ভারতের কিংবদন্তি গায়ক কিশোর কুমার, যিনি ১৯৭০ ও ৮০-এর দশকে হিন্দি এবং বাংলা সঙ্গীতে নিজের একচ্ছত্র আধিপত্য কায়েম করেছিলেন। পঞ্চাশের দশকে পা রাখার পর ধীরে ধীরে নানা স্বাস্থ্য সমস্যার মোকাবিলা করছিলেন। তার জীবনের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল ঘটনা ছিল ১৯৮১ সালের হার্ট অ্যাটাক, যা তার মানসিক আঘাতেরই এক প্রতিচ্ছবি ছিল।
সম্প্রতি রেডিও নাশা অফিসিয়ালের এক সাক্ষাৎকারে, কিশোর কুমারের পুত্র অমিত কুমার সেই সময়কার কিছু ব্যক্তিগত স্মৃতি ভাগ করে নেন এবং বাবার অসুস্থতার পেছনের মানসিক প্রেক্ষাপটটি তুলে ধরেন।
ছেলের বিয়ের উচ্ছ্বাস থেকে ভাঙনের ধাক্কা
অমিত জানান, ১৯৮১ সালে তার অ্যরেঞ্জড ম্যারেজ ঠিক হয়েছিল কলকাতার এক তরুণীর সঙ্গে। কিশোর কুমার এই বিয়ের খবরে ভীষণ খুশি ছিলেন। অমিতের কথায়, “বাবা অত্যন্ত উত্তেজিত ছিলেন। তিনি পরিকল্পনা করেছিলেন যে মুম্বাই থেকে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সকলকে নিয়ে কলকাতায় যাবেন বিয়েতে অংশ নিতে। তিনি মনে করতেন, আমি বিয়ে করব, থিতু হব, আর তারপর তিনি নিজে খান্ডোয়া ফিরে যাবেন।” তবে সেই আনন্দ বেশিদিন টিকল না। বিয়ের মাত্র দশ দিন আগে, অমিত ও তার পরিবার জানতে পারেন যে পাত্রীর পূর্বে একটি বিয়ে হয়েছিল। সেটি গোপন রাখা হয়েছিল। তখন বিয়ের কার্ড ছাপানো হয়ে গিয়েছিল, সবকিছু প্রস্তুত ছিল। এই খবরে পরিবারে নেমে আসে চরম হতাশা।
শরীর ভেঙে পড়ে কিশোর কুমারের...
ঘটনার প্রেক্ষিতে কিশোর কুমার প্রবলভাবে আঘাত পান। “তিনি এই বিশ্বাসঘাতকতা কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না। খুব আবেগপ্রবণ মানুষ ছিলেন তিনি। এতটাই প্রভাবিত হয়েছিলেন, যে ঠিক যেদিন আমার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল, সেই ২৪শে জানুয়ারি, ১৯৮১ তারিখেই তিনি কলকাতা রওনা দেন,” এমনটাই বলেন অমিত।
কিশোর নাকি ছেলের জন্য নতুন মেয়ে খুঁজতেও তৈরি ছিলেন। তিনি এও বলেছিলেন, 'আমি কলকাতায় যাচ্ছি, তোমার জন্য নতুন মেয়ে খুঁজে বের করব।' আমি তাকে থামাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তিনি নিজের সিদ্ধান্তে অনড় ছিলেন। তিনি প্লেনে সোজা কলকাতায় পৌঁছান, কিছুক্ষণের মধ্যেই তার হার্ট অ্যাটাক হয়। সঙ্গে সঙ্গে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।" এই ঘটনাটি শুধু একজন পিতার আবেগপূর্ণ মানসিক অবস্থার প্রতিচ্ছবি নয়, বরং কিশোর কুমারের জীবনের এক গভীর দুঃখজনক অধ্যায়। দেশের লক্ষ লক্ষ শ্রোতার প্রিয় এই শিল্পী যখন নিজের ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী ছিলেন, ঠিক তখনই এমন এক আঘাত তাকে ভেতর থেকে ভেঙে দেয়।