন্ডাস্ট্রিতে নিজেকে নিয়ে কোনও গুজব বা রহস্য উঠতে দেখেছেন?
রোজ, প্রতিদিন! কিছু না কিছু রটবেই...আমি কিন্তু খুব ওপেন বুক। যেটা ঘটে সেটা আড়ালে রাখি না। আমি পোস্ট করে দি। আমি জানিই না যেটা আমায় নিয়ে রটে। আর, তাঁর পাশাপশি যাকে আমার সঙ্গে যোগ করা হচ্ছে সে নিজেও জানে না। এসবে মাথাব্যথা নেই। একদিন একটা হেডলাইন দেখলাম মিথিলার কোমরে ব্যথা, আমার ঘাড়ে ব্যথা... কী বলব? এসব নিয়ে ভেবে লাভ নেই!
ছবিটা নাকি ত্রিকোণ প্রেমের?
না না, একদম না! আমার কোনও প্রেম নেই। গোয়েন্দা গল্পে আর যা থাকার সব আছে। রহস্য, রোমাঞ্চ, থ্রিল, তারপর ধরো সমাজের কিছু খারাপ দিক, এই যে চিকিৎসা নিয়ে যে কালোবাজারি, কেলেঙ্কারি সব রয়েছে, কিন্তু প্রেম নেই।
জিতু কামাল পর্দার সত্যজিৎ রায় হিসেবে অনন্য, এই তকমাটা আপনার কাছে লাভ না লোকসানের?
আমি ভাবীও নি লাভ লোকসানের কথা। কেউ যদি দাগিয়ে দেয়, যে এই চরিত্রই তাঁর জীবনে সেরা। তাহলে কিন্তু খুব মুশকিল। আগে হত, এখন আর হয় না। কারণ, এখন সিনেমাটিক প্ল্যাটফর্ম এখন খুব অন্যরকম হয়ে গিয়েছে।
তারকা তৈরি হয় এখন? কোথাও কি তাঁদের সহজলভ্যতা...
সহজলভ্যতার আগে হচ্ছে কন্টেন্ট। এত কন্টেন্ট তৈরি হয় এখন যে বলার ভাষা নেই। আমি বলে বোঝাতে পারব না। আগে যে ধরনের ছবি তৈরি হতো, এখন সেসব ছবি তৈরি হয় না। স্টারডম, সুপারস্টারডম এখন আর নেই। তাঁর থেকেও বড় কথা, বলিউড দেখো। শাহরুখের জায়গায় বরুণ ধাওয়ান, কিংবা টাইগার শ্রফ যেতে পেরেছে? নিশ্চই না! কিন্তু তাদের প্রতিভা কম নেই।
জিতু কি নতুন সম্পর্কে জড়াতে পারে?
না না! আমি না প্রতিবন্ধী দোকান, নিজেকে ওটাই মনে হয়। সেই দোকানে কাস্টমার আসে না। এই কয়েকমাসে কাউকে মনে ধরেনি। আমার সেই মানসিক শক্তিটা নেই, এটাই বলতে পারো। একটা সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে দুম করে আরেকটায় জড়িয়ে পড়া, আমায় দিয়ে হয় না।