শিল্পী হতে গেলে কী কী প্রয়োজন, সেটা এতদিনে বুঝিয়ে দিয়েছেন বাংলার 'ইন্ডাস্ট্রি'। স্টেজ থেকে রুপোলি পর্দা, যাঁর গ্রহণযোগ্যতার কথা বলে। যিনি বলে থাকেন, কিশোর কুমারের প্লেব্যাকের কল্যাণেই তিনি আজ প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় হয়েছেন। ঠিকই ধরেছেন, আজকের আড্ডা 'কিশোর কুমার জুনিয়র' নিয়ে।
কিশোর কুমার জুনিয়র...
কারণ প্রত্যেকটা ছবি আলাদা হওয়াটা দরকার। বিগত আট-নয় বছর যদি দেখ তাহলে বুঝবে, চরিত্রগুলো প্রত্যেকটা একে অপরের থেকে আলাদা। গতানুগতিকের বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করছি। আর কিশোর কুমার জুনিয়রের ভূমিকায় অভিনয় করাটা একজন অভিনেতার কাছে তো আর্শীবাদের মতো। লালন (মনের মানুষ), অ্যান্টনি ফিরিঙ্গির (জাতিস্মর) পর এটা তিন নম্বর মিউজিকাল ছবি আমার।
আর পরিচালক...
এটা তো কৌশিকের (গাঙ্গুলি) একটা ধরন, লাইমলাইটের আড়ালে চলে যাওয়া বিষয়গুলো বের করে আনে। কিশোর কুমার তো আইকনিক। আর এই চরিত্রের যা শেডস আছে, কোনও নায়কের তো গল্প নয় এটা, কিন্তু এঁরা কি নায়ক নন? যে নায়কদের কথা বলা হয় না, কৌশিকের কাজ তাঁদের সামনে আনা। মধ্যবিত্তের বাঁচার লড়াইটা দেখাবে কৌশিক।
কিন্তু আপনি তো মধ্যবিত্তের জীবনধারণ থেকে অনেক দূরে, যোগসূত্র তৈরি করলেন কী করে?
সেটা বুঝতে ছবিটা দেখতে হবে (হাসি)। কৌশিক এই ছবিটার জন্য আমায় ভাবল কী করে জানি না। যে কোনও অভিনেতার জন্য এটা লোভনীয় চরিত্র, যে কারণে আমার ছবিটা করা। কিশোর কুমার জুনিয়রের স্টেজে ওঠার অংশটা আমি দেখেছি, সেই পার্টটায় আমি নিজে রয়েছি (স্টেজ শো)। ইউটিউবে এমন কোনও ভিডিও নেই যেটা আমি দেখিনি।
তবে হ্যাঁ, মধ্যবিত্ত বাঙালির অংশটা, যে সকালে পাড়ার চায়ের দোকানে আড্ডা দেয়, সেটা ফুটিয়ে তুলতে প্রস্তুতি নিতে হয়েছে। সাইকলজি বুঝতে হয়েছে, আর কৌশিক এই জায়গাটায় অনেক সাহায্য করেছে।
ঋতব্রতর সঙ্গে আপনার ছবিতে বন্ডিং?
কৌশিকের ম্যাজিক এটাই, আমার সঙ্গে ঋতর এমন এমন জায়গা রেখেছে যে সব বাবারা কানেক্ট করতে পারবেন। হলে বসে কোন দর্শক বলতে পারবেন না, আমি আমার বাবার কাছ থেকে এটা শুনিনি। আমিও শুনেছি। আর একটা সময় ছেলেমেয়েরা মনে করে বাবা মায়ের যেটা পছন্দ সেটা আমাদের পছন্দ হতে পারে না। এই জার্নিটাতেই তো কিশোর কুমারের বাস, এঁর তো কোনও জেনারেশন নেই। বাবা-ছেলের গল্পও কিশোর কুমার জুনিয়র। শেষমেশ বাঙালির কথাই বলা আছে।
অপরাজিতা আঢ্য?
প্রাক্তনের পরে এটাই বর্তমান (হাসি)। ছবিটা দেখলে বুঝতে পারবেন দর্শক, চরিত্রটা অপা ছাড়া হয় না। ও যা হাততালি পাবে না! আর ঋতদের জেনারেশনটার আমি ফ্যান। ওদের সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব আছে। ওরা ক্রিজ থেকে বেরিয়ে মারবে, আউট হলে আউট, ছক্কা হলে তো ব্যস। ওদের সঙ্গে বন্ডিংটা পর্দায় ফুটবে। আসলে, ক্যামেরার লেন্সকে ফাঁকি দেওয়া যায় না।
কৌশিক গাঙ্গুলি আপনাকেই কেন ভাবলেন চরিত্রটার জন্য?
মনে হয় অভিজ্ঞতা, ও তো বারবার মনে করে আমি ছাড়া এটা কেউ করতে পারত না। আর একটা মানুষকে এখানে আনতে হবে যার স্টেজে কন্ট্রোলটা আছে। স্টেজে সবাই গ্রহনযোগ্য নয়। ওখানে ভুল-ঠিক সবটা চোখের সামনে - ইউ কান্ট গো রং।
জয়সলমীরে শুটিংটা?
ভীষণ টাফ ছিল। প্রায় দেড় ঘন্টা জার্নি করে শুটিং লোকেশনে পৌঁছতে হত। একদিন তো বন্ধুক টন্দুক নিয়ে আটকে দিয়েছিল। তবে মিউজিক থেরাপি বাঁচিয়ে দিয়েছে। কোনও কষ্টই গায়ে লাগেনি। মেকিং বেরোলে দেখো, আমি শট দিচ্ছি, পেছনে পুরো ইউনিট নাচছে। বোলপুরের শুটিংয়ে তো কৌশিক বলল, "আমি আর শট নেব না"। প্রত্যেকটা ইউনিট মেম্বার ফ্রেমে ঢুকে যাচ্ছিল।
সিনেমা হলে দর্শক নাচবেন বলছেন?
এটাই হবে। এটাই স্বাভাবিক। মিউজিকাল ছবি এমনিতেই হয় না। এখানে তো প্রত্যেকটা মানুষের কিশোর কুমারের গান নিয়ে আলাদা আলাদা স্মৃতি রয়েছে। সিনেমা হলে একজনও চুপ করে বসে থাকবেন না। আগেকার মানুষগুলো না, এই ম্যাজিকটা করে যেতে পেরেছেন।