বাংলা সাহিত্যজগতে ইন্দ্রপতন। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ কেড়ে নিল কবি শঙ্খ ঘোষকেও (Sankha Ghosh)। কবির প্রয়াণে গোটা সংস্কৃতিমহলে শোকের ছায়া। আজ বাকরুদ্ধ জয় গোস্বামী (Joy Goswami), শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়রা (Shirshendu Mukhopadhyay)। অগ্রজপ্রতিম কবিকে চিরতরে হারিয়ে তাঁদের মন্তব্য, "এক মহা বটবৃক্ষের পতন। মাথার উপর থেকে যেন ছাদ সরে গেল।" যে মানুষটির লেখনী কিনা হয়ে উঠেছিল সাধারণ মানুষের প্রতিবাদের ভাষা, সভ্য সামজের প্রথম সারিতে থেকেও যিনি কিনা কলম তুলে নিয়েছিলেন স্বৈরাচার, অন্যায়ের বিরুদ্ধে, সেই মহাকবিই প্রাণঘাতী ভাইরাসের কোপে আজ মহাপ্রস্থানের উদ্দেশে রওনা হলেন। শঙ্খ ঘোষ নিঃসন্দেহে এক স্পর্ধার নাম।
উল্লেখ্য, শঙ্খ ঘোষের মৃত্যুর খবর প্রকাশ্যে আসতেই শোকবার্তা জ্ঞাপন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। তাঁর বাসভবনে পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছেন সাধন পাণ্ডে এবং ফিরহাদ হাকিম। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চেয়েছিলেন রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষকৃত্য সম্পন্ন হোক। কিন্তু অমত করেছেন প্রয়াত কবির পরিবার। তাঁদের কথায়, তিনি চিরকাল যেভাবে নীরবে থেকেছেন, তাঁর শেষযাত্রাতেও বজায় থাকুক সেই অনাড়ম্বরতা। কারণ, গান স্যালুট ছিল শঙ্খ ঘোষের নাপসন্দ। তাই পরিবারের সঙ্গে কথা বলেই করোনায় আক্রান্ত প্রয়াত কবির শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে জয় গোস্বামী বলেন, "এক মহা বটবৃক্ষের পতন হল। তিনি ছিলেন জাতির বিবেক। অসহায় ও শোকগ্রস্ত বোধ করছি আজ। বিগত ৪৫ বছরের যোগাযোগ।" তাঁর কণ্ঠে আক্ষেপ, "আমার কী হারাল, তা আমিই জানি। বাংলা সাহিত্য জগতের এই ক্ষতি অপূরণীয়।"
সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের কথায়, "মাথার উপর থেকে যেন ছাদ সরে গেল। আজ মনটা খুব খারাপ। কিছুদিন আগেই ফোন করেছিলাম। মেয়ে ধরেছিলেন। শঙ্খদা ফোন ধরতেন না। শঙ্খদা কেমন আছেন জানতে চেয়েছিলাম। এত বয়সে করোনা। ফুসফুসের অসুখ। একটা আশঙ্কা, দুঃশ্চিন্তা ছিল। সেই আশঙ্কাই সত্যি হল।"
"আমাদের বিপুল ক্ষতি হল", বলতে গিয়ে কণ্ঠরোধ হয়ে আসে নাট্যব্যক্তিত্ব বিভাস চক্রবর্তীর (Bibhash Chakraborty)। তবে শঙ্খ ঘোষের সৃষ্টির মধ্য দিয়েই মানুষ তাঁকে আজীবন মনে রাখবেন বলেও জানান তিনি।
তিলোত্তমার কথায়, "শাসকের বিরুদ্ধে স্পষ্ট কথা বলতেন।" ব্রাত্য বসু (Bratya Basu) বললেন, "কবি শঙ্খ ঘোষ একটা স্বতন্ত্র যুগ। একটা যুগের অবসান ঘটল আজ। আমি তাঁর ছাত্র ছিলাম। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর কাছে পড়েছি, ক্লাস করেছি। তিনি আমার শিক্ষক। তাঁর শান্ত কণ্ঠস্বর, মৃদু ভাষণ তাঁর ব্যক্তিত্ব অনুপ্রেরণা জোগায়। তাঁর কবিতার মধ্যে দিয়ে আমাদের কৈশোর, যৌবন কেটেছে। তিনি আমাদের মধ্যে ছিলেন, আছেন ও থাকবেন।"
কবি শঙ্খ ঘোষের প্রয়াণে শোকবার্তা জ্ঞাপন করলেন নাট্যকার কৌশিক সেনও (Kaushik Sen)। বললেন, "বিরাট বড় ক্ষতি হল। শঙ্খবাবুর চলে যাওয়াটা সত্যিই বড় ক্ষতি। আক্ষরিক অর্থেই অপূরণীয় ক্ষতি।"