বেশ কিছু বছর আগের কথা, কঙ্কাল আগলে নিয়ে একটি ঘরে আটকে ছিলেন পার্থ নামের একজন মানুষ। সেই বাড়িটির নাম হয়ে দাঁড়ায় কঙ্কালবাড়ি। দিদি এবং পোষ্যর মৃতদেহ পচে গলে কঙ্কাল হয়ে যাওয়ার পরেও সেটিকে আঁকড়ে ধরে বসেছিলেন তিনি। সেই নারকীয় এবং ভয়ঙ্কর ঘটনাই পর্দায় ফুটিয়ে তুলেছেন পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়।
রবিনসন স্ট্রিটের ওই বাড়িটি ভয়ের আখড়া হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু, হঠাৎ সেই ঘটনা নিয়ে এতবছর পর কেন পরিচালক তেড়েফুঁড়ে উঠলেন, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার কাছে সেকথাই জানালেন কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়।
কঙ্কালবাড়ির ঘটনাটা অনেকদিন আগের, সেটাকে ফের পর্দায় আনার কোনও বিশেষ কারণ?
ভাবনাটা আসলে লকডাউনের সময় থেকেই। এই ঘটনাটা আসলে খুব অন্যরকম। মানুষকে আমাদের অনেককিছু বলার ছিল, যেটা তিনি বলতে পারেননি। আমাদের যে দলটা যারা কাজ করেছে, মোটামুটি এটুকু বুঝতে পেরেছি যে এই ভৌতিক ঘটনাটার পেছনে একটা অন্য কারণ রয়েছে। সেটা আমাদের খুব আকর্ষণ করে। এটাই কারণ।
লোকনাথ দা, পার্থ বাবু হিসেবে তোমার এই অভিনেতাকে ঠিক কেন পছন্দ হল?
অভিনয় নিয়ে কথা বলার কোনও দৃষ্টতা আমার নেই। একটাই মনে হয়েছিল যে, এই মানুষটা পার্থর চরিত্রটা দারুণ ফিট করবে। এমনকি ওর তাকিয়ে থাকার ধরণ, ফেসিয়াল এক্সপ্রেশন সবটাই খুব সুন্দর ফুটে উঠছিল।
আপনি তো পেশায় একজন ডাক্তার, অনেক মন্তব্য এমন উঠে এসেছিল যে একজন মানুষ তিনি মানসিকভাবে সুস্থ না! আপনার কি একই ধারণা?
প্রথম কথা হচ্ছে, উনি একধরনের কথা বলেছেন। তাঁর সঙ্গে আসল ঘটনার অনেক সাযুজ্য নেই। আমি সেই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ নই। তবে, অনেকে ধারণা করেছিলেন যে এই ঘটনার পেছনে অনেক কারণ আছে। এই যেমন, এটা সত্যি ঘটনা নাকি একটা অবচেতন মনে নাড়া দেওয়া ঘটনা। আদৌ কি তিনি পুরো এই জিনিসটা দেখছেন? দেখা গেল, যে ট্রিটমেন্ট করার পরে যেটা আসল ঘটনা সেটা কিন্তু সত্যি নয়। কিন্তু, ততদিনে আমরা মানুষটাকে একটা জায়গায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছি। তাঁকে নিয়ে মতামত স্থাপন হয়ে গিয়েছে। ঐখানেই প্রশ্ন, আমাদের রেসপন্স কতটা। এইজন্যই সিরিজ টা করা। আমাদের বিভিন্ন পরিবারে, কেউ না কেউ আছেন যারা আমাদের ভাষায় Un - able... কিন্তু মুশকিল হচ্ছে, একটা সোসাইটি বিশ্বাস করে যে প্রতিযোগিতায় সফল, সেইই সফল। এটা তো নয়। অন্যরকম মানুষ হতে পারে। তাদেরকে সেইভাবে মেনে নিতে আমাদের এত অসুবিধা কোথায়? আড়ষ্ঠ কেন থাকব আমরা? এটার জন্যই এই সিরিজ।
এই কেসটা যখন কানে আসে, অনেকের মন্তব্য ছিল তাঁর দিদির সঙ্গে তাঁর নাকি একটা অবৈধ সম্পর্ক ছিল, গবেষণার সময় এমন কিছু বুঝতে পেরেছিলেন?
প্রথম কথা হচ্ছে, যেটা বুঝলাম সেটা আসলে সত্যি না। দিদি সেখানে একটা মায়ের ফিগার হয়ে গিয়েছে। হয় এরকম। মানুষ যখন একা বোধ করে তখন এসব হয়। কাউকে যখন পাচ্ছেন না, তখন একজন বন্ধু হিসেবে যাকে মানুষ পায় সেটা কিন্তু অন্য অর্থ দাড়াঁয়। উনার ক্ষেত্রে, উনার দিদি হয়েছিলেন মায়ের চরিত্র। সেটা হয়তো, অন্য কোনও মহিলা হলেও হত। কিন্তু, আমরা সবসময় একজন নারী এবং পুরুষের চরিত্রটা খুন ধোঁয়াশা করে ফেলি। আমরা একটা কেচ্ছা খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা করি। যখন আমার বয়স হচ্ছে, তখন আমি আমায় মেয়ে - তাঁকে অবলম্বন করেই বাঁচি। এটা তো খারাপ না। কিন্তু, লোকজন অনেককিছু ভাল চোখে দেখেন না।
একজন পরিচালক হিসেবে কি মনে হয় OTT তে ভায়োলেন্স - হরর স্টোরি এগুলো প্রেজেন্ট করা সহজ?
একটা কথা বলতে পারি, মেইনস্ট্রিম সিনেমায় এই ধরনের বিষয়ের গ্রহণযোগ্যতা অনেক কম। হলে গিয়ে ছবি দেখার প্রবণতা এখন আর মানুষের নেই। অনেক প্রথিতযশা পরিচালকরা ডকু সিরিজ বানিয়েছেন। সেই তালিকায় সত্যজিৎ রায় থেকে ঋত্বিক ঘটকের নাম আছে। কিন্তু, মানুষের কাছে ডকুমেন্টরির গ্রহণীয়তা একেবারেই নেই। Ott আসার ফলে একটা সুবিধা হয়েছে। রিলিজ করার একটা জায়গা পাওয়া গিয়েছে। মানুষ এখন দেখতে পারছেন এগুলো। এটা একটা বড় বিষয়।
গ্রহণযোগ্যতা বিষয়টা যখন উঠলই, এসব ঘটনা মানুষ কি দেখতে ভালবাসেন? কেউ কেউ তো বলছেন, কী দরকার ছিল?
স্রষ্ঠার কিন্তু কাজ মাটির নীচ থেকে জিনিস খুঁজে বের করা। শিল্পী যদি এসব না করেন, তাহলে কিন্তু খুব বিপদ। যদি, নতুন কিছু না দেখাতে পারেন তবে, সে দেখবে কেন? একজন শিল্পী কী তৈরি করবেন, সেটার আলোচনা কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় হতে পারে না। তারা কিন্তু এটা বলতে পারে না। কারণ, আমাদের কাজই সেটা।