ডিসেম্বর থেকে মে হয়ে গেল নতুন একটা বাড়ি বানিয়েছেন, কিন্তু থাকতে পারেননি। হাতে গুনে কুড়ি-পঁচিশ দিন থেকেছেন। হেসে বলছেন, "এখনও ফ্যান লাইটের সুইচ চিনি না।" এতটাই ব্যস্ত টলিউডের ব্যোমকেশ, অর্থাৎ যিশু সেনগুপ্ত। এবার নিজের নতুন ছবি, পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের 'উমা' নিয়ে মুখোমুখি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার।
সৃজিত আর যিশু কী এখন জুটি?
এই রে! এটা তো সৃজিতই ভাল বলতে পারবে। তবে হ্যাঁ, ওর সব ছবিতেই গেস্ট অ্যাপিয়ারেন্সে হলেও আমাকে রাখে।
আপনারা তো সারা (যিশুর মেয়ে এবং উমার নায়িকা) ছবিতে কাজ করবে না বলেছিলেন, তাও ছবিটা হয়ে গেল
আমি আর নীলাঞ্জনা না বলেছিলাম, সারাই রাজি হয়েছে। বলতে পারো, এই ছবিতে না আমার মেয়ে কথা শুনেছে, না সৃজিত। পুরোটাই পরিচালকের দায়িত্ব। সারা ভাল অভিনয় করেছে এখন কেউ বললে বাবা হিসাবে গর্ব হয়।
শুটিংয়ের ফ্লোরে তো আপনি মজা করেন...
আমি মজা করে কাজ করতে ভালবাসি। এই ছবিতেও করেছি, তবে শুটিং চলাকালীন মজা করার জায়গা ছিল না, ইচ্ছেও ছিল না কারোর। আমি, অঞ্জনদা, অর্নিবাণ, নীল, সবাই ফাঁকা সময় পেলে প্রচুর আড্ডা দিয়েছি।
রিল-রিয়েলের এই জার্নিটা ইমোশনাল ছিল?
সত্যি কথা বলতে, অনেকে বলে না প্রচুর ভাবনাচিন্তা করে প্রিপারেশন নিয়ে তবে চরিত্রগুলো করে? আমার ক্ষেত্রে এক একটা ছবি আলাদা শিক্ষা। তবে এই ছবিটা স্পেশাল আমার মেয়ে রয়েছে বলে। আর সত্যি ঘটনাটা সবাই জানে।
অনেক সময় শট দিয়ে গিয়ে সৃজিতকে বলেছি একটু সময় দে আমাকে। ডাবিং করার সময়ও 'চোক' করে গেছি, পরের দিন কাজ শেষ করেছি। ছবিতে যদি আমার মেয়ে না হয়ে অন্য কোন বাচ্চা অভিনয় করত তাহলেও এটাই হত। আসলে আমি একজন বাবা, এই সত্যিটা তো চিরন্তন। কেউ কেড়ে নিতে পারবে না।
ছবিটা করতে রাজি হয়েছিলেন সারার জন্য?
সৃজিতকে না বলার জায়গা থাকে না। অনেক সময় তো স্ক্রিপ্টও পাই না। (একটু ভেবে) যিশু সেনগুপ্ত অভিনেতা হিসেবে চিত্রনাট্য পেয়েছিল 'জাতিস্মরে' আর পেয়েছে 'এক যে ছিল রাজায়'। আর 'উমাতে' সারার দৌলতে পেয়েছিলাম। তবে রাজি হয়েছিলাম চিত্রনাট্যের জন্য। সারা যে করবে সেটা তো অনেক পরে জেনেছি।
সারার তো প্রথম ছবি...
এই ছবিতে আমার অভিনয় করা ছাড়া কোন ক্রেডিট নেই। আমার আর সৃজিতের অলিখিত চুক্তি ছিল সারাকে কিচ্ছু বলা যাবে না। কখনও যখন বাবা হিসেবে বলে ফেলেছি, সেট থেকে বের করে দিয়েছে সৃজিত। তবে সারা আমার থেকে ভাল অভিনয় করেছে। দর্শক ওর এত প্রশংসা করেছেন যে আমার টেনশন হচ্ছে। সাধারণত এটা আমার হয় না।
কিন্তু অভিনেতাদের তো ছবি রিলিজের সময় টেনশন হয়
ওই জন্যই তো আমার নাম আবির নয়, ঋত্বিক নয়, পরম নয়। সবার মতো আমার ইমোশনটাও আলাদা। আমার কেরিয়ারগ্রাফ যারা জানে তারা জানে, জীবনে এত ওঠা-পড়া দেখেছি যে আলাদা করে রিলিজের সময় টেনশন হয়না। বরং শুটিংয়ের সময় হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যায়, ডায়লগ ভুলে যাই।
সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের মাইলস্টোন 'উমা'?
আমি বলব 'উমা' সৃজিতের সবচেয়ে ইমোশনাল চিত্রনাট্য।
'উমা' কেন দেখবেন কেউ?
কেন দেখবেন আমি সত্যি জানি না, পছন্দ না হলে দেখবেন না। কারণ সারাকে বাদ দিয়ে সবার অভিনয় দর্শক দেখেছেন, তবে গল্প ভাল হলে আর ঠিক করে বলতে পারলে মানুষ ছবি দেখেন।
টলিউড-বলিউড মিলিয়ে আপনি তো ব্যস্ততম অভিনেতা?
(হেসে) ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত আমি প্রচুর ট্রাভেল করেছি। একদিন 'মনিকর্ণিকার' শুটিং করেছি তো পরের দিন ফিরে সোজা এসেছি 'এক যে ছিল রাজার' ফ্লোরে।
ছুটিতে যাওয়া দরকার?
সেটারও সময় নেই। 'উমার' রিলিজের দিন হয়তো থাকতেও পারব না। গোয়াতে থাকব মহেশ মাঞ্জেরকরের ছবির জন্য। ফিরে এসেই 'ডান্স বাংলা ডান্সের' শুটিং। এটা শেষ করেই আবার বম্বে যাব মহেশজির ছবির জন্যই। কলকাতা ফিরেই বঙ্গ সম্মেলনের জন্য রওনা দেব আমেরিকা।
বেজায় ব্যস্ত..
(বলে চলেছেন) আমেরিকা থেকে এসে আবার 'ডান্স বাংলা ডান্সের' শুটিং। এরপর জুলাইয়ে একটা ছবির কথা হচ্ছে, সম্ভবত আমি করব না। (প্রায় এক নিঃশ্বাসে) যদি না করি তাহলে একটা ছুটি পাব। তবে কোথাও যাব না, কলকাতাতেই থাকতে চাই। নতুন বাড়ির সুইচ চিনব। ওহ! সৃজিতের নতুন ছবির শুটিং এগিয়ে জুলাইয়ে হওয়ার কথা, তাহলে তো শেষ। তারপর একটা ছবির কথা চলছে, সেটা ঠিক হলে লন্ডনে যেতে পারি চল্লিশ দিনের জন্য।