একুশের বিধানসভা ভোটের মুখে রাজীব-শুভেন্দুদের সঙ্গে দিল্লিতে উড়ে গিয়ে গেরুয়া মন্ত্রে দীক্ষিত হয়েছিলেন উত্তরপাড়ার বিদায়ী বিধায়ক প্রবীর ঘোষাল (Prabir Ghoshal)। সেই প্রেক্ষিতেই এবার নাম না করে পদ্ম শিবিরে যাওয়া নেতাকে বিঁধলেন তৃণমূলের (TMC) তারকা প্রার্থী কাঞ্চন মল্লিক (Kanchan Mullick)। শুধু প্রবীর ঘোষালকেই নয়, ভোটের (West Bengal Assembly Election 2021) মুখে যাঁরা দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশ থেকে 'স্বার্থচরিতার্থ' করার জন্য সরে গিয়েছেন, তোপ দাগলেন তাঁদের উদ্দেশেও। স্পষ্ট বললেন, "২মের পর তৃণমূল ভবনের সামনে কান ধরে লাইন দেবেন তাঁরাই, যাঁরা বিপদের দিনে দিদির হাত ছেড়ে চলে গিয়েছেন।"
কাঞ্চনের মন্তব্য, "আমি সুখের সময়ে এসে দাঁড়াইনি, আমি লড়াইয়ের সময়ে এসে দাঁড়িয়েছি। কাজেই আমাকে বহিরাগত বলে যাঁরা সন্দেহ প্রকাশ করছেন যে, আমি এলাকার জন্য কী কাজ করতে পারব, তাঁদের উদ্দেশে একটাই কথা বলব, আমি বাইরে রোগা, ভিতরে দারোগা।"
প্রসঙ্গত, স্থানীয়দের মধ্য়ে অনেকেরই কাঞ্চন মল্লিকের প্রার্থী হওয়া নিয়ে মনোক্ষুণ্ণ হয়েছিল। শনিবার উত্তরপাড়ায় (Uttar Para) গিয়ে ভোট প্রচারের মঞ্চ থেকেই তাঁদের উদ্দেশে কাঞ্চনের মন্তব্য, "যেদিন থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) উত্তরপাড়া বিধানসভা কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হিসেবে আমার নাম ঘোষণা করেছেন, সেদিন থেকেই প্রকাশ্যে হোক কিংবা কানাঘুষো, আমার নামের পাশে 'বহিরাগত' শব্দটা খুব বেশি করে শুনতে পাচ্ছি। বলার আগে একটু ভাল করে ভেবে দেখুন, এই এলাকার সাংসদ শ্রী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় রয়েছেন, তাঁর আদিবাস বাঁকুড়ায়। তাঁর নেতৃত্বে আজ হুগলি জেলা শান্তিতে ঘুমোয়। উনি কি বহিরাগত? যাঁরা এখানকার স্থানীয় হয়েও রাজনৈতিক দল-বদলেছেন, সেসব সুখের পাখিরা উড়ে গিয়েছে।"
নাম না করেই এরপর বিজেপিতে (BJP) যাওয়া প্রবীর ঘোষালকে বিঁধে বললেন, "এটা আসলে এখানকার বাসিন্দাদের পূববর্তী অভিজ্ঞতা, আমার আগে যাঁরা এখানে বিধায়ক হিসেবে ছিলেন, তাঁরা এখানে থাকেননি। যখন আমি তৃণমূলে যোগ দিইনি, সেই সময় থেকে দেখেছি, কেউ হাউহাউ করে কেঁদে, কেউ বা আবার দমবন্ধ হয়ে চলে গিয়ে পরের দিনই উনার নামে গালাগালি করেছে। মুখ্যমন্ত্রীর পাশ থেকে এক এক করে সৈনিকরা সরে গিয়েছে। আমি আদি কালীঘাট নিবাসী হয়ে তাঁর পাশে এসে দাঁড়িয়েছি।"
তৃণমূলের তারকা প্রার্থী এও বলেন যে, "আমি নিজেকে কী করে বহিরাগত বলি, যেখানে উত্তরপাড়ার মাননীয় সাংসদ কল্যাণবাবু নিজের বাড়ির দরজা খুলে আমাকে এখানে থাকার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। এটাকেই আত্মীকতা বলে। আর সেটাই আমি উত্তরপাড়ার মানুষদের থেকে পেতে চাই।"
বিজেপিকে বিঁধতেও ছাড়েননি কাঞ্চন। বললেন, "যাঁরা বাংলাকে সাড়াশি আক্রমণ করে জিততে চাইছে, তাঁদের বলি, আমাদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেমন মাথা উঁচু করে বাঁচতে জানেন, আবার মাথা নিচু করে শিখতেও জানেন। কাজেই বিপদটা তাঁদেরই যাঁরা শুধু মাথা উঁচু করে বাঁচতে জানেন! মে মাসের ২ তারিখের পর মিলিয়ে নেবেন, তৃণমূল ভবনে আবারও ভিড় হবে। আবারও যাঁরা চলে গিয়েছেন, তাঁরা কান ধরে ফিরে আসতে চাইবেন দলে। সেইদিন আমরা প্রতিবাদ জানাব, যাঁরা তৃণমূল ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছেন, তাঁরা আর নয়!"