৪ ফেব্রুয়ারি প্রেক্ষাগৃহে আসছে 'বাবা বেবি ও' (Baba Baby O)। তার প্রাক্কালেই লাঞ্চ ব্রেকে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-র সঙ্গে সিনে-আড্ডায় যিশু সেনগুপ্ত (Jisshu Sengupta)। শুনলেন সন্দীপ্তা ভঞ্জ
কেমন আছেন?
এই তো ভালই চলছে।
অতিমারীতে সিনেমার রিলিজ থেমে কিন্তু আপনি ছুটে বেড়াচ্ছেন। আজ কলকাতা তো কাল মুম্বই…
এই রে, এটা নিয়ে আর কী বলব! যেখানে যেমন শুটিং হচ্ছে, ছুটছি। করোনার জন্য অনেক কাজ স্থগিত ছিল। সেগুলোই এক এক করে শেষ করছি এখন। শুধু আমি নই, সবাই তো করছে। (হেসে) আমার মতো এরকম অনেকেই অর্ধেক সিনেমার কাজ করে ঘরে বসে ছিলেন। এবার অতিমারীর কোপ হালকা হতেই শিডিউল আবার ব্যস্ত হয়ে গেল যথারীতি। এটাই তো জীবন!
সারোগেসি এখন বিশেষ চর্চায়। আর এই সময়েই 'বাবা বেবি ও'র রিলিজ। কী মনে হয় প্রচারের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ভ্যালু-অ্যাডিশন?
হ্যাঁ প্রাসঙ্গিক তো বটেই! আমরা এই ছবির শুট করেছিলাম গত বছর মার্চে। তখন সারোগেসি এত চর্চায় ছিল না। তবে সম্প্রতি সারোগেসির মাধ্যমে প্রিয়াঙ্কা চোপড়া মা হওয়ায় এটা নিয়ে আবার সবাই কথা বলছেন। (রসিকতা করে) প্রিয়াঙ্কা বোধহয় জানতেন না আমাদের 'বাবা বেবি ও' রিলিজের তারিখটা।
আসলে সারোগেসি বিষয়টা হয়তো অনেকেই শুনেছেন। কিন্তু এটা আসলে কী? এর পদ্ধতিটাই বা কী? সেটা নিয়ে মানুষের মধ্যে অনেক ভুলধারণা ছিল, সেই প্রেক্ষিতেই অরিত্র (মুখোপাধ্যায়), জিনিয়া, উইন্ডোজ 'বাবা বেবি ও' তৈরির পরিকল্পনা করে। তবে এই ছবি একজন সারোগেটেড সিঙ্গল ফাদারের গল্পের পাশাপাশি মিষ্টি ভালবাসার গল্পও বলে। একেবারেই ওই আসুন, বসুন, দেখুন.. ধরণের ছবি নয়। খুব সুন্দর একটা গল্প বলা হয়েছে।
শোলাঙ্কি কথা প্রসঙ্গে বলছিলেন, আপনাদের নাকি একটা ডিপ্লোমা কোর্স হয়ে গেছে যে কীভাবে বাচ্চা সামাল দিতে হয়! তো দুই খুদের সঙ্গে শুট করার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
বাচ্চা দু'টোকে দেখলেই চটকাতে ইচ্ছে করবে দর্শকদের। আমি তো শুটিংয়ের ফাঁকে সবসময়ে ওদের চটকে গেছি। বাচ্চাদের সঙ্গে আগেও কাজ করেছি। কিন্তু এরা একেবারেই কচি! আমার নিজের যেহেতু দুই মেয়ে, ওদের ছোটবেলায় যেভাবে দেখাশোনা করেছি, সেই অভিজ্ঞতাটাই কাজে লাগিয়েছিলাম শুটের সময়। দুধের বোতল কীভাবে ধুতে হয়, কীভাবে ন্যাপি পাল্টাতে হয়.. জল কতটা গরম কীভাবে মাপতে হয়.. এই জিনিসগুলো আমার জানাই ছিল। বলতে পারো, একেবারে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। সেই দিক থেকে দেখতে গেলে নতুনভাবে কিছু শিখতে হয়নি কিংবা নতুন কোনও অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হয়নি। কিন্তু এই বাচ্চা দুটো একেবারে অবিশ্বাস্য! আমার বাড়িতে যেদিন স্ক্রিপ্ট রিডিং হয় আমি, অরিত্র ভেবেছিলাম ওদের জন্য শিডিউল ৩-৪ দিন আরও বাড়াব। কারণ, একেবারেই তো ছোট। কখন ওদের মুড বিগড়ে যায়, বা আমরা হয়তো ঠিকঠাক শট পেলাম না! কিন্তু বিশ্বাস করবেন না, আমাদের শিডিউলের একদিন আগেই শুট শেষ হয়ে গিয়েছিল। মানে ওরা এত ভাল শট দিয়েছে, কী বলব। আমাদের থেকেও 'প্রো' ওরা। যখন যেরকম চেয়েছি আমরা সেরকমই শট দিয়েছে। ওদের সঙ্গে কাজ করে প্রচুর মজা হয়েছে।
উইন্ডোজ সবসময়েই ভিন্ন স্বাদের গল্প ভাবে, 'বাবা বেবি ও'র গল্পটাই কি হ্যাঁ বলার কারণ?
একদমই। প্রথমত উইন্ডোজ-এর প্রতিটা ছবির বিষয়বস্তুই ইউনিক। ভিন্নরকম গল্প নিয়ে কাজ করে ওরা। আর সেভাবে যদি দেখি, ওদের সব ছবিই সুপারহিট। দর্শকদেরও বেজায় প্রশংসা কুড়িয়েছে। সেদিক থেকে লোভ একটা ছিলই উইন্ডোজ-এর সঙ্গে ভাল চিত্রনাট্যে কাজ করার। এর আগেও অবশ্য করেছি। তবে হ্যাঁ, 'বাবা বেবি ও'র গল্পটার জন্যই একবারে সবুজ সংকেত দিয়েছিলাম।
শোলাঙ্কি বলছিলেন, "যিশুদা প্রথম থেকেই আমার ক্রাশ"...
তাই নাকি এটা তো আমায় কোনও দিন বলেনি, ধরতে হবে ব্যাটাকে…! (হেসে)
সেই প্রেক্ষিতে আপনাদের অনস্ক্রিন রসায়ন কিংবা শুটের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে একটু শুনব..
চিত্রনাট্যের প্রয়োজনে রোম্যান্স তো করতেই হয়! তবে শোলাঙ্কির সঙ্গে কাজ করে ভাল লেগেছে। খুব আন্ডারস্ট্যান্ডিং মেয়ে। আমরা সবাই হয়তো বলছি যে, ওর প্রথম ছবি। কিন্তু এটা ওর প্রথম অভিনয় তো নয়! শোলাঙ্কি টেলিভিশনের জনপ্রিয় অভিনেত্রী। একাধিক মেগাতেও কাজ করেছে। তো সিরিয়াল আর বড়পর্দায় অভিনয় করার মধ্যে খুব একটা তফাৎ তো নেই। হ্যাঁ, থিয়েটারের ক্ষেত্রে সেটা আলাদা। সেই প্রেক্ষিতে বলব, অভিনেত্রী হিসেবে শোলাঙ্কি খুবই ভাল। সিনিয়র হিসেবে পরিচালক যেটা চেয়েছেন কিংবা আমিও যদি কখনও কিছু বলতাম যে এটা ওভাবে করলে ভাল হয়…। শোলাঙ্কি কিন্তু ঝটপট সেভাবে ক্যামেরার সামনে শট দিত। দক্ষ অভিনেত্রী হওয়ার খুব ভাল গুণ এটা। খুব মিষ্টি মেয়ে।
বলিউডের কঙ্গনা, বিদ্যা বালন থেকে রানি মুখোপাধ্যায়, প্রথমসারির অনেক নায়িকার সঙ্গেই পর্দায় রোম্যান্স করলেন। কোস্টার হিসেবে কাকে এগিয়ে রাখবেন?
এই রে…!! সবাই এগিয়ে। কাউকে পয়লা নম্বরে রাখব না। একজনের নাম বললে, অন্যজন যদি রেগে যায়, তখন তো অসুবিধে হয়ে যাবে আমার আবার। এঁদের সবার সঙ্গেই ভবিষ্যতে আরও কাজ করার ইচ্ছে রয়েছে।
অনুরাগীদের অভিযোগ, 'যিশুদা এখন মুম্বইকে বেশি সময় দিচ্ছেন, টলিউডে খুব কম দেখা যায়'… এই প্রসঙ্গে কী বলবেন?
একদমই না। এই তো 'বাবা বেবি ও' করলাম। এইবছর আরও ২টো বাংলা ছবি করার কথা চলছে। আসলে সিনেমার গল্প কিংবা চরিত্র দেখেই আমি প্রস্তাবে সায় দিই। সেটা টলিউড, বলিউড কিংবা দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রি সবক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। সম্প্রতি 'শ্যাম সিংহ রয়' নামে আমার একটা তেলেগু ছবি রিলিজ করল। তার আগে 'মায়েস্ত্রো' করেছি। আসলে যেখানে যেরকম চরিত্র পাই, তার ১টা কিংবা ১০টা সিন থাকতে পারে, কিন্তু গল্পে আমার চরিত্রটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ, দিনের শেষে সেটাই আমার কাছে ম্যাটার করে।
টলিউডের অনেক তারকা এখন সাংসদ-বিধায়ক। আপনি এসব থেকে দূরে থাকেন..
(থামিয়ে) আমি পাহাড় থেকেও দূরে থাকি, জানেন তো! আমার আবার সমুদ্র পছন্দের। রাজনীতি করতেই হবে, এমন নয়।
আপনার বন্ধুরা যখন প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক ময়দানের শিবিরে, আর আপনার অন্দরমহলে যখন একসঙ্গে আড্ডা বসে, তখন রাজনীতি নিয়ে আলোচনা হলে তাতে কতটা অংশগ্রহণ করেন আপনি?
(রসিকতা করে) আরে আমার বন্ধু একটি মেয়েকে বিয়ে করলে, আমাকেও যে তাকে বিয়ে করতে হবে, বিষয়টা এমন তো নয়। বন্ধুত্ব বন্ধুত্বের জায়গায়, আর আলোচনা তার জায়গায়। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, প্রত্যেকেরই একটা রাজনৈতিক মতাদর্শ থাকে। পলিটিকস বিষয়টাকে আমি ফুল টাইম জব হিসেবেই দেখি। অভিনয় করা যেমন আমার কাজ, রাজনীতিকদের কাজ রাজনীতি করা। সেই প্রেক্ষিতে দাঁড়িয়ে আমার এখনও অন্তত মনে হয়নি যে রাজনীতিতে নামব। তাই দূরে থাকি।
কন্ট্রোভার্সিকে কীভাবে দেখেন? বিশেষত, সোশ্যাল মিডিয়ায় তারকাদের মধ্যে যেভাবে আজকাল কাদা ছোঁড়াছুড়ি হয়..
নাম আছে বলেই কন্ট্রোভার্সি হয়। আপনি যে পেশাতেই থাকুন না কেন, জনপ্রিয়তা না থাকলে কাউকে নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয় না! কাউকে নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে মানেই বুঝে নিতে হবে, সে কোনও একটা জায়গায় পৌঁছেছে। আমি নিজে অবশ্য সোশ্যাল মিডিয়া থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করি। নেটদুনিয়াতে সবাই নিজের ভাল দিকটার কথাই বলে। আমার কোনও ছবি যদি আজকে ফ্লপ হয়, আমি তো সেটা নিয়ে লিখি না। কিন্তু হিট করলে, সবাই সোশ্যাল মিডিয়ায় সেটা জানান দেন। ঠিক যেমন বন্ধুর সঙ্গে ঝগড়া হলে সেখানে গিয়ে যেমন ঢাক পেটাই না! পরিবর্তে তার সঙ্গে ভাল ভাল ছবি আপলোড করি। পেশার জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় যতটা প্রয়োজন ততটা সক্রিয় থাকি।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন