অমিতাভ বচ্চন অভিনীত ডন (১৯৭৮) হিন্দি সিনেমার ইতিহাসে একটি এমন সিনেমা, যা শুধু তার গল্প, সংলাপ এবং গান দিয়েই নয়, বরং পপ সংস্কৃতিতে স্থায়ী ছাপ রেখে গেছে। পরবর্তী সময়ে শাহরুখ খানকে নিয়ে তৈরি রিমেক তার জনপ্রিয়তার নিদর্শন। কিন্তু এই ছবির কিছু গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল পরিকল্পনার বাইরেও, যা সিনেমার ইতিহাসে আজও চর্চিত। এমনই একটি গল্প, সম্প্রতি সামনে এনেছেন গীতিকার সমীর। ‘খাইকে পান বানারাসওয়ালা’ গানটির নেপথ্য গল্প শুনলে চমকে যেতে হবে।
বিবিসি হিন্দিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সমীর তার গীতিকার হিসেবে যাত্রা এবং তার বাবা, কিংবদন্তি গীতিকার অঞ্জন সম্পর্কে নানা কথা বলেন। তিনি জানান, এই গানটি আদতে ছবির অংশ ছিল না। সমীর বলেন, "যখন মনোজ কুমার ও জাভেদ আখতার প্রথম ডন দেখেন, তারা মনে করেছিলেন ছবির দ্বিতীয়ার্ধ অত্যধিক অ্যাকশনপ্রধান। এবং ছবিতে একটু শান্তি এবং স্বস্তির প্রয়োজন। তখন তারা পরামর্শ দেন, একটি হালকা মেজাজের গান রাখা উচিত। এরপর তারা আমার বাবাকে ফোন করেন।"
গানের প্রস্তুতি ও চিন্তাভাবনার প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সমীর বলেন, "ছবিতে তখন 'ইয়ে হ্যায় বম্বাই নাগারিয়া' নামের একটি গান ছিল, যেটা আগে থেকেই হিট। আমার বাবা বুঝতে পারেন যে এই ধাঁচে আরেকটি গান দরকার। তখন তিনি লেখেন ‘খাইকে পান’। যদিও কল্যাণজি-আনন্দজি প্রথমে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন, যে পান নিয়ে গান সফল হবে কি না। জাভেদ আখতার জোর দিয়ে বলেন- এই গান রাখতেই হবে।"
তবে গানের রেকর্ডিং ছিল আরেক চ্যালেঞ্জ। সমীর বলেন, “কিশোর কুমার যখন গান রেকর্ড করতে আসেন, তখন তিনি কিছু শব্দ নিয়ে আপত্তি তোলেন-‘চাকা চক’, ‘খাইকে’-এর মতো শব্দগুলি নিয়ে তিনি বলেছিলেন যে তিনি এগুলোর উচ্চারণ ঠিকভাবে করতে পারবেন না। তখন আমার বাবা তাকে বোঝান, এই শব্দগুলো সংস্কৃতি এবং আঞ্চলিক ভাষার অংশ, এগুলো ছাড়া গানটি প্রাণহীন হবে। শেষ পর্যন্ত কিশোরদা রাজি হন। তিনি পান খান, পিকদান আনান এবং বলেন, "তিনি শুধু একটা সুর দেবেন। কিন্তু তিনি যখন গাইলেন, তখন মনে হল যেন বেনারসের গলিতে জন্ম নেওয়া কেউ গাইছে।"
সব বাধা অতিক্রম করে ডন ছবিটি মুক্তি পায় এবং অমিতাভ বচ্চনের ক্যারিয়ারের অন্যতম আইকনিক চরিত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। পরিচালক চন্দ্র বারোটের এই ছবিতে বচ্চনের পাশাপাশি জিনাত আমান, প্রাণ, ইফতেখার এবং সত্যেন কাপ্পুর মতো তারকারা অভিনয় করেন। ‘খাইকে পান’ গানটি শুধুই একটি গানের দৃশ্য নয়, বরং একসময়ের চলচ্চিত্র নির্মাণের অন্তর্জগৎ এবং সৃষ্টিশীল নেপথ্যের এক দুর্লভ দলিল, যা আজও দর্শকদের মনে রয়ে গেছে চিরকাল।