একই গল্পকে দুরকমভাবে দর্শকের কাছে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলেছেন অনেকটা সময় ধরে। গোটা শহর জুড়ে ধোঁয়া। মায়ানগরী মুম্বই কাঁপল একের পর এক বিস্ফোরণে। পুলিশ ফোর্স হতচকিত। এরমধ্যেই কলকাতা ফিরবে একটি মেয়ে (ইয়াসমিন)। এত গোলমালে তাকে স্টেশনে পৌঁছে দেয় আবির (দেব)। পর্দায় দেখা যায় ছত্রপতি শিবাজি টার্মিনাস মুম্বই। মুম্বই-হাওড়া দুরন্ত এক্সপ্রেস ছাড়ল ২ ঘন্টা দেরিতে। ট্রেনের কামরাতেই ইয়াসমিনের সঙ্গে আবার দেখা হয় আবিরের। 'সহযাত্রিনী'কে খাবার দিয়ে তার সঙ্গে ভাব জমায়। এরপর ইয়াসমিনের সামনে ল্যাপটপ রাখে আবির। কলকাতায় প্রাক্তন আইবি ক্লার্ক প্যারালাইজড ইয়াসমিনের বাবা (প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়)-এর মাথায় বন্দুক ধরা। ইমতিয়াজ কোথায় বলতে হবে ইয়াসমিনকে। নইলে কলকাতায় বাবা, জার্মানিতে বর আর খুড়তুতো বোনকে মেরে ফেলবে দেব ওরফে আলতাফ কবীর। তবে আসল লক্ষ্য লস্কর-ই-তৈবার বোমা বিশেষজ্ঞ আব্দুল করিম তুন্ডা। এখানেই গল্পের চমক।
আলতাফ, ইয়াসমিন ও ইমতিয়াজ- এই তিনটি চরিত্রকে ঘিরে টানটান উত্তেজনায় তৈরি অনিকেত চট্টোপাধ্যায়ের কবীর। স্বীকার করতে হয় অভিনেতা হিসেবে নিজেকে ভেঙেছেন দেব। আর তিন নম্বর ছবিতে রুক্মিণির ডি-গ্ল্যাম লুকে বাজিমাত। তবে এধরনের ছবিতে শেষপর্যন্ত টেনশন ধরে রাখা পরিশ্রমের। ছবিতে গান নেই খুব একটা। তবে ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্তের আবহ মাঝে মাঝে দর্শককে নড়েচড়ে বসাবে। তবে মুম্বইয়ের গোয়েন্দা প্রধানের চরিত্রে প্রিয়াঙ্কার বিশেষ কিছু করার ছিলনা। থিয়েটার অভিনেতা অর্ণ মুখোপাধ্যায়ের ক্যামেরার সামনে অভিনয় প্রশংসার দাবি রাখে। জিহাদির ভূমিকায় দেখা গেছে থিয়েটারের আর এক পরিচিত মুখ কৃষ্ণেন্দু দেওয়ানজিকে। ছবির আশি শতাংশই শ্যুট করা হয়েছে ট্রেনে।
কবীরের প্রিমিয়ারে দেব, রুক্মিণি, কৌশিক গাঙ্গুলি ও প্রসেনজিৎ
বাস্তবসম্মত দিক থেকে দেখলে চোখে লাগতে পারে বেশ কিছু বিষয়। প্রথমার্ধ অনেক বেশি ছাড়া ছাড়া। দেব-রুক্মিণির মুখে আরবী ভাষায় বারবার অভিবাদন হঠাৎ কানে লাগার মতো। তবে চেষ্টায় কোনও খামতি রাখেননি অভিনেতা জুটি। ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের জঙ্গি ইয়াসিন ভাটকলের প্রসঙ্গ আসায় উত্তেজিত দর্শকের উৎসাহে ভাটা পরতে পারে অট্টহাসির কাঁচা অভিনয়ে। দেবের মুখে মমতা ব্যানার্জির ট্রেন--- নো স্টপেজ নো নৌক্টঙ্কি ডায়লগটার গল্পের সঙ্গে কোনও যোগসূত্র খুঁজে নিতে হবে। দুরন্তের ওই কামরা পুলিশ কবজা করেছিল মেনে নিলেও অত গুলির আওয়াজ কেন অন্য কামরা পর্যন্ত পৌঁছল না, তা নেহাৎই অবাস্তব ঠেকেছে। কলকাতায় স্লিপার সেলের কাজকর্ম নিয়ে আরও বিশদ জানার প্রত্যাশা রয়ে গেল। অতি বাস্তব মৃত্যুদৃশ্য রচনার সময়ে রুক্মিনীর মাথায় গুলির ক্ষত চিহ্ন-র মেকআপ আরও একটু বাস্তবিক দেখানো গেলে ভাল হত। মেকআপের দিকটা খেয়াল করেননি পরিচালক। তবে এই সিনেমা দেখতে পারেন। কেন? অভিনয়ের চেষ্টা আর চিত্রনাট্যের জোরে। অভিবাদন দেব।