হাসির ওপারে চলে গিয়েছে মোদী সরকার, নবতিপর কিংবদন্তী শিল্পী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়কে পদ্মশ্রী দেওয়ার প্রস্তাবে কেন্দ্রীয় সরকারকে এভাবেই বিধলেন কবীর সুমন (Kabir Suman)। তাঁর মন্তব্য, "ওঁর ছাত্র-তুল্যও নন, এমন দুজনকে পদ্মবিভূষণ দেওয়া হয়েছে, আর সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের কেরিয়ারটা দেখুন, এই বয়সে পদ্মশ্রী দেওয়ার প্রস্তাব! পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু যখন বেঁচে ছিলেন, তিনি একসময়ে গোটা ভারতের শিল্পীদের মধ্যে থেকে মহম্মদ রফি আর সন্ধ্যাকে দিল্লিতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন একসঙ্গে। আর শেষবয়সে এসে কিনা 'গীতশ্রী'কে এমন অবমাননা। এই বয়সে ধাক্কা খেলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। ওঁকে অপমান করল কেন্দ্র। খুবখারাপ লাগছে। বাঙালিদের ওপর বিদ্বেষ রয়েছে বিজেপি সরকারের। সেই বিদ্বেষ থেকেই সন্ধ্যাকে পদ্মশ্রী দেওয়া। ওঁর গান বাংলার প্রাণ। বহু কিংবদন্তীর সুরে গেয়েছেন উনি।"
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার শেষ বিকেলেই সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় দৃঢ় কণ্ঠে জানিয়েছেন যে, তিনি পদ্মশ্রী পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করছেন। প্রবাদপ্রতীম গায়িকার অভিযোগ, আগে থেকে কিছুই জানায়নি কেন্দ্রীয় সরকার। তাছাড়া, ফোনে যেভাবে পদ্মশ্রী সম্মান দেওয়ার প্রস্তাব রাখা হয়েছে, সেটা কিংবদন্তী শিল্পীর কাছে যথেষ্ট অপমানজনক ঠেকেছে। ১৯৭০ সালে প্লেব্যাক সিঙ্গার হিসেবে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন। ২০১১ সালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সর্বোচ্চ সম্মান বঙ্গ বিভূষণে ভূষিত করেছেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়কে। আর তারও ১ দশক পেরিয়ে কিনা শেষবেলায় নবতিপর কিংবদন্তী শিল্পীকে পদ্মশ্রী সম্মান দেওয়ার প্রস্তাব রেখেছে মোদী সরকার! মেনে নিতে পারেননি ‘গীতশ্রী’ সন্ধ্যা (Legendary singer Sandhya Mukherjee)। অতঃপর কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে দিল্লি থেকে ফোন আসতেই পত্রপাঠ সেই পদ্ম-সম্মান প্রত্যাখ্যান করে দেন প্রবাদপ্রতীম গায়িকা। সেই প্রেক্ষিতেই বুধবার প্রেস ক্লাবে এক সাংবাদিক বাঠকের আয়োজন করে প্রতিবাদ করেন বাংলার বুদ্ধিজীবীরা।
<আরও পড়ুন: ‘পদ্মশ্রী জুনিয়র শিল্পীদের জন্য, গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের জন্য নয়’, বলছেন কন্যা সৌমি>
সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কবীর সুমন, আবুল বাসার, শুভপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায়ের মতো ব্যক্তিত্বরা। শুভাপ্রসন্ন বললেন, "সন্ধ্যার অবদান সম্পর্কে সুমন খুব গুছিয়ে বললেন। এই বয়সেও তাঁকে উপযুক্ত সম্মান জানাতে পারেনি সরকার। যদিও তাঁকে অনেক আগেই বঙ্গবিভূষণে সম্মানিত করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অনেকবার দেখেছি, মুখ্যমন্ত্রী মমতার ডাকে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় সাড়া দিয়েছেন। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এসে গানও গেয়েছেন। সেটার সাক্ষী সুমনও। আমাদের ভিতরের দুঃখটা জানালেন সুমন।"
আবুল বাসারের মন্তব্য, "বাঙালির রোম্যান্সের সূত্রপাত বঙ্কিমচন্দ্রের হাত ধরে। আর রোম্যান্সের কাব্যগীতির সুন্দর শুরু সন্ধ্যাদির হাত ধরে। বাঙালির নরনারীকে রেনেসাঁর স্বাদ দিয়েছিলেন হেমন্ত-সন্ধ্যা, উত্তম-সুচিত্রা। প্রেমের যে মাধুর্য সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় তাঁরে গানের মাধ্যমে বুঝিয়েছেন। তাঁকে অতিক্রম করার মতো ভারতবর্ষে আর কোনও প্রতিভা জন্মায়নি এখনও। তবে ভারতে বাঙালিদের প্রতি একটা বিদ্বেষ রয়েছে। কিন্তু বাঙালিরা এরকমটা করে না। রাষ্ট্রীয় সরকার এমন প্রতিভাকে কীভাবে সম্মান করতে হয় সেটা জানে না। এঁদেরকে সম্মানিত করলে কেন্দ্রই সম্মানিত হত। দেশটা চালাচ্ছে যাঁরা, তাঁদের মুখোশ খুলে গেল এবার। এঁরা যে সংস্কৃতির কিছুই বোঝে না, তা আরও পরিস্কার হল।"
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন